Wednesday, June 23, 2021

বইপড়া - " মানিকের পাঁচালী "

বইপড়া - " মানিকের পাঁচালী " 
লেখক - অরিজিৎ গাঙ্গুলি 

প্রকাশক - অরণ্যমন 

-------------------------------------------------



সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবার্ষিকী।  হয় কিছু একটা করো,  নাহয় আকাশের দিকে তাকিয়ে থুতু ছোঁড়ো।  অনেক কিছুই পরিকল্পনা করলাম।  সমস্ত বইগুলো আরেকবার পড়েই ফেলি ।  সমস্ত সিনেমা গুলো আরেকবার দেখেই ফেলি।  কড়ে  আঙ্গুল  বা পায়ের নখ টখ নিয়ে কিছু একটা লিখেই ফেলি।  কিন্তু সবকিছুতেই যেন একটা বিশাল কর্মকান্ড। চাকরি বাঁচিয়ে কিছুটা পড়া আর সিনেমা দেখার সময় বার করে হাতে ফুল বেলপাতা নিয়ে দোসরা মে তে দাঁড়িয়ে দেখলাম বছরের শুরু থেকে শুরু করেও মিও আমরের একটা ক্যালেন্ডার ঝোলানো ছাড়া কিছুই করে উঠতে পারিনি ।  

খুব দুঃখের মাঝে খবর এলো " মানিকের পাঁচালী " পাবলিশ করেছে অরিজিৎ গাঙ্গুলি ।  অনেকদিন ধরেই হবে হবে ভাব নিয়ে শেষে বিরক্ত হয়ে গেছিলাম অপেক্ষায়।  তার ওপর আমি আবার ওই সিনেমার এনালাইসিস টাইপ জিনিস ঠিক বুঝতে পারিনা আর টেকনিক্যালিটি থেকে তো অনেক দূরে।  সমালোচনা তো দূরের কথা, অতো কচকচানি , কোন এঙ্গেলে কি হয় ওসব ভাবিই না সিনেমা নিয়ে।  সিনেমা নিয়ে বই পড়ে দেখেছি বেশ কিছু কাল আগে।  খুব বোরিং আর টেকনিক্যালিটি তে ভরা।  পড়ি আর ভুলে যাই কয়েকদিনের মধ্যে।   তাই স্রোতের মতো বেরোতে থাকা সত্যজিৎ সংখ্যা গুলো আর হাতে তুলে নিই নি।  


তা , নামটা যখন দেখলাম পাঁচালী , তাহলে সেই পথের পাঁচালী নিয়েই ভ্যানভ্যান থাকবে সেটাই ভেবেছিলাম। হ্যাঁ , আমার সিনেমাটা এক্কেবারে ভালো লাগেনি।  হয়েই যাচ্ছে , হয়েই যাচ্ছে - তার থেকে হীরক রাজার দেশেই ভালো।  আমি তো জানি আমার কি লেভেল।  তবু কি মনে হলো কিনে নিলাম বইটা। 


এক সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায় বইটা শুরু করলাম , কোনোরকম এক্সপেক্টেশান না রেখেই।  প্রথম পাতাতেই অগ্নিকান্ড।  মানিকবাবুর নাকি অনেক ছবির অরিজিনাল কপি পুড়ে গেছিলো। ব্যাশ .. আমি হুকড।  তারপর খেয়াল হলো রাত হয়েছে।  পাতা তখন একশো ছাড়িয়ে গেছে।  


মানুষের চোখ নাকি ক্যামেরা , যা দ্যাখে তাই রেকর্ড করে রাখে মাথায়।  স্মৃতি আর বিদ্যার কাজই হলো ভুলে যাওয়া ডট গুলো কানেক্ট করা।  একটা ভালো না লাগা ভুলে যাওয়া সিনেমাটা এক এক করে , সিন বাই সিন মনে করিয়ে দিতে লাগলো বইটা।  হ্যাঁ তাইতো , হ্যাঁ তাইতো বলে মাঝে মাঝেই উঠে বসে পড়ছিলাম পড়তে পড়তে।  অনেকগুলো স্মৃতির জন্য অপ্রয়োজনীয় সিন ভেসে ভেসে আসতে লাগলো বইটা পড়ে।  


বিদেশের মাটিতে প্রাইজটা পাওয়ার সাথে সাথে বইটা বন্ধ করে ইউটিউবে পথের পাঁচালী চালালাম।  আবার নতুন করে দেখলাম।  আর ছেষট্টি বছর পর অরিজিৎ পারলো একটা আকাট লোককে একটা সিনেমা ভালো লাগাতে।  সেই ব্যাসদেব আর বি আর চোপড়ার কেস আর কি।  


গল্পের গতি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেলো অপরাজিত শ্যুটিং কে কেন্দ্র করে প্রহসন আর মাঝখানে জলসাঘর আর পরশপাথরের আবির্ভাবে।  আর গোল্ডেন লায়ন পাওয়াতেই বইটি শেষ। 


তাহলে কথা হোলো গিয়া , কে কিনবে আর কে পড়বে।  আমার মতো আবোদা লোক , যারা সিনেমার পেছনের পরিশ্রম না ভেবে টিকিট কাটে এবং না ভালো লাগলে বলে "ফালতু" তারা তো অবশ্যি পড়বে।  যারা সত্যজিতের হাজার এঙ্গেল এবং চলচিত্র নির্মাণের খুঁটিনাটি জানতে চায় তারা পড়বে।  কারণ অস্বাভাবিক রিসার্চ আছে এর পেছনে।  বিশ্বাস না হয় ,  বিবলিওগ্রাফি খুলে দেখুন।  যারা মানুষটার পরিশ্রমকে সেলাম দিতে চান তারা পড়বে। 

আর যারা বিবলিওগ্রাফিতে থাকা একশো বই পড়ার মানসিকতা রাখেন না , মানে যাদের পরীক্ষায় এইসব প্রশ্ন আসবে না তারা পড়বে।
   


অরিজিতের লেখনীতে কিন্তু সাহিত্যিক কচকচানি নেই , তাই সর্বশেষে যারা ডকুড্রামা মেশানো নন-ফিকশন ভালোবাসেন তাদের জন্য অদ্ভুত সুন্দর এই বই।   


এবার বলি নেগেটিভ মানে নেতিবাচক মানে যার জন্য হেব্বি খচে আছি। হাজার হোক ভুল করে ফ্লিপকার্ট থেকে বেশি দাম দিয়ে কিনে ফেলেছিলাম।  আর শেষ পাতার পর সেই বিচ্ছিরি অনুভূতি।  অন্তরে অতৃপ্তি রবে , সাঙ্গ  করি মনে হবে ইটিসি ইটিসি  ... মুখ এক্কেবারে তেতো হয়ে গেলো শেষপাতে মানে পাতায়।  বাকিটা কৈ ????  অপেক্ষা। .. ঝুলিয়ে রাখা। .. সব ওয়েব সিরিজের ফল। .. সত্যজিৎ ক্ষমা করবেন না, এই বলে রাখলাম।