সেদিন মা কে ডে কেয়ার থেকে বলেছে আমি নাকি সবাইকে ঠেলে দিই। আর আমার সিংহী মা কোথায় হালুম করে ঝাঁপিয়ে পরে ওই মিস টার ঘাড় কামড়ে ছিঁড়ে নেবে , তা না, মিন মিন করে , হ্যাঁ মানে ইয়ে মানে এই মানে ওই এইসব বলে চলে এলো।
সারা রাস্তা কানের কাছে ঘ্যান-ঘ্যান ঘ্যান-ঘ্যান করে গেলো । যেন সত্যি সত্যি আমি সবাইকে ঠেলে ফেলে দিয়েছি।
আমি একবারের জন্যও ভাবতে পারিনি মা আমার এই অপমান হজম করে আমার ঘাড়েই দোষ চাপাবে।
আমি মনে করি, কোনো সময় সত্যের যাচাই না করে, কোনো কিছু ডিসিশান নিয়ে, অ্যাকশন নেওয়া উচিত নয়। আমি মানছি ল্যাংগুয়েজ ডিফারেন্স আছে । আমি যা বলছি মা বোঝে না। মা যা বলছে, তার বেশির ভাগটাই আমি ধরতে পারি না । কিন্তু ইফ দেয়ার ইস উইল, ডেফিনিটলি দেয়ার ইস ওয়ে। মায়ের উচিত ছিল মিস টার কলার ধরে চোখ পাকিয়ে বলার , “প্রমাণ দে “ সেটা না করে আমার পেছনে পড়েছে। নিজেও তো প্রমান সংগ্রহ করতে পারতো। আমাকে তুলতে আসার সময়ের বেশ কিছুটা আগে এসে ঘাপটি মেরে আমার ক্লাসের সামনে বসে উঁকি মেরে দেখতে পারতো আমি কি করছি। না , তা করবে কেন ? সেটাতে তো কষ্ট আছে। মায়ের আবার কোমরে ব্যাথা। আমার সাথে টুকি টুকিও বাবার মতো প্রফিসিয়েন্সি নিয়ে খেলতে পারে না। উঁকি ঝুঁকি মারা তো অনেক দূরের ব্যাপার।
তাই সহজ পন্থা , সব ব্যাটাকে ছেড়ে আধ্যান ব্যাটাকে ধর। লোকে যেমন বলে, যে যা রটে তার কিছুটা বটে। হ্যাঁ কিছুটা সত্যি বটে , যদি মন পরিষ্কার না থাকে । আমি কিন্তু ঠেলে কখনো দিই না। আমি তাদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য আহ্বান জানাই। অনেকেই বলবেন শক্তি প্রদর্শনের কি প্রয়োজন আছে। আমি বলবো প্রদর্শন আর প্রয়োগের মধ্যে যথেষ্ট ডিফারেন্স আছে। আমি কখনও কারো নাকে ঘুঁষি মেরে ফেলে দিই না। রেগে গিয়ে চিৎকার করি বটে কিন্তু হাত তুলিনা। বাবা বলে যে মারবো-মারবো করবো, কিন্তু মারবো না। কিন্তু ফালতু আমি এসব কথা বলছি কেন। রেগে গিয়ে হাত তোলা এক জিনিস আর খেলতে গিয়ে ধাক্কা দেওয়া আরেক জিনিস। আমি সেটাই করি।
আমি অনেক কিছু চেষ্টা করে দেখে নিয়েছি। সবাই আমার কথা বোঝে না। এমনকি আমার মতো যারা আছে তারাও নয়। আমি তাদের সামনে গিয়ে দুই হাত তুলে নানা রকমের আওয়াজ বার করেছি। তাদের সামনে গিয়ে নানা রকম অঙ্গভঙ্গি করেছি , যাতে তারা বুঝতে পারে যে আমি তাদের সাথে খেলতে চাই। বদলে আমি কি পেয়েছি। কেউ আমার হাত ধরে সরিয়ে দিয়েছে । কেউ নো নো বলে আমার থেকে দৌড়ে পালায়। আমাদের মধ্যেও ল্যাঙ্গুয়েজে গ্যাপ আছে। আমি তো আর দেখে বলতে পারিনা কার বয়স কত। কার লার্নিং ক্যাপাবিলিটি কত।
এই লার্নিং ক্যাপাবিলিটি আমার সাথে পৃথিবীর একটা বড় ব্যবধান সৃষ্টি করেছে। লোকে যাকে বলে মোটর স্কিল , তাতে আমি এক নম্বর। আর বেশির ভাগ ম্যাদামারা। তার ওপর সবাই টেকনিক্যালি কুঁড়ে। সবাই মনে করে পৃথিবীতে এসে হাঁ করে বসে থাকলে জীবনটা এমনি ভাবে কেটে যাবে। ওরে, হাঁ করে বসে থাকলে শুধু মুখে মাছি ঢুকে যাবে। একটু খেলতে দুলতে তো হবে। আমি যখন দৌড়োই তখন আমায় দেখে যে কেউ বলবে আমার মধ্যে স্পোর্টসম্যান স্পিরিট দারুন। কিন্তু বাকিদের দেখো। চুপচাপ ভালো ছেলে মেয়ে হয়ে নাম কুড়িয়েছে।
আমি বাজে , মানছি আমি বাজে। আমি নিজে নিজে খেতে পারিনা। সবাই পারে। কিন্তু আমি প্রচুর খেলতে পারি। যাকে লোকে “তোলপাড়” বলে নেগেটিভিটির নাম দিয়েছে। কিন্তু আমি সবাই কে ভালোবাসি। সব্বাইকে। যারা এখনো প্র্যাম থেকে নামেনি তাদের থেকে শুরু করে যারা বাবা মার ভাষা শিখে গেছে তাদের পর্যন্ত। সবার জন্য আমার আবার ট্রিটমেন্ট আলাদা।
এই তো সেদিন ডেকেয়ার থেকে ফিরেছি। দেখি একটা মেয়ে পার্কিং লটে বসে হাপুস নয়নে কাঁদছে। বাবাটা পাশে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। আমি জানি , যখন দুঃখ হয় তখন তাকে বেশি নাড়াঘাঁটা করা উচিত নয়। তাই আমি গিয়ে পাশে টুক করে বসে পড়লাম। দু তিনবার জিজ্ঞেসও করলাম , ‘কি হয়েছে ?’ উত্তর যখন পেলাম না, তখন চুপ করে বসে থাকলাম তার সামনে। মেয়েদের তো বোঝা যায় না। কিছুক্ষন পর যখন মা এসে আমাকে টেনে নিয়ে গেলো তখন দেখি ওর কান্না থেমে গেছে। আমি মনে করলাম যে সে এবার আমার সাথে খেলতে চাইছে। কারণ আমি খেলার জিনিস পেলে সব কান্না থামিয়ে দি। আমি ভাবলাম ধরাধরি খেলি। যেই গিয়ে ধরেছি , পুতুলের মতো উল্টে পরে গেলো। আবার কান্না। এবার মা এসে ওর বাবার কাছে আবার মিন মিন চালু করে দিলো। অথচ আমি কিন্তু কিছু করিনি।
এরপর ধরো সেই দুর্গাপূজার দিন। মা বাবার সাথে আমি গিয়ে হাজির হলাম ওই স্কুলটাতে যেখানে দুর্গাপূজা হচ্ছ। ওখানে তো আমার স্বর্গ। আমার মতো সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছে। কি মজা। আমি অনেকের সাথে চেষ্টা করলাম মেশার। আবার সেই গ্রুপিসম। যারা আগে থেকে দল পাকিয়ে বসে আছে, তাদের মধ্যে আমাকে কিছুতেই নেবে না। আমিও ছাড়বো না। আমি তো নিজের ইগো ডাউন করে সবার সামনে গিয়ে হাত পেতেছি। নাক উঁচু করে তো বসে থাকিনি যে কেউ এসে আমার সাথে খেলুক। আমিই এগিয়েছি। বদলে আমি কি পেয়েছি। আমি নাকি ধাক্কা মারি। ওরে সবাই তো ওখানে হয় টুকি টুকি নয় ধরাধরি খেলছিল। ‘ধপ্পা’ কাকে বলে , কারো বাবা মা কি শেখায়নি। তার ওপর ম্যালনিউট্রিশন। আমি গিয়ে ধপ্পা করলেই ধপাস করে পরে যাচ্ছে। যেখানে পুজো হচ্ছিলো সেটা আবার সিঁড়ি সিঁড়ি করা। যতবার কেউ পড়েছে, সবাই গড়িয়ে গেছে কিছুটা নিচে। যখন নিজেদের মধ্যে খেলতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছে তখন কোনো বিকার নেই। যেই আমার টাচ পর্যন্ত লাগছে, নাটক স্টার্ট।
আমি শেষমেশ বিরক্ত হয়ে গেলাম। যদি খেলতেই না পারি, তাহলে এতো লোক থেকে হবেটা কি ? আমার হালুম আপ্পু , প্যাকপ্যাক কি দোষ করেছে। তারা তো কখনো এরকম এসে কমপ্লেন করে না। আগেও বলেছি আমায় সবাই টেরোরিস্ট নাম দিয়েছে। কিন্তু মায়ের দিব্যি খেয়ে বলছি আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু হার্ট এনিওয়ান।
মা বাবা আবার এই বিষয়ে বিশেষ ভাবে চিন্তাভাবনা করে বার করেছে যে আমি নাকি আমার থেকে বয়সে যারা বড় তাদের এটাক করি। প্রথমেই বলছি , এটাক ওয়ার্ডটা ঠিক নয়। তার ওপর আমি বুঝতে পারিনা কে আমার থেকে বড়। আমি নাকি সমবয়সীদের থেকে লম্বা বেশি। এই ফ্যাক্টরটা কি তোমাদের জন্য এনাফ নয়। হাইট আর ওজন দিয়েই তো প্লেয়ার নির্বাচন হয়। আমি কি কখনো কোনো বেবি কে পুশ করি। আমি জানি তারা পড়ে যাবে। তারা আমার সাথে আমার স্পিডে দৌড়াতে পারবে না। আমি তো সেইজন্যই তাদের সাথে খেলতে যাই যারা আমার মতো ম্যাচিওর। যারা খেলাটাকে খেলার মতো নেয়, শাস্তির মতো নয়। আর আমি যদি বড়দের সাথে খেলতে পছন্দ করি তাহলে বড়দের আপত্তি কোথায়। আমি তো জানি বড় হলে সহনশীলতা বাড়তে থাকে। এখন আমি বড় হয়েছি , এখন তো কৈ পড়ে গেলে কাঁদিনা। ওরা কাঁদে কেন। আমি বুঝিনা বাপু।
আমি আরো একটা কারণে বড়দের সাথে খেলতে পছন্দ করি। তুমি তো তাদের সাথেই মিশবে যাদের মতো হতে চাও। বড়রা কত ধরণের খেলা জানে। আমি সেই সব খেলা শিখতে চাই। এমনকি আমার জানা খেলাগুলোর মধ্যেও ওদের স্কিল অনেক বেশি। কিরকম ডানদিকে তাক করে বাঁদিকে পালিয়ে যায়। আমি তো এখনো যেদিকে ভাবি সেদিকেই যেতে পারি। তারওপর নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে ওদের জুড়ি মেলা ভার। আমি তো খুঁজেই পাইনা। সবথেকে বড় সমস্যা , এখনো আমি বুঝতে পারিনা ‘টুকি’ টা কোন দিন থেকে আসছে। ওটাকে আমি একটা বড় হবার সোপান হিসেবে সেট করেছি।
--- আপাতত এখানেই থাক লোকেদের নিন্দা অনেক করেছি , পরের পর্বে তাদের সাথে খেলা নিয়ে লিখবো যারা সত্যি সত্যি খেলার মানে বোঝে।
No comments:
Post a Comment