Tuesday, March 31, 2020

#গো_করোনা_গো ( ১৩ ) - ভয় শুধু ভয়



আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে বেজায় চাপ খেয়ে গেছিলাম।  ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছি , কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি লগইন করতে পারছি না।  বিন বিন করে ঘাম হতে লাগলো . এতো লোক মারা যাচ্ছে এতো পয়সার ক্ষতি , তার বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে চাকরি যাওয়া তো শুরু হয়ে গেছে . নিউ ইয়র্ক এ রেস্টুরেন্টের কর্মচারিরা চাকরি হারিয়ে কান্নাকাটি করছে . মালিককে গিয়ে ধরা হচ্ছে , “ ওদের বার করে দিলেন ? ওদের সংসার কে চালাবে ? “ উত্তরে আসছে , “ ওদের রাখলে আমাদের সংসার কে চালাবে আর দোকানটাও তো রাখতে হবে যাতে ওরা ফিরতে পারে. “ ঠিক এই কথাটাই শোনার অপেক্ষা করছি এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আর তার মধ্যে এই কেস .

ম্যানেজার , তার ম্যানেজার পাড়া প্রতিকলিগদের ফোন করে আসল ঘটনা বুঝতে পারলাম আমার বাৎসরিক আইডি রিনিউ এর দিনটি ছিল আজ. যেহেতু করোনার জন্য আমার ডকুমেন্ট সাবমিট করতে আমার ম্যানেজার ভুলে গেছে তাই ওটা ডিএক্টিভেটেড হয় যায় . আধ ঘন্টার জন্য আমার হৃৎপিণ্ডও ডিএক্টিভেটেড হয়ে গেছিলো. 

ভয় কিভাবে আসছে বুঝতে পারছেন তো . এখন যখন লিখছি তখন করোনা টাস্ক ফোর্স এর ডাক্তার ফাউচি হোয়াইট হাউসে  দেশবাসীকে এক লক্ষ মৃত্যুর জন্য তৈরি হতে বলছেন। ডাক্তার বার্কস বলছেন মৃত্যুহার দ্রুত বৃদ্ধি পাবে ও ধীরে ধীরে কমবে।  একমাত্র ওয়াইওমিং স্টেট্ বাদ দিয়ে সমস্ত স্টেট্ আজ মৃত্যুর দিক দিয়ে ইউনাইটেড।  চিরশত্রু রাশিয়া আজ এসে দাঁড়াচ্ছে সাহায্যের জন্য। সকলের কাছে হাতজোড় করা নিউ ইয়র্কের গভর্নরের ভাই আজ করোনার কবলে।  নিউজার্সি অতিরিক্ত রেফ্রিজারেটর ট্রেলার অর্ডার করেছে , অতিরিক্ত বডি রাখার জন্য।  ইন্ডিয়ানা , টেক্সাসে এবরশান কে নন এমার্জেন্সির মধ্যে ফেলে স্থগিত রাখার আদেশ এসেছে।  প্রতিটা স্টেট থেকে আসছে মেডিক্যাল কর্মচারী আর পুলিশের মৃত্যু ও অসুস্থতাটার খবর।  

আর আসছে কিছু ধর্মীয় বেয়াদপের গণহত্যার খবর।  লুইসিনিয়া প্যাস্টর মার্ক এন্থনি স্পেল যখন হাজার জনের গ্যাদারিং এ যীশু যীশু করছিলো , তখন আল্লাহ আল্লাহ করছিলো দিল্লীর নিজামুদ্দিনে। গোমুত্র পার্টি থেকে শুরু করে আমরা তো এই নোংরামিতে এগিয়েই আছি।  

একসাথে মৃত্যুভয় , বেকারত্বের ভয় , আত্মীয়বিয়োগের ভয়, গৃহযুদ্ধের ভয়  আর সাথে ভয় এই ধর্মীয় উন্মাদনার। আর ভয় এই অদ্ভুত বড়লোকদের রাজনীতির খেলায়।  সারা পৃথিবী থেকে যখন প্রাইম মিনিস্টার রিলিফ ফান্ডে টাকা যাচ্ছে , তখন পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি চুপ করে পয়সা গুনে চলেছে। যে দেশকে বেচে দেওয়া হলো এই লোকটার কাছে , সেই সরকারের আজ যখন দরকার তখন তিনি ঘন্টা বাজিয়ে শেষ।  না দিক কিছু , অন্তত নিজের দশ লক্ষ কর্মচারী কে যেন না ছাঁটে।  অনেক নোংরামোর শেষে যেন এই নোংরামো না করে।  

যাইহোক , দেশ কিন্তু আগে এগিয়ে হাজার পূর্ণ করেছে কালকে।  আমেরিকার কার্ভ  দেখে গতি মিলিয়ে নিন।  আমাদের কিচ্ছু হবে না বলে চা খেতে বেরিয়ে গিয়ে থু করে করোনা ছুঁড়ে পালিয়ে আসবেন না।  ঘরে থাকুন বেঁচে থাকুন।  

Monday, March 30, 2020

#গো_করোনা_গো ( ১২ ) - USA 150,000




আজকের দিনটা অনেক কিছু ঘটনার।  আড়াই দিনে ১ লক্ষ থেকে দেড় লক্ষ পৌঁছে গেলো আমেরিকা। প্রথমবার পাঁচশো লোকের মৃত্যু নথিবদ্ধ করলো আমেরিকা।  আমেরিকার প্রথম মেডিকেল স্টাফের মৃত্যু হলো।  নিউ ইয়র্কের ফুসফুস সেন্ট্রাল পার্কে তৈরী হলো টেম্পোরারি ৬৮ বেডের হাসপাতাল।  নিউজার্সির আড়াইশোর ওপর পুলিশের ধরা পড়লো করোনা। ভেন্টিলেটরের দাম কুড়ি হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার হয়েছে।  আর দেশ হাজার ছাড়িয়েছে।  

এখনো ফোনে লোককে বলতে শুনছি ইন্ডিয়ার কিচ্ছু হবে না। কোনো সমস্যাই হবে না।  মোদী বাঁচিয়ে নেবে।  পুলিশ বাঁচিয়ে নেবে।  কোনো না কোনো দেবতা তো আছেই বাঁচানোর জন্য।  সত্যি কি ইন্ডিয়া বাঁচবে।  সত্যি সত্যি কি ভিড়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে না এই রোগ।  না পড়ুক , মানুষগুলো বাঁচুক। যদি সত্যি সত্যি কোনো দেবতা থাকে বাঁচিয়ে নিলে বাঁচিয়ে নিক।  

তবে যদি না থাকে।  আর চায়নার মতো পলিটিকাল নোংরামিতে চাপা পরে যাক বয়স্কদের মৃত্যু , তবে ? আমার আপনার প্রিয়জন তখন মেঘের আড়ালে বা মাটির তলে। একটা কথা বলে রাখি, আমেরিকা ঠিক একই রকম ভুল করেছিল।  ল্যাজ আমাদের মতোই মোটা করে ঘুরে বেড়াতো। এবং টেস্ট এর ব্যবস্থা করেনি।  

দেশেও একই সমস্যা হতে পারে।  আমেরিকাতে দশ লক্ষ টেস্ট পরে , এক লক্ষ লোকের ধরা পড়েছে।  আর আমরা যখন খেলি তখন কোটিতে খেলি।  আমাদের টেস্টই তো করানো হয় না।  কোনদিন সাধারণ সর্দি কাশিতে ডাক্তারের কাছে গেছেন কখনো।  কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্টরাই তো দেশ চালায় , আর যদি কারো একটা মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্তিভ থাকে , তাহলে তো কোনো কথাই নেই। যে দেশে অসুখ সারাতে এখনো লোকে আগে মন্দির মসজিদে তারপর হাতুড়ে তারপর যায় হসপিটালে , সেই দেশে এই ভয়ঙ্কর অবস্থায় কি ভয়ঙ্কর অবস্থা হতে পারে , ভেবেই শিউরে উঠছি।  

সেই মানুষগুলো যারা বয়স্ক , যারা এক্ষুনি মারা গেলেন রাস্তায়।  কে বিচার করবে , তার মৃত্যু করোনা না কিসের থেকে হয়েছে।  বয়স্ক রা তো স্বাস কষ্টেই মারা যায়।  আর বয়স্ক মরে গেলে যৌবনের তো লাভই। অস্বাভাবিক মৃত্যুর পোস্টমর্টেম হয়।  কিন্তু করোনার মৃত্যু এখনও স্বাভাবিক।  দেশের কোটি কোটি মৃত্যুর কারণ চেপে যায় স্বাভাবিক মৃত্যু বলে , আর এই অবস্থায় তো স্বয়ং ক্যারিয়ার জানে না যে সে বইছে।  

সাথে আছে আমাদের অদ্ভুত গা ফিলতি।  আমরা চাই না লোককে কিছু বলতে। সব রোগই গুপ্ত রোগ।  ছোঁয়াচে রোগ হলেও ছুটি নিতে নারাজ।  এইডস কেউ ছোয়াঁচে বলে এপিডেমিক করে তুলেছে তো অনেক আগেই। এপিলেপ্সি বললে বিয়ে হবে না , সাইকিয়াট্রিস্ট দেখালে লোকে পাগল বলে ঢিল ছুঁড়বে , তিন মাসের আগে প্রেগন্যান্সির খবর ছড়ালে নজর লেগে গর্ভপাতের সম্ভবনা থাকবে , এই সবের দেশ আমার ভারতবর্ষ।  সেখানে দাঁড়িয়ে বড় বড় কথা আসে কি করে।  

সারা পৃথিবীতে যা মরেছে তা আমাদের কাছে নস্যি।  যে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আমাদের লোক মরে অনেক বেশি।  আর স্বাভাবিক ভাবেই বৃদ্ধ ওর শিশুরাই প্রথমে মরে।  এবার শিশুদের রেহাই দিয়েছে প্রকৃতি।  আর বুড়ো বুড়িদের কে দেখে।  

ছবিটা একটি আমেরিকার করোনা হাসপাতালের ওয়ার্ডের ছবি।  একবার ভাবুন , আপনার টেস্ট পসিটিভ হলো।  আর আপনার স্থান হলো ওই ওয়ার্ডের কোনো একটা বেডে।  ভাবুন তো , মৃত্যু আসে পাশে।  রোজ রোজ কোনো না কোনো বেড খালি হচ্ছে , ডেডবডি নিয়ে চলে যাওয়া হচ্ছে স্ট্রেচারে করে। একটু উঁকি মারলেই মৃত্যু টুকি করছে। এইটাই সত্য , বাকিটা নয়।  

যাইহোক , ভিড় সামলাতে আমাদের দেশ এক নম্বরে , তাই হয়তো সময় বলবে দেশের অবস্থা কিরকম হবে।  কিন্তু চেষ্টা করে যান এই সময়ে শিকল পড়ার।  হয়তো কিছু লোক বেঁচে যাবে। 

Sunday, March 29, 2020

#গো_করোনা_গো ( ১১ ) - চায়না চাইনা , কিন্তু !!!



“গত পঞ্চাশ বছরে চারটে এপিডেমিক এনেছে চায়না। “ 
“আজ থেকেই সমস্ত চাইনিস দ্রব্য বর্জন করা হোক।” 
“চায়না ক্ষতিপূরণ দিক।” 
“ওই সস্তার মাল সব ফেলে দেওয়া হোক।” 

করোনার গৃহবন্দীদের ঘরজামাই এর মতো এইসব আস্ফালন শুনতে ভালোই লাগছে।  ফেসবুক ওয়ারিয়র বলে একটা নতুন প্রজন্ম তৈরী হয়েছে যারা এইসব বেফালতু কমেন্ট মেরে উত্তর পূর্ব ভারতের নাক বোঁচা চোখ কুতকুত দের করোনা বলে গালাগালি দিয়ে বলছে দেশে ফিরে যাও।  

আমেরিকা রেসিস্ট , গৃহযুদ্ধের কারণ এবং বহু বছর  ধরে মানুষে মানুষে ভেদাভেদের কারণ এই ভয়ঙ্কর রেসিজম।   কিন্ত এই রেসিজমের কারণ অর্থনৈতিক।  আর আমাদের দেশে অকারণ কাঠি করার কারণ এই রেসিজম।  আমরা ভালোবাসি এমনি এমনি খেতে।  আমার চোখ হাতির মতো কিন্তু মাথাটাও হাতির মতো তাই আমাকে অনেকেই হাঁসজারু মনে করে।  কিন্তু যাদের চোখ ছোট আর নাক বোঁচা তারা কি বাদুড় খেয়ে করোনার মতো দেখতে হয়ে গেছে।  

এখন প্রথম প্রশ্ন, সকলে মনে করে চাইনিসরা এই ভাইরাসের কারণ।  কনস্পিরেসির গন্ধ পেলেই লোকে “উলুস” বলে ঝাঁপিয়ে পরে।  জীবনে তো কোনোরকম উত্তেজনা নেই।  এমনকি সেক্স করতে গিয়েও জোয়ান বয়সেও পেনেগ্রা খেতে হয়।  তারাই এইসব উদ্ভট চিন্তা ভাবনা করতে পারে।  আর এখন তো ইরাকের পর বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার এর তত্ত্ব  যে কেউ খায়।  যদিও পৃথিবী এখন এমন কন্ডিশনে যাচ্ছে , ৭ লক্ষ মানুষ এই ভাইরাসের আওতায় চলে এসেছে তখন অবিশ্বাস করতেও ভয় হচ্ছে।  

কিন্তু একবার ভেবে দেখুন এই যুদ্ধে লাভ কার  আর ক্ষতি কার ? চায়না ম্যানুফ্যাকচারিং হাব।  বিশ্বের লোকেদের ঘরে বসিয়ে রাখলে এদের লাভ কি। এদের ব্যবসায় তো সবথেকে বড় ক্ষতি।  অর্থনৈতিক লাভ ছাড়া আর মনে হয় কোনো লাভের জন্য কোনো রাষ্ট্র এতবড় ক্ষতি করেনা।  এরা তো রমেশ আর সুরেশ না, যারা খান্তমণির প্রেমে পাগল হয়ে সুইসাইড করতে চলেছে।  

এবার আসি বর্জন করার কথা নিয়ে।  বড় বড় কথা যারা বলছে তারাই সস্তার খোঁজে চাইনিস জিনিসের পেছনে দৌড়েছিলো। এই সস্তার চক্করে শেষ হয়ে গেছে প্রচুর দেশি কোম্পানি। কিন্তু এরা এখনো দৌড়োচ্ছে আর দৌড়াবেও।  সমস্যা চায়নার না , আমাদের।  সস্তা বলে কোনো জিনিস হয়না। তোমার কাছে আমার কাছে সস্তা মানে কোনো দেশে কোনো মানুষ তার জীবনের মূল্য শূন্য করে আমাদের জন্য জিনিস বানাচ্ছে।  তাই দাম দিয়ে জিনিস কিনুন।  আর যদি ক্ষমতা না থাকে , তাহলে যারা সস্তায় যোগান দিচ্ছে তাদের সম্বন্ধে বোকা  বোকা কমেন্ট করা ছাড়ুন।  

মেক ইন ইন্ডিয়ার সিংহ কেনিয়ার জঙ্গলেই এখনো ঘুরছে। গির থেকে বেরিয়ে যদি বিশ্বমাঝে ঘুরতো , তাহলে হয়তো আমাদের এইসব কথা বলা মানাতো।  

আর ক্ষতিপূরণ !!!! আমেরিকার একজন কেস করেছে দেখলাম।  কিসের ক্ষতি আর কিসের পূরণ।  এইসমস্ত ভুলচুলের জন্য , অদ্ভুত ভাবে চায়নার সত্যি আবার ধামা চাপা পরে যাচ্ছে।  সারা পৃথিবী যখন হাজার হাজার লোক যোগ করছে এই মহামারীতে, তখন চায়না একেবারে থেমে গেছে।  বুঝতে পারছেন তো , ওখানের মানুষগুলোর কি অবস্থা।  সত্য গোপনে চায়না সবথেকে উপরে।  আর আরো বেড়ে যাচ্ছে।  

আর চায়নার ভুলের ফসল নিজের দেশের মানুষদের দেওয়া কেন? নর্থ ইস্ট তো আমাদের দেশের অংশ।  আমাদের মানুষ। মোদিকেই ভোট দিয়েছে , জনগণমনই গায় , পাসপোর্ট এ এখনো ইন্ডিয়ানই লেখা আছে, ওদের ভগবানও শচীন টেন্ডুলকার। তাহলে ? সমস্যা কি ? 

এই বন্দী জীবনে আলো দেওয়ার জন্য অনেক কিছু আছে।  সুন্দর গান আছে , গল্প আছে এমনকি কল্পবিজ্ঞান আছে। অবাক হয়ে পৃথিবীর ভুলচুল দেখার সময় আছে।  গুরুগম্ভীর তত্ব আছে , পানু আছে , সময় কাটানোর সমস্ত সরঞ্জাম আছে।  তাহলে এসব কি ? 

ওসব চায়না টায়না ছেড়ে এবার নিজের দেশের দিকে নজর দিয়ে বাড়ি থেকে বেরোনো ছাড়ুন। 

Saturday, March 28, 2020

#গো_করোনা_গো ( ১০ ) - লোক-ডাউন , গণ প্যাঁদানি ও চাটাচাটি




মহিলার চাটাটা দেখলেন ? উফফ কি দিলো মাইরি।  স্কিলটা বেশ ভালো।  কাজে লাগবে। সমস্যা খুব।  দু পক্ষেরই।  অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে।  কিন্ত এখন কেসটা একবারে পচা কেস।  না প্যাঁদালে কাঁসর ঘন্টা নিয়ে করোনা ফেস্টিভ্যাল করবে আর প্যাঁদালে বলবে অমানুষিক।  

আজ যখন লিখতে বসেছি তখন আমেরিকা পৃথিবীর রেকর্ড ভেঙে কুড়ি হাজার নতুন করোনা কেস রেজিস্টার করেছে। ইতালিতে আজকেও সাড়ে আটশোর ওপর লোক মারা গেছে।  আর পৃথিবীর বৃহত্তম ডেমোক্রেসির ঘুম ভাঙছে চতুর্থ লকডাউনের দিনে।  

প্রচন্ড মুষড়ে পড়েছিলাম যখন দেখি হাততালির বদলে কেউ সিলিন্ডার বাজাচ্ছে , ইউটিউবে ভিডিও পোস্ট হচ্ছে টপ ১০ জনতা কারফিউ নয়েস।  আমার মা নিউমোনিয়ার রুগী।  এই শুয়োরের বাচ্চাদের জন্য এমনি এমনি মারা যাবে।  ঠিক যেমন কুড়ি হাজার লোক মারা গেলো কিচ্ছু না বুঝে।  

কিন্তু যখন দেখলাম পুলিশ পেটাচ্ছে , তখন আরো বেশি খারাপ লাগলো।  না না ওসব ব্যাথা মানসিকতা নয়।  দুঃখ লাগলো এই ভেবে যে এরা ভোট দেয়।  গরু ছাগলও নিজের ভালো বোঝে।  তারাও মৃত্যুভয়ে পালতে জানে।  আর এই মানুষগুলোকে না পেটালে বোঝানো যায় না যে এরা একই সাথে মরছে ও মারছে।  দুদিন বাদে আবার ড্যাং ড্যাং করে ভোট দিয়ে অবতার নিয়ে আসবে।  

মুম্বাইয়ের দাদর স্টেশনে একবার দেখেছিলাম এক খাটো ধুতি পরিহিত রাজস্থানি চাষী প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনলাইনে ঝুঁকে গ্রাম্য অভ্যাসবশতঃ দেখছে , ট্রেন আসছে কি না।  মুম্বাইয়ের তিন লোকাল ট্রেন লাইনের ব্যস্ততম জাংশানে যেখানে ২ মিনিট অন্তর অন্তর ট্রেন আসে তখন ওই ভাবে মুখ বাড়ানোর একটাই পরিনাম - মৃত্যু।  আর লোকটির মৃত্যুর সাথে মৃত্যু হবে “সময়ের” . যে শহরে প্রতিটা মিনিট বাঁধা থাকে টাকার সাথে , সেখানে সময় নষ্ট হওয়া মানে মৃত্যু ডেকে আনার মতো।  সেদিন এক রেলওয়ে পুলিশ সোজা গিয়ে একটা লাঠি চালিয়েছিল পায়ের গোছে।  খুব খারাপ লেগেছিলো মানুষটির জন্য।  কিন্তু আজ বুঝতে পারছি মানুষ শুধু লাঠি বোঝে।  

তাহলে কি বলবো পুলিশ এখন যা করছে , “বেশ করেছে” ? না , কারণ প্রচুর অসহায় মানুষ মার্ খাচ্ছে।  কোল্যাটারাল ড্যামেজ বলে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া যায় না।  কারণ এদের মধ্যে অনেকেই আছে যাদের জন্য মানুষ খেতে পাচ্ছে। কিন্তু কাকে কি বলি ? পুলিশরাও মানুষ।  তাদের যদি কেউ চেটে দেয় তাহলে তারাও লাঠি চালাতে বাধ্য।  

এই বাড়িতে গ্রসারি লোড করা ভদ্রলোকদের শখের চা খেতে গিয়ে প্যাদানি খেয়ে পুলিশের মানবিকতাহীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ন্যাকামোতে সারা দিতে পারলাম না।  খাক তারা মার।  আরো মার , আরো মার। যদি সহানুভূতি দেখাতেই হয় তো তাদের দেখাবো যারা বাড়ি ফেরার জন্য মাইলের পর মেইল হেঁটে চলেছে। কোলে বাচ্চা নিয়ে , পেটে খিদে নিয়ে , ভবিষ্যতের আশংকা নিয়ে , আর পদে পদে পুলিশের মার্ খেয়ে।  তাদের ছেড়ে দিন প্লিস।  সহানুভূতি সেই বৃদ্ধ বৃদ্ধার জন্য , যাদের জোয়ান ছেলেমেয়ে মেয়ে কর্মসূত্রে বাইরে থাকে।  সহানুভূতি তাদের জন্য যারা শিশুর খাবার যোগানের জন্য মার্ খেয়ে বাজার করে নিয়ে আসছে।  সহানুভূতি তাদের জন্য যারা ডেলিভারি বয়ের কাজ করতে গিয়ে মার খাচ্ছে।  তাদের জন্য না , যারা প্রেসক্রিপশন নিয়ে মদ কিনতে বেরোচ্ছে , ফাঁকা রাস্তা দেখে বাইকের রেস লাগাচ্ছে , খোলা ছাদ দেখে পিকনিক করছে।  

এইমুহূর্তে দু চারটে কালশিটের থেকে অনেক বেশি সমস্যায় আছে পৃথিবী।  আর হ্যাঁ যদি পুলিশের ভালো কাজের জন্য চাটতে হয় তাহলে একটু অপেক্ষা করুন। ……             

 


Friday, March 27, 2020

#গো_করোনা_গো ( 9) - আমেরিকা ১০০, ০০০ ( ১ লক্ষ )

#গো_করোনা_গো ( 9) - আমেরিকা ১০০, ০০০ ( ১ লক্ষ )



এক লক্ষ পূর্ণ করলো আমেরিকা।  পঞ্চাশ হাজার মাইলস্টোন থেকে এক লাফে এক লক্ষে পৌছাঁতে লাগলো মোটে তিন দিন।  কি দারুন গতি না।  সব সাহস, সব “পুশিং দা লিমিট ” এক এক করে শেষ হয়ে যাচ্ছে।  সমস্ত দেশকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে আমেরিকা।  

টু ট্রিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ দেওয়া হলো দেশের মানুষদের।  আমরা এখানে মানুষ নই আজ।  তারাও মানুষ নয় যারা অবৈধ।  আমরা বৈধ হলেও আমরা বিদেশী।  অদ্ভুত পরিস্থিতি এখনো আমাদের। আমরা না এদেশের না নিজের দেশের।  দেশের মানুষ সাধারণ ভাবেই সুযোগ পেলে আমাদের সম্বন্ধে বেশ কিছু কঠিন কথা বলে থাকেন।  দেশদ্রোহী , সুবিধাবাদী , মা বাবা কে দেখে না , ইত্যাদি ইত্যাদি।  আজ আরো বেশি করে বলছে।  বিদেশ থেকে ঘুরে আসা মানুষদের জন্যেই তো এই সমস্যা।  তাই তারা আন-ওয়েল্কাম্ড। এখানে সকলে যখন বেরিয়ে আসবে ঘর ছেড়ে , করোনার ভয় ছেড়ে।  তখন দ্বিতীয় নিধন শুরু হবে এই ইমিগ্র্যান্ট দের। তাই শাঁখের করাতের মতো অবস্থা নিয়েই অন্যবারের মতোই এবারও বলছি , “ঠিক আছে। ” 

আজ নিউ ইয়র্ক একাই প্রায় পঞ্চাশ হাজার কেস হতে চললো।  ভয়াবহ পরিস্থিতি।  আর দ্বিতীয় ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন নিউ জার্সি , যা ভারতীয়দের লাইফলাইন , আজ তারা ইন্ডিয়া স্টোরগুলি বন্ধ করার ঘোষণা করলো।  পরিণতি হিসেবে একটু আগে কানেটিকাটে বন্ধ হতে শুরু করলো দেশি দোকান গুলো , কারণ তাদের সাপ্লাই আসে নিউ জার্সি থেকে।  

ভাবছেন সমস্যা কি? আমেরিকান দোকানগুলো তো আছে।  বাই ল খাবারের দোকান বন্ধ তো করা যাবে না। খেয়ে পরে বাঁচতে তো পারবেন।  শুনুন, তবে একটা কথা বলি , আমেরিকার ভারতীয়রা দেশে গিয়ে যতই ফটর ফটর করুক , তারা ভারতে থাকা ভারতীয়দের থেকে বেশি ভারতীয়।  কারণ একটাই , তারা যে সময় দেশটা ছেড়ে চলে এসেছে , সেই স্মৃতি আঁকড়ে ধরে , পুঁই চচ্চড়ি আর বড়ি দিয়ে শুক্ত রান্না করে খাচ্ছে।  আর এই ইন্ডিয়া স্টোর গুলো যোগান দিয়ে চলছে তাদের স্মৃতিকথায়।  তাই অনেকেই এমন আছেন যারা আমেরিকান দোকানের থেকে ইন্ডিয়া স্টোরের ওপরই ভরসা করেন।  আর কস্টকো সবে ঘি বিক্রি করা শুরু করলেও , কাড়িপাতা , সর্ষে আর ভিন্ডি বিক্রি এখনো আরম্ভ করেনি।  

যাইহোক, আজ ভয় জাঁকিয়ে বসেছে।  গতি দেখে ক্ষতির সম্ভবনা আন্দাজ করতে পারছি না।  দেশে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই।  বাবা মা দেশে পরে আছে।  এই মুহূর্তে তাদের কেউ মারা গেলে , হয়তো মুখে আগুন পর্যন্ত পাবে না। একদিকে ভবিষ্যতের চিন্তা , একদিকে পুরাতনের ঋণ। এই প্রচন্ড চাপে , আমি একা নই।  কাতারে কাতারে আটকে থাকা মানুষ।  

ঘরে আটকে থাকা অনেক সমস্যা।  কিন্তু থাকলে ভালো হয়।  আমেরিকা ফাঁকা দেশ।  মাইলের পর মাইল জায়গা পরে আছে যেখানে হাঁচলে তো ছাড়, বন্দুক ছুড়লেও বুলেট এক জায়গায় গিয়ে টুপ করে পরে যাবে, কিন্তু মাথা পাবে না। সেই দেশে যখন এরকম অবস্থা তখন বারো মাসে তেরো পার্বন আর বনগাঁ - ক্যানিং - শান্তিপুর লোকালের দেশের কি অবস্থা হবে ভাবুন।  তাই বাড়িতে থাকুন। 

শেষে আজ না বললেই নয়।  মহিলাকে যতই ক্ষেপি পাগলী বলি না কেন , এই দুর্যোগের দিনে , ঘরে বন্দী না হয়ে মানুষের জন্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি।  আর হবু মুখ্যমন্ত্রী ঘরে রান্নার ছবি পোস্ট করছেন।  আর কিছু বলার নেই।  

ভালো থাকবেন। …… মন হালকা করে আবার লিখবো পরে।    

Wednesday, March 25, 2020

#গো_করোনা_গো ( 8 ) - 50,000 in USA




মৃত্যুর ঘন্টা শুনেছ কখনো।  কেউ শোনেনি।  সিঁড়দাঁড়া দিয়ে ওঠা ঠান্ডা স্রোত হয়ত সেই ভয়ের প্রথম ভাগ।  ভয়ঙ্কর ভাবে ভয় পাচ্ছি।  মৃত্যুভয়হীন মানুষ আমি দেখিনি বা যাদের শুনতাম , তারা সবাই মৃত্যুর আগে শেষ চেষ্টা করে গেছেন বাঁচার।  একটা গল্প বাবা বলে , “এক প্রখর রৌদ্রের দিনে একটা মুটে,  বিশাল একটা মোট নিয়ে যাচ্ছিলো।  মোট পাশে লেখে গলার গামছা নিংড়ে ঘাম ঝেড়ে সারা গায়ের ঘাম মুছতে মুছতে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো , “হে ভগবান , তুলে নাও না কেন ? ” পাশ দিয়ে যমদূত যাচ্ছিলো।  বিকট মূর্তি নিয়ে প্রকট হয়ে বললো, “কি হে ! ডেকেছিলে? ” মুটেটি তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলো , “এই মানে না , আসলে কেউ তো ধারে কাছে নেই , একটু মোটটা পিঠে তুলে দেবেন?” 

মৃত্যুকে ভয় করেনা মানুষ যখন সে মৃত্যু দেখেনা।  আজ মৃত্যু চারপাশে।  মৃত্যু প্রিয়জনের , মৃত্যু অপ্রিয়জনের , পরিচিতের - অপরিচিতের।  বিশ্বব্যাপী বিশ হাজার মানুষ এক অজানা কারণে মারা গেলো।  আর মানুষ করোনা ফেস্টিভ্যাল করছে।  

আমেরিকার কাঁটায় যখন পঞ্চাশ হাজার উঠলো তখন চোখ বন্ধ করে ভাবলাম এই ফাঁকা দেশে ৫০ হাজার ছোঁয়াচে রুগী মরার অপেক্ষা করছে।  চেষ্টা চলছে , কিন্তু এখনো ঠিকঠাক কেউ বলতে পারছে না যে সামনে কি ? প্রথমে বলেছিলো জোয়ান দের হবে না , জোয়ান মরলো , শিশুদের হবে না , শিশু মরলো , ফুসফুস যাদের কমজোরি তারা ছাড়া বাকিদের সমস্যা নেই , সুস্থ সবল মানুষ মারা যেতে লাগলো।  তাহলে সত্য এখনো অজানা।  

মৃত্যুভয় এখন কি সাংঘাতিক ভয়বহতায় দাঁড়িয়েছে তা মানুষ বুঝতে পারছে না। এখানে মানুষ মানুষের শত্রু।  সেই মানুষকে মানুষের কাছে যেতে আটকাতে একমাত্র এই মৃত্যুভয়ই পারে।  আটকে থাকা , গৃহবন্দী , বিরক্তি , ওয়ার্ক ফ্রম হোম , ফুড শর্টেজ সব মানুষ মেনে নেয় যখন জানে সামনে মৃত্যু।  

অলিম্পিক বন্ধ হতে চলেছে।  শেষবার কবে বন্ধ হয়েছিল জানেন নিশ্চই।  দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়।  আবার সেরকমই পরিস্থিতি।  সেইসময় বিশ্বভ্রাতৃত্বের কবরের পাশে পাঁচটি রিং বসেছিল , মানুষ কবে মানুষ হবে বলে।  আজ আবার সেই দিন। এই ভয়ঙ্কর প্যানডেমিকের দায়িত্ব মানুষের ঘাড়ে , বাদুড়ের ঘাড়ে না।  মানুষ ছড়িয়েছে এই রোগ।  যারা না জেনে  দোষ করেন তারা কেন জানেন না সেটাও দোষের।  কিন্তু তাদের ছেড়ে দেওয়া যায়।  আর যারা জেনে ভুল করে ?  

তাই মৃত্যুভয়ই মানুষকে পারে মানুষের থেকে দুরে সরাতে।  আর সেই মৃত্যু যদি এরকম নিঃসঙ্গ ও বীভৎস হয়।  যে মৃত্যুতে প্রিয়জন কাছে আসতে চাইবে না, হসপিটালে বেড পাওয়া যাবে না , এমন শেষকৃত্যও হয়তো গণকবরে বা গণচিতায়। 

আহমেদ বুখাতির এই লাস্ট ব্রিদ গানটি তখন শুনি যখন মৃত্যু নিয়ে ভাবি।  ঠিক মৃত্যুর পরে কেউ গান লিখলে হয়তো এইরকম লিখতো।  আর এই সুর যেন ভেতরটা নিংড়ে নেয়।  আমি ভয়ে আছি , ভেতরে আছি , খুব খারাপ অবস্থায় আছি।  আপনারাও থাকুন ভয়ে।  মৃত্যুই কিন্তু শেষ কথা।  আপনিও জানেন না আর কটা দিন।  সাবধানে থাকবেন। .. বন্দী থাকবেন।   এই গানটা শুনে ভগবানের কাছে প্রে করতে বসে যাবেন না যেন।  মানুষের ক্রিয়াকলাপে এখন ভগবানও ভয় পেয়ে আছে।  ভক্ত না থাকলে ভগবান থাকবে কি ? ভগবানেরও মৃত্যুভয় আছে।

Tuesday, March 24, 2020

#গো_করোনা_গো ( 7 ) - ওয়ার্ক ফ্রম হোম

#গো_করোনা_গো ( 7 ) - ওয়ার্ক ফ্রম হোম 


 
 আমার ওয়ার্ক ফ্রম হোম করা নিয়ে অনেকেই হিংসা করে। অনেকেই চায় একটু বাড়িতে সোফায় ঠ্যাং ছড়িয়ে বসে নেটফ্লিক্স চালিয়ে আরাম করে কাজ করতে। ট্রেনে বাদুড়ঝোলা হয়ে বা ট্রাফিকে এক্সিলারেটর আর ব্রেক এর মধ্যে তা থৈ তা থৈ করে যারা অফিসে গিয়ে বসের কাছে মুখোমুখি গালাগালি খায় তারা আমার এই ওয়ার্ক ফ্রম হোমে হিংসা তো করবেই। আর তাদের অভিশাপেই হয়তো আজকের এই দীর্ঘ ওয়ার্ক ফ্রম হোম পাওয়া। 

সত্যি বলতে আমার ঘর থেকে কাজ করতে একদম ভালো লাগে না। কারণ অফিস থাকলে একটা নিয়ম থাকে। আর অফিস না থাকলে তুমি সারাদিন কাজ করে যাবে। সকালে উঠে অফিস যাওয়ার সমস্ত কাজ সম্পন্ন করে যখন অফিস গিয়ে পৌঁছবে তখন কেউ জিগ্গেস করবে না গত দেড় ঘন্টা তুমি অনলাইন ছিলে না কেন ? অনেক মিটিং চায়ের সিপ্ নিতে নিতে হবে। লাঞ্চ টাইমে সবাই ক্যান্টিনে দেখা হবে। আর কাজের মধ্যে কোনো সমস্যা হলে কারো ডেস্কে উঠে গিয়ে জিজ্ঞেস করে নিলেই হবে।  কলকাতার অফিসের মোচ্ছব তো আর বলার নেই।  ঝালমুড়ি মেখে খাওয়া হয়।  

তা আমার ওয়ার্ক ফ্রম হোম দু দিনের , সোমবার আর শুক্র বার।  এই দু দিন কিন্তু আমার দম নেওয়ার সময় থাকে না।  সপ্তাহের শুরু আর সপ্তাহের শেষ।  দুদিকেই শ্বাসরুদ্ধ করে ল্যাপটপে দাপাদাপি।  শুধু শান্তি একটাই , গিন্নি অফিসে আর ছেলে স্কুলে।  এই দু দিন ব্যাচেলারত্ব উপভোগ করি।  

কিন্তু আজ ব্যাপারটা একদমই আলাদা।  যখন লিখছি , তখন আমেরিকা ৫০ হাজার ছুঁতে চলেছে , করোনা ভাইরাসের কেস।  ছেলের স্কুল থেকে ফোন এসেছে এক মাসের আগে স্কুল খুলবে না। তার মানে গত সপ্তাহের ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ভয়াবহ স্মৃতি অন্তত আরো একমাস চলবে।  

বেসমেন্টে একটা ছোট মতো অফিস বানিয়েছিলাম।  এখন সেটা ছেলের দখলে আর স্টোর রুমে পরিণত হয়েছে। গিয়ে বসলেই ছেলে এসে বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছে যে “তুমি বাবা। তোমার একা বসে কাজ করা চলবে না।” আমার কিবোর্ডে তাকে টাইপ করতে হবে।  আমার সাথে তাকে খেলতে হবে। বাবা মা বাড়িতে আছে অথচ তার সাথে খেলছে না সে আবার কি কথা ? 

তার সাথে আছে অফিসের চাপ।  যেহেতু সবাই বুঝতে পারছে গ্লোবাল রিসেশান আসতে চলেছে। আর ক্যাপিটালিসমে ডুবে থাকা আমেরিকায় চাকরি যেতে শুরু করেছে।  তখন কোপ সবার উপরেই আসবে।  তাই সবাই প্রচন্ড কাজ করছে।  যে জিনিস অন্তত তিন মাস পরে করার জন্য প্ল্যানিং করা আছে , সেটা সবাই আজকেই করে ফেলছে। আই টি যেহেতু সবসময় বাঁ হাত মানে প্রয়োজনীয় কিন্তু ডান হাতের মতো নয়।  তাই লোক কমাতে প্রথমে আইটি থেকেই বাজেট যাবে। 

এই প্রচন্ড কাজের চাপের সাথে থাকছে একটা ছোট্ট মানুষ, যে দস্যিপনার লিমিট ক্রস করে দিয়েছে।  কারণ কিছুই নয়।  তার সাড়ে তিন বছরের মাথায় এটা কিছুতেই ঢুকছে না যে কেন স্কুল বন্ধ।  অফিসের কলিগদের কাছে শুনতাম যে গ্রীষ্মের ছুটিতে তাদের কি সাংঘাতিক অবস্থা হয়।  আর এখন গ্রীষ্মের ছুটির থেকেও খারাপ অবস্থা।  বলে না , বাচ্চা সামলানো অফিস করার মতো কাজ ( Handling kid is a full time job ) সেটা হাড়ে টের পাচ্ছি।  আর সাথে পাচ্ছি বুঝতে যারা ডাবল শিফট এ কাজ করে সংসার চালায় তাদের কষ্ট।  

অফিসের  মিটিং এ ঢুকছি ছেলে চ্যাঁচাচ্ছে “Daddy lets play soccer” সকার খেলতে বেসমেন্টে গিয়ে হাজির হলাম বৌ চ্যাঁচাচ্ছে , “প্রেসার কুকারে একটা সিটি পড়লে নামিয়ে দিয়ো। ” প্রেসার কুকার বন্ধ করতে গিয়ে মায়ের ফোন আসছে , “তাহলে বাজার টা করেই আনি।” বিচ্ছিরি ভাবে কাকুতি মিনতি গালাগালি করে মায়ের বেরোনো আটকাতে আটকাতে মেল্ চলে আসছে , “ Work from home doesn’t mean you will not respond in ping.” মেলের রিপ্লাই করতে করতে করতে ছেলে পটিতে বসে চিল্লাচ্ছে , “ড্যাডি , অল ডান . ক্লিন মাই পনু .” আমি গিন্নিকে চিৎকার করে ডাকতে জবাব দিলো  , “আমি মিটিঙে ঢুকলাম।  তুমি ছেলেকে একটু দেখো। ” ছেলের সোনাপোনা পরিষ্কার করে দেখলাম নোটিফিকেশন , “Home arrest skill development” অফিসের রাগ গিয়ে পড়লো ছেলের ওপর।  এমনি এমনি চিৎকার করতে যাবো,  নিরীহ মুখটা ঘুরিয়ে ছেলে বললো , “নো স্কুল টুডে।  অল ফ্রেন্ড আর সিক।” সাইড কাটিয়ে গিন্নি কে খ্যাকাতে গেলাম , “সারাদিন ল্যাপটপে মুখ গুঁজে পরে থাকলে ছেলেকে দেখবে কে।” তার আগেই গিন্নি বেরিয়ে এসে বললো, “সারাদিন ছেলেটাকে টিভি চালিয়ে বসিয়ে রেখেছো।  আমি একা হাতে , রান্না , অফিস আর বাচ্চা কি করে সামলাই।” 

এবার ন্যাড়া হয়ে যাবো।  এই ওয়ার্ক ফ্রম হোম তুলে না ভাই।  কিউমুলো নিম্বাসের ওপর যদি কেউ বসে থাকিস / থাকো / থাকেন তারা শুনলে এই করোনাকে একটু ওয়ার্ক ফ্রম দিয়ে দাও।     

Sunday, March 22, 2020

#গো_করোনা_গো ( ৬ ) - জনতা কারফিউর ঠিক পরে

#গো_করোনা_গো ( ৬ ) - জনতা কারফিউর ঠিক পরে 

কারফিউ কথাটা মানে যদি দেখলেই পুলিশের প্যাঁদানো হতো তাহলে হয়তো মানুষ মনে করতো এর দরকার আছে।  মানুষ মানে মান আর হুঁশ যাদের আছে তারাই মানুষ।  কাঁসর ঘন্টা নিয়ে প্রসেশান দেখার পর কি সত্যি মনে হলো এরা মানুষ ? 

পরিস্থিতি খুব খারাপ। আর পরিস্থিতি বুঝতে না পারা মানুষগুলির অভিব্যক্তি আরো খারাপ।  কোনোদিন লকডাউনের ছবি দেখেছেন ? আজ ইতালির বড় বড় রাস্তায় দৌড়ে যাওয়া কোটি কোটি গাড়ি পরে আছে গ্যারেজের পেছনে।  রোজকার বাজার করা মানুষ গুলো ঘরের ব্যালকনি থেকে একে  অপরকে গান শোনাচ্ছে।  সিনেমা তে দেখা পোস্ট এপোক্যালিপ্টিক ছবি গুলো আজ চোখের সামনে জ্যান্ত।  ছোট ছোট দুধের শিশুর মুখে দুধ যোগানের জন্য প্রাণ হাতে নিয়ে অজানা শত্রুর আসপাশ দিয়ে ঘুরে আসছে অসহায় বাবা - মা রা।  আর তোদের মোচ্ছব হচ্ছে ????? 

কর না মোচ্ছব।  কে বারণ করেছে।  কিন্তু বাইরে কেন ? কেন এই উন্মাদনা।  বিকাল পাঁচটায় সরকার যা করতে বলেছে সেটা নীরবতা পালনের মতোই নিয়ম মেনে করার মতো ছিল।  যে মানুষ গুলো মুখে খাবার যোগান দেওয়ার জন্য প্রাণ হাতে করে আলুটা , মুলোটা দিয়ে যাচ্ছে তাদের সম্মান জানানোর জন্য।  আর বদলে তারা কি পেলো।  আরো অসুস্থ লোক। টেনে হিঁচড়ে বাড়িয়ে দেওয়া কষ্ট।  চুলকে ঘা করে মলম লাগাতে এবার ল্যাজ তুলে তো দৌড়াবেন তো ।  

যে ডাক্তারদের থ্যাঙ্কিউ বলতে বাইরে বেরিয়ে গাজন গাইছিস সবাই , তার থেকে গিয়ে গলা টিপে দিলে মনে হয় তার থেকে অনেক বেশি সম্মান দেখানো হতো।  ছিঃ ছিঃ , থুতু ছেটাতে ইচ্ছা করছে , যারা সারাটা সময় থুতু ছিটিয়ে গেলো রাস্তায়।  মানুষ এখনো কেন বুঝতে পারছে না কেউ অসুস্থ না হলেও সে এই জীবাণু বহন করতে পারে।  মশা জানেও না ম্যালেরিয়া ছড়াচ্ছে।  ঠিক মশার মতো যখন এই লোকগুলো মরবে তখন কে দায়িত্ব নেবে।  

যারা খোলা আকাশের নিচে কাঁসর ঘন্টা বাজালো তাদের মধ্যে সবাই অশিক্ষিত নয়।  কেউ অতিশিক্ষিত এবং বেপরোয়া উদগাণ্ডু।  এদের থেকে দুরে থাকুন।  যারা “কিচ্ছু হবে না” বলে আশ্বাস দেয় তাদের থেকে দূরে থাকুন।  তাদের নামে পুজো দিন।  তাদের মঙ্গল কামনা করুন আর প্রতিটা সেকেন্ডে গালাগালি দিন।  এরা কক্ষনো মানুষের কাজে আসবে না।  

আর যখন স্বয়ং ভগবানের মতো ক্রিকেট প্লেয়ার রা বলছেন ঘরে থাকুন তখন সেই ক্রিকেট খেলে তাদের অসম্মান করা হচ্ছে না ? সেই ফাটাকেষ্টর অনুপ্রেরণায় অনুপ্রেরিত আমরা খবর দেখিনা , খবর শুনিনা , খবর বানাই।  চোখের সামনে পরে থাকা শয়ে শয়ে লাস দেখতে পারছেন।  পারছেন মরা পোড়ানোর ডোম না খুঁজে পাওয়ার চিত্রটা শুধু ভাবতে।  পারছেন একবার ভাবতে বাবার লাশ ছাড়াতে গিয়ে দিনের পর দিন লোক পাওয়া যাচ্ছে না মর্গ খোলার।  

এই লোকগুলো দায়ী।  এই লোকগুলো।  এরা শুধু মৃত্যু ছড়াচ্ছে। এদের বহিষ্কার করুন।  আমরা অনেক পুরানো সভ্যতা তাহলে কেন জোর করে ডিক্লেয়ার করতে হয় লকডাউন। কেন লোকে নিজে থেকে লোক - ডাউন করে নিতে পারেনা।  দুদিন ঘরে বসুন।  দুদিন ক্রিকেট বন্ধ করুন।  দুদিন বাড়ির লোকেদের সাথে কথা বলুন।  বাড়ির দেওয়ালে পরে থাকা ঝুল পরিষ্কার করুন।  ডাউনলোড করে জমে থাকা সিনেমা গুলো দেখুন।  

বাঁচুন।  নাচুন না।  

লিখে দিলাম কারণ এখন লোককে যা বলা হচ্ছে সব ভুল প্রমান করে নিজের একটা বক্তৃতা রেখে যাচ্ছে।  পড়ছে গরু , বুঝছে ব্যাঙ , বলছে হাতি আর পরের জন সেটাকে হাঁসজারু করে ছড়িয়ে দিচ্ছে।  

সাথে আছে অস্ট্রোলোজি , একজনের পোস্ট দেখে আমি এখন খুঁজতে আরম্ভ করেছি এই “someone very knowledgeable ” টা কে ? 

   
নিশ্চই কেউ যে এই পতাকার ওপর পেচ্ছাপ করার জন্য রেডি হয়েছে।  কি দরকার এই দেশাত্মবোধকতার যদি দেশের মানুষ গুলো শেষ হয়ে যায়।  কিসের মিছিল কিসের প্রয়োজন।  সবাই শুধু সার্কাস চাই।  সব ভাঁড় আর সব নোংরা।  

ফেসবুকে বসে বসে এই সব দেখে শুধু রক্ত গরম হচ্ছে কিন্তু কিচ্ছু করার নেই।  আপাতত এখানেই থামলাম।    

 
     
       



Saturday, March 21, 2020

#গো_করোনা_গো ( 5 ) - জনতা কারফিউর ঠিক আগে


#গো_করোনা_গো ( 5 ) - জনতা কারফিউর ঠিক আগে  


সব রেডি তো ! মদ মাংস আর পার্টির সব ব্যবস্থা।  রেডি নেই ? বলো কি ভাই? কালকে যে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে বোতলগুলো নিয়ে এলে , আজকে ড্ৰাই ডে বলে।  সমস্যা বেশি নেই।  যেমন দোসরা অক্টোবর পাওয়া যায়।  আজকেও পাওয়া যাবে।  জানতে হবে কোথায় , আর কার কাছে পাওয়া যাবে। যদি না জানো তাহলে অন্তত এইটা তো জানো কার কাছে , কাদের বাড়িতে এক্সট্রা পেগ আছে।  মদ কি আর একা খাওয়া যায়।  সঙ্গী তো লাগেই।  যদিও সঙ্গী কালকেই এসে গেছে সঙ্গে।  ওই লাইনেই তো তোমার সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল করোনা ভাই।  আজ জমে যাবে , “জব মিল ব্যায়ঠেঙ্গে তিন ইয়ার , ম্যায় , করোনা ভাই আর মৃত্যুদা।” 

না দাদা , মদ আমি খাইনা।  খেতে ভালোবাসি। আর রবিবারের পাঁঠার মাংস কি আর ছাড়া যায়।  টাটকা রক্ত মাখা মাংস না ধুয়ে কড়াইয়ে ছাড়লে তবেই টেস্ট।  দোকানটা সামনের দিকে বন্ধ থাকবে।  পেছন থেকে খোলা।  কোনো চাপ নেই।  ঠিক নিয়ে চলে আসবো।  তাহলে !!!! বললে হবে খরচা আছে।  আর আছে জুগার।  একদিন আগে কিনে রাখলে তো পাঁঠার স্বাদ কমে যাবে। একটা পাঁঠা তার জীবন দিতে পারে , আর আপনি পাঁঠার জন্য জীবনের রিস্ক নিতে পারবেনা , ধিক মশাই আপনার যৌবনে।  

যৌবন মানে খেলে বেড়ানোর সময়। একে তো ফাগুন মাস, দারুন এ সময়।  এসময়ে ঘরে আটকে রাখলে চলে।  তার ওপর রবিবার।  ছুটির দিন।  সবাই মিলে ফিষ্টি করতে হবে। সেখানে মদ মাংস দুটোই চলবে।  সঙ্গে থাকবে উদ্দাম নাচ।  আর কত খেলা।  কাউন্টারে সিগারেট , মিউজিক্যাল চেয়ার , দড়ি টানাটানি , কোমর টানাটানি আর ফচকে ছেলের হাতে কচি মামনি। আঃ , এই করোনার নাম করে একটা সত্যি ছুটি হলো মাইরি।  

সাত দিনে , আমেরিকায় দু হাজার করোনা ভাইরাস কেস থেকেছাব্বিশ হাজার কেস দাঁড়িয়েছে।  আমেরিকায় খালি জায়গার অভাব নেই।  লোকে লোকের সাথে গা ঘেঁষে চলে না।  বনগাঁ , ক্যানিং লোকাল নেই।  নেই ইউরোপের মতো চুম্বন প্রথাও।  আছে , কিছু বেপরোয়া লোক যারা সমস্যা বাড়াতে সমস্যার দিকে উঁকি মারতে গিয়ে কেস খেয়ে যায়।  ভারতবর্ষে আছে ভিড় ট্রেন , বাদুড়ঝোলা বাস, ট্রিপল বাইক ,  জাদু কি ঝাপ্পি , বিজয়া - ঈদের কোলাকুলি, তেরো পার্বণ , মেলা খেলা আর আছে ওই বেপরোয়া অশিক্ষিত লোক  যারা “জনতা কারফিউ “ কে ছুটির দিন মনে করে।    

আমরা ভারত বন্ধ কে ছুটির দিন মনে করি , ৪৪৪ ধারা কে ছুটির দিন মনে করি , জাতীয় শোক পালন কে ছুটির দিন মনে করি। .. কোনো অসুবিধা নেই।  কিন্তু আজ ছুটির দিন নয়। আজ  ভয় পাওয়া ভালো।  আজ বীর্য গুটিয়ে পেছনে পুরে রাখা ভালো।  কাপুরুষ হওয়া ভালো।  বাড়িতে বসে থাকা ভালো।  সিগারেটের কাউন্টার না দেওয়া ভালো।  লুকিয়ে থাকা ভালো।  অসামাজিক তকমা ভালো।  বাবা মা কে দেখে না , সেই অপবাদও ভালো।  গার্লফ্রেন্ড কে সময় না দেওয়া ভালো।  ভালো নয়, ভালো হতে গিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসা।  ভালো নয় আমেরিকার মতো তলানি থেকে তিন নম্বরে নিয়ে যাওয়া দেশকে।  

ভগবানের ভরসায় আমাদের দেশ চলে।  কিন্ত এখন বুঝেছেন তো , ভগবানও লুকিয়ে পড়েছে।  কমিউনিস্ট চীন যেমন ভুগছে , তেমন ক্যাথলিক ইতালি আর প্রটেস্টান্ট স্পেন ভুগছে , আল্লাহও হাওয়া ইরান থেকে।  এই ভাইরাস কাউকে ছাড়ছে না।  যদি সাহস দেখাতে হয় তাহলে সোজা চলে যান “করোনা” স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলিতে।  যেখানে নিরপরাধ ডাক্তাররা তাদের প্রাণ হাতে করে লড়াই করছে এই ভাইরাসের সাথে।  আপনারা যা অপরাধ করছেন তার দায় এই ডাক্তারগুলো কেন নেবে।  

দয়া করে বেরোবেন না।  ভারতবর্ষ অনেক জিনিসেই পিছিয়ে আছে, পিছিয়ে দিন এই কোরোনাভাইরাসের নাম্বারেও।  কোনো অসুবিধা নেই।  বোমার মতো ফাটতে যেন না হয়।  মনে রাখবেন আপনি একা পারেন এক লক্ষ লোকের বারোটা বাজাতে।  যদি ধর্ম মানেন তাহলে নরকে জায়গা হবে না এই পাপের , যদি যুক্তি মানেন তাহলে আজ বাড়ির বাইরে পা রাখাটা অযৌক্তিক আর সবথেকে বড় কথা মানুষ হলে মনে রাখবেন কাছের মানুষগুলো কিন্তু শেষ হয়ে যেতে পারে, আপনার জন্য। আপনি হয়তো বেঁচে যাবেন কিন্তু মেরে যাবেন ষাটোর্ধ মানুষগুলোকে যারা আপনার জীবন বানিয়ে এখন অবসর নিচ্ছেন , এরা কারো মা-বাবা , কারো দাদু-দিদা , কারো পথপ্রদর্শক , কারো ভগবান।  

আজ দয়া করে বেরোবেন না ( কাল থেকে দরকার না পড়লে বেরোবেন না ) 

#গো_করোনা_গো ( 4 ) - গৃহবন্দীর আগের বাজার




ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা গৃহবন্দী হয়ে থাকার প্রথম সোপান হলো বাজার করা।  যেদিন ঠিক করলাম যে এবার বেসমেন্টের হোম অফিসে আটকে যাবো সেদিন প্রথম কাজ যেটা করলাম সেটা বাজার করতে গেলাম।  গিন্নি অফিস থেকে ফেরার পথে Costco  বাজার করে আসবে আর আমি যেহেতু বাড়িতে আছি সেহেতু  ইন্ডিয়া স্টোর করে আসবো। 

আমাদের ঠিক ছিল বিশেষ কিছু কেনার দরকার নেই। দুদিন আগেই কানেটিকাটের গভর্নর এমার্জেন্সি প্রিপারেশন ডিক্লেয়ার করেছিল।  প্রিপারেশন।  চারপাশের স্টেটে তখন চূড়ান্ত মাত্রায় বেড়ে যাচ্ছিলো কেস।  বিশেষ করে নিউ ইয়র্ক এ।  তাই প্রিভেনশন ইস বেটার দেন কিওর হিসেবে সমস্ত ব্যবস্থা করার ডাক দিয়েছিলো মাত্র।  কিন্ত যেমন ট্রাম্পের ট্রাভেল ব্যান করাকে লোকে ভুল ভাবে নিয়েছিল।  ঠিক সেরকমই প্যানিক বাটন প্রেস করেছিল গভর্নর।  

খবর আগেই এসে গেছিলো যে স্যানিটাইজার পাওয়া যাচ্ছে না। আর স্যানিটাইজিং বাকি সামগ্রী এরই পাওয়া যাচ্ছে না।  মানে , ওয়াইপ, ক্লিনার , স্প্রে ইত্যাদি ইত্যাদি।  দুপুরে গিন্নি যখন গিয়ে হাজির হলেন কস্টকোতে তখন খালি থাকা পার্কিং লটে ছিল লম্বা লাইন।  প্রত্যেকটা কার্ট ভেতরে ঢোকানোর সময় সানিটাইজিং ওয়াইপ দিয়ে পুঁছে তার পর ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছিলো।  আমার গিন্নিও জুল জুল করে তাকিয়ে ছিল।  কিন্তু ওই একটা ওয়াইপই পাওয়া গেলো।  

যা পাওয়া যাচ্ছে না তা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে বিশেষ লাভ নেই। কিন্ত কস্টকো যাওয়ার প্রধান কারণ কস্টকো যেহেতু ওয়ারহাউস তাই স্টক অনেক বেশি।  কিন্তু সেই ধারণাকে কলা দেখিয়ে গিন্নি ঘোষণা করলেন , “চিকেন নাই।” “বল কি ? ফ্রোজেন না টাটকা। ” “দুটোই। এমনকি এখন বক্স ফুড শেষ হতে চলেছে।” পুরো রূপ যা বুঝলাম শুধুমাত্র খারাপ হয়ে যাওয়া খাবার বাদ দিয়ে সমস্ত কিছুই তুলে স্টক করছে মানুষ।  হিন্দুর ঘরে বিফ পর্ক স্টোর করা যাবে না অথচ সেটাই পরে আছে।  

সে থাক।  কিন্তু এই এতো এতো ক্লিনিং সামগ্রী নিয়ে করবে টা কি ? আর সবথেকে বড় বুদ্ধিহীনতা হলো পুরো স্টক তুলে নেওয়া।  যেখানে একে অপরের হেল্প করলে ছড়াবে না।  সেখানে আসলে সবাইকে খুন করার চেষ্টা হলো।  মানুষের এই বুদ্ধিহীনতা সর্বত্র।  গিন্নিকে বললাম চিন্তা কোরো না।  যা সাধারণ ভাবে তুলতে পারো দেখো।  

আমি ইন্ডিয়া স্টোরে গিয়ে দেখি বোমা পড়েছে কালকে। পরিচিত দোকানিরা দেখেই বললো , “সাব কুচ নেহি হয়।  সব পাগল হো গায়ে হ্যায়। “ আমি দেখলাম চাল নেই , ডাল নেই , আলু নেই, ম্যাগি নেই ( পতঞ্জলির নুডলস ও নেই ) পিয়াঁজ নেই , এমন কি ওল আর ফুলকপিও নেই।  আমি কিছু শাক আর বাকি কিছু দরকারি অদরকারি জিনিস নিতে গিয়ে গিন্নি ফোন করলো , “সর্ষে আর শুকনো লঙ্কা শেষ।  পারলে নিয়ে এসো।  আর ডাল যদি কিছু পাও।” তিনটেই নেই।  সাউথ ইন্ডিয়া সর্ষে আর শুকনো লংকার ওপরেই চলে।  আর উত্তর ভারতও শুকনো লংকার ওপর।  তাই সবাই তুলে নিয়েছে, বাঙালি ঝাড়ে।  

দোকান থেকে বললো , স্টক আছে।  কালকে আবার আসুন।  রি-স্টক করতে সময় লাগছে।  

এই প্রথম যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি দেখলাম নিজের চোখে।  জীবনে সব কিছু দেখতে চাই এই যুদ্ধ আর ভূমিকম্প ছাড়া।  কিন্তু এ যুদ্ধের থেকে খুব একটা কম না।  এই দোকানের গল্প এখনো বাকি।  

Friday, March 20, 2020

#গো_করোনা_গো ( ৩ ) - ওয়ার্ক ফ্রম হোম ঘোষণা


আমার অফিস ম্যাসাচুসেটসে। অফিসে পৌঁছানোর আগে হঠাৎ করে সেদিন হোয়াটস্যাপ এ খবর এলো বায়োজেন কোম্পানিতে কাজ করে আমার এক পুরানো কলিগ খুব চাপে আছে।  বায়োজেন কনফারেন্স এ থাকা লোকজনের পর পর করোনা ভাইরাস ধরা পড়ছে।  কি চাপের ব্যাপার।  যদিও আমার অফিস বেশ কিছুটা দূরে বস্টন থেকে। কিন্ত চায়না থেকে যখন এখানে পর্যন্ত আসতে পেরেছে তাহলে গ্রেহাউন্ড ধরে অফিসে চলে আসতে বেশিক্ষন লাগবে না।    


সেদিন অফিসে প্রচন্ড চাপ ছিল বলে বিশেষ কিছু আলোচনা হয়নি।  কিন্তু পরের দিন লাঞ্চটাইমে ম্যাসাচুসেট একশো ছুঁয়ে গেলো।  আর আমাদের ফেটে চৌচির।  হঠাৎ করে দেখলাম অফিসে নানা জায়গায় ছোট ছোট জটলা। কান পেতে শুনতে পেলাম লোকজন বেশ ভয় পেয়ে আছে।  কি হবে কি হবে।  সবাই সবাই কে বলছে বাড়ি চলে যেতে আর গৃহবন্দী হয়ে থাকতে।  কিন্তু যতক্ষণ না পর্যন্ত ওপরওয়ালা বলছে ততক্ষন কিছুই হবে না।  

পরের দিন অফিসে এই ঘুসঘুসানি ফিসফিসানি বাড়তেই থাকলো।  দুপুরে লাঞ্চ ব্যাগটা তুলে ক্যান্টিনের দিকে এগোচ্ছি একজন কলিগ বললো , “ভাই আজ থেকে ডেস্কেই খাও। ” আমি বললাম,  “কেন “ সে একটা রীতিমতো মনোগ্রাহী পয়েন্ট বললো , “দ্যাখ মানছি বড় কোম্পানি সমস্ত পরিচ্ছন্নর দায়িত্ব নিচ্ছে। কিন্তু ক্যান্টিন সব সময়ই এই ছোঁয়াচে রোগের ডিপো।” 

ভাবলাম তাই তো।  জানিনা করোনা কতক্ষন বেঁচে থাকে কঠিন পদার্থের ওপর।  আর ক্যান্টিনে তো সবাই আসছে খাচ্ছে চলে যাচ্ছে।  আর পুছে দিয়ে যাচ্ছে নিজের খাবারের ন্যাপকিন দিয়ে।  কে কোথা থেকে আসছে।  কি ভাবে আসছে কেউ জানে না।  রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে লিখে যেত , “ অজানাকে খুব ভয় আমার এখন ওরে । ” 

ধীরে ধীরে জটলাগুলোতে লোকজন উত্তেজিত হতে দেখা গেলো।  কানাঘুঁষোয় শুনতে পেলাম যে হেলথ কোম্পানি হয়েও কেন ওয়ার্ক ফ্রম হোম দেওয়া হচ্ছে না বলে অনেকেই উত্তেজিত।  কিছুক্ষনের মধ্যেই দেখলাম জটলা গুলো হালকা হতে আরম্ভ করলো।  আমার ম্যানেজার দেখি ব্যাগ গোচ্ছাচ্ছে।  আমার দিকে ফিরে বললো , “ লাইফ ইস মোর ইম্পরট্যান্ট দ্যান এসক্যালেশান। ডু হোয়াটেভার ইওর হার্ট ওয়ান্টস।” আমার একটা মিটিং ছিল চারটে থেকে পাঁচটা।  সেটা না করে বেরোতে পারবো না।  

মিটিং রুমে আমি একা বসে থাকলাম।  সবাই কল এ জয়েন করলো।  মিটিং রুম থেকে দেখা যাচ্ছিলো , সবাই নিজের নিজের ডেস্ক এ বসে আছে।  আমি একবার বললামও যে আমি মিটিং রুমে বসে আছি।  কিন্তু কেউ শুনলেই না।  মিটিং যখন শেষের মুখে তখন হঠাৎ করে আরেকটা মিটিং নোটিশ এলো যে অন্য একটা কলে জয়েন করতে। 

কলে প্রায় দুশো লোক ছিল।  আমাদের ডাইরেক্টর ঘোষণা করলেন ওয়ার্ক ফ্রম হোম।  যতদিন না অবস্থার পরিবর্তন হয় সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হলো যেন সবাই ঘর থেকে কাজ করে। যেহেতু আমাদের হোয়াইট কলার জব।  তাই আমাদের সত্যি কোনো সমস্যা ছিল না।  আই টি তে যারা সার্ভার নিয়ে কাজ করে তারা ছাড়া বাকি সবাই বাড়ি থেকে কাজ করতে পারে যদি ইন্টারনেট থাকে।  

অফিস থেকে বেরিয়ে আসার সময় প্রত্যেক দিন একটা বুড়ি স্প্যানিশ মহিলা যে কফি কমন এরিয়া পরিষ্কার করে , সে আমাকে হাসি দিয়ে “হোলা” বলে।  সেদিন , কেমন একটা অস্বস্তি লাগলো।  এই হিস্পানিকরা দিন আনা দিন খাওয়া লোকজন।  আমরা তো না হয় ওয়ার্ক ফ্রম হোম করবো।  কিন্তু এদের কি হবে।  অতো বড় ক্যান্টিনের অতো ইনভেন্টরির কি হবে ? জানিনা।  

এরকম হাজার অজানা নিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রেডিও তে জানতে পারলাম আমেরিকার করোনা কেস ১৬০০ ছাড়িয়েছে।  ট্রাম্প ট্রাভেল ব্যান করেছে।  কুড়িহাজার ডলার দিয়ে টিকিট কেটে বিদেশে থাকা আমেরিকানরা ফিরে আসছে।  নিউ ইয়র্ক , ম্যাসাচুসেট , নিউ জার্সি , রোড আইল্যান্ড মানে কানেটিকাট ছাড়া সমস্ত নিউ ইংল্যান্ডে তীব্র গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা।  

বাড়িতে এসে প্রথমেই গিন্নি খবর দিলো স্কুল বন্ধ হওয়ার মেল্ চলে এসেছে।  ছেলেকে কি ডে কেয়ারে পাঠানো ঠিক হবে ? সপ্তাহের আর দু দিন বাকি।  ঠিক হলো এই দুদিন পাঠানো হোক, কারণ ডে কেয়ার তখনও বন্ধ হয়নি।  আর সাড়ে তিন বছরের শিশুকে ঘরে আটকে রাখা একটা বিষম ব্যাপার।  আর গিন্নির অফিস তখনও অফিসিয়ালি ডিক্লেয়ার করেনি ওয়ার্ক ফ্রম হোম।  তাই যেমন চলছে চলুক।  

#গো_করোনা_গো ( ২ ) - করোনার আক্রমণের কিছু আগে


ইরানের ডেপুটি হেলথ মিনিস্টারের খবরটা বেশ চিন্তাজনক ছিল।  কিন্তু তার থেকেও চিন্তাজনক ছিল আমেরিকায় হঠাৎ হঠাৎ উস্কে ওঠা রেসিজম নিয়ে আর এখনকার রেসিস্ট প্রেসিডেন্ট নিয়ে।  যেমন আরবরা এককালে সবাই তালিবান ছিল।  ঠিক এখন চাইনিসরা হঠাৎ করে সবাই ক্রনিক রুগী হয়ে উঠতে লাগলো।  সবাই চাইনিস দ্রব্য বহিস্কার করা আরম্ভ করে দিয়েছিলো।  তখনও আমেরিকাতে থাবা বসায়নি করোনা।  অথচ বাদুড়ের সুপ্ নিয়ে সবাই ভয়ঙ্কর ভাবে আলোচনা আরম্ভ করে দিয়েছিলো।  সেই চিরাচরিত “ They eat whatever walks ” আবার নতুন করে ফিরে এসেছিলো।  আর কারা বলছিলো? যারা গোবর খেয়ে প্রায়শ্চিত্ত করে। 

আমি পড়লাম গেরোতে।  পৃথিবীর অন্যপ্রান্তে কোনো একটা রোগে মানুষ মারা যাচ্ছে বলে , আমি আমার গিন্নির প্রিয় কুইসিন বিবাহ বার্ষিকীর দিনে পরিত্যাগ করবো।  কৈ ইবোলার সময় তো লঙ্কা খাওয়া বন্ধ করিনি। এখানে থাই চিলি বলে যে লঙ্কা সে আসলে আসে দক্ষিণ ও মধ্য আফ্রিকার দেশ গুলি থেকে। তা যতদিন আমার ঘরে আগুন না ধরছে , প্রতিবেশীর কানে “কু” করার কি দরকার আছে।  অনেক দিন ধরে প্ল্যান করেছিলাম বিবাহ বার্ষিকীর দিনে চাইনিস হটপট খেতে যাবো।  

দিনটা বেশ রিমঝিম রিমঝিম ঝুপঝুপ বৃষ্টির দিন ছিল।  ছুটি নিয়ে দুজনে ছেলেকে ডেকেয়ারে রেখে দিয়ে গেলাম খেতে সেজওয়ান হটপট।  দোকানে ঢুকে হাঁ।  পুরো খালি।  
যে কোনো জায়গা  খালি দেখলে ভূতের ভয় লাগে।  কিন্তু এখন "ভয়ের" ভয় লাগলো।  রেস্তোরাঁটি যথেষ্ট নাম করা।  কিন্ত সকলেই পরিত্যাগ করেছে, কয়েক দিনের জন্য।  দোকানের মালিক সাদরে আপ্যায়ন করে বসলো আর আমাদের সুন্দর করে পরিবেশন করলো।  এই ভুলভ্রান্তির শিকার হওয়া নাক বোঁচা চোখ কুৎ-কুৎ দের জন্য আমার "আহারে " বেরিয়ে এলো। 

আমার বেরোলে কি হবে।  পৃথিবী তখন কন্সপিরেসি থিওরিতে মজেছে।  নানা লোকে নানা কিছু বলছে।  হঠাৎ করে Dean Koontz er Eyes of Darkness এর একটা পাতা ভয়ঙ্কর ভাবে ভাইরাল হতে আরম্ভ করলো। জ্বলজ্বল করে লেখা আছে হুয়ান প্রদেশে বানানো ভাইরাস সমস্ত জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। 



আমরাই বা পেছনে পরে থাকবো কেন, হাজার হোক আমরা ভবিষ্যৎ আর  গ্রহ নক্ষত্র কন্ট্রোলে পৃথিবীর কাছে বিশ্বগুরু ( বিশ্বভাট !!) . তার ওপর ধর্ম যদি এই কঠিন সময়ে কিছু প্রমান না করতে পারে , তাহলে ধর্মর কাজ কি ? ত্রাহিমাম ত্রাহিমাম বলে দৌড়াবো আর জগন্নাথ বলবে এই যাহ ধরবো কি করে , তা বললে কি চলে।  মানুষ ভয় আর লোভের জন্যেই তো ভগবানের কাছে যায়। 


তাই শুরু হয়ে গেলো হিন্দুদের অবতারবাদ আর মুসলমানের আল্লার  আদেশ।  এদের দেয় কে জানিনা।  তবে এরা দেয়।  সময় হলেই ভোরে উঠে ভরে ভরে দেয়।  আল্লাহ রামের দয়ায় পড়াশুনা করেছি বলে এদের থেকে এখন WHO কে শুনি।  

হঠাৎ করে এক অদ্ভুত তত্ত্ব এলো যে চাইনিস পপুলেশন কমানোর জন্য নাকি এই ভাইরাস ছড়ানো হয়েছে। যে লোকগুলো ঘুম থেকে উঠে গাঁজা মারে তাদের পক্ষেই বলা সম্ভব।  এই কথাগুলো , কারণ যে দেশে কোটিতে পপুলেশন তাদের ৫ হাজার মেরে কি লাভ শুনি। এইসব ভুলভাল খবর বলার থেকে তাদের দশ দিনে হাসপাতাল বানানোর খবর ছড়ান না।  কাজে দেবে।  নিচে লিংক দিলাম।  


আপাতত থাক….. দেখি পরেরটা কবে লিখতে পারি।