Wednesday, December 30, 2020

আমিও একদা ( অনুবাদ : मैंने भी कभी - অনিমেষ চন্দ (মাহতাব))

 


Wednesday, September 30, 2020

শুভ বিজয়া - ২০২০

 


দর্পনে মুখ দেখতে পেয়ে , কাঙাল হৃদয় উঠলো বলে, সময় হলো মাগো এবার , এবার তুমি যাবে চলে।

ঘট নড়লো , নড়লো বেদী , মিষ্টিমুখে বিদায় বলে ,
সিঁদুরখেলায় রাঙিয়ে সিঁথি , এবার তুমি যাবে চলে।
এবার এলে মড়ক মাঝে , দোলায় চেপে , হেলে দুলে ,
মুখোশ পরে , ঝাপসা চোখে , তবুও দিলাম দুয়ার খুলে।
বন্ধ ঘরে , দরজা দিয়ে , ডুকরে কাঁদা বছরটাকে ,
পাঁচটি দিনের ঢাকের রবে কখন গেলাম পুরোই ভুলে।
বোধন থেকে সকাল হতে মণ্ডপে দিন কাটলো রোজ
সকাল বিকাল রাত্রিবেলা, নিত্য জমিয়ে মহাভোজ।
মুখোশ পরেই হাসি ঠাট্টা , জমিয়ে আড্ডা চারবেলা ,
ছাড়া পাওয়া সব, কচিকাঁচাদের দাপিয়ে বেড়ানো রোজ খেলা।
আর কিছু ক্ষণ পেরিয়ে যেতে বন্ধ হবে ঝাড়বাতি ,
আবার এসে ধরবে চেপে অন্ধকারের কাল রাতি।
মৃত্যুভরা আপনজনের বিদায় বিয়োগ চোখের জলে,
আজকে তোমার ভাসান হবে , নৌকা বয়ে যাবেই চলে।
থাকব পড়ে নরক মাঝে আর্তনাদের কোলাহলে ,
রক্তমাখা বাপের বাড়ি , ছেড়েই তুমি যাবে চলে।
বুকের ওপর চাপা পাথর আবার নিয়ে বুকের পরে ,
ভয়ার্ত হাত আগল দেবে , একলা চাপা নিজের ঘরে।
রুদ্ধশ্বাস বদ্ধ করে অপেক্ষাতে আরেক বছর ,
হবেই দেখা আবার মোদের এড়িয়ে মহাকালের আঁচড়।
মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র সহিত কথা দাও মাগো এবার তবে ,
সকল বাধা বন্ধ পেরিয়ে আসছে বছর আবার হবে।
শুভ বিজয়া - ৩১ অক্টবর ২০২০

Wednesday, June 17, 2020

ডট ডট ডট


আর না ঠিক নিতে পারছিলাম না এই "সাথে আছি " টাইপ পোস্ট গুলো।  অভিনেতার আত্মহননে "পাগলা" বা "খ্যাপা" দের জাতে তুলে দেওয়া হলো তো।  কি দরদ মানসিক রোগীদের প্রতি।  রোজ রোজ "রাঁচিতে চলে যা" , "মানকুণ্ডুর মাল নাকি " বলা মানুষগুলোর দরদ দেখে থ্যাক করে এক তাল থুতু ফেললাম , ওখানেই ডুবে মরুক সব। 

ডিপ্রেসন নিয়ে সমস্যা  আজকে নয়।  নার্ভ জনিত হাজার সমস্যার একটা প্রকার মাত্র।  কেউ সুস্থ হয় , কেউ ওষুধের ঠ্যাকনা নিয়ে সারা জীবন ব্লাডপ্রেসারের মতো বয়ে নিয়ে চলে এই রোগ।  এই রোগ আধা শারীরিক আধা সামাজিক।  যা সমাজগ্রাহ্য তা না করলেই তাকে কাউন্সিলিং করতে পাঠাও।  কেন ? যে বলেছে তাকে সহ্য করতে সেখানও উচিত।  ওই নার্ভ শিথিলের ওষুধ খেয়ে যখন রুগী ঘন্টার পর ঘন্টা মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা উঠে পরে থাকে এই ফেসবুকের বুকে কেউ জানতেও পারে না।  সেই মা টা , সেই ভাইটা , সেই বৌটা জানে এই ওষুধের কি কষ্ট। 

সাথে থাকলে পাশে থাকলে কিচ্ছু হয় না।  হলে এসাইলাম বা পাগলা গারদ তৈরী হতো না।  আর মেন্টাল এসাইলাম মানে জানেন , মানসিক বিকৃত দের আশ্রয় দেওয়ার জায়গা।  আর বলা কি হয় " পাগলা গারদ "।  হ্যাঁ এখনো বলা হয়। 

ঠিক যেমন কালো কাগজে ন্যাপকিন মুড়ে দেওয়া হয় ( এখনো ) , মানসিক রোগের ওষুধ এখনো লুকিয়ে কিনতে হয়।  জানতে পারলেই "ওই বাড়িতে পাগল আছে , কামড়ে দেবে " বলে প্রত্যেক সমস্যায় আঙ্গুল তোলা হয়। 

ডিপ্রেশন কি ভয়ঙ্কর রোগ জানেন ? জলের মতো দুটো লাইন বলি।  ডিপ্রেশনের বিপরীত হলো এগ্রেসন। সবার জীবনেই সমস্যা থাকে।  সেই সমস্যা কখনো নিজের তৈরী , কখনো অন্যের।  কিন্তু যারা সবকিছুতেই মনে করে অন্যের দোষ , তার রোগ এগ্রেশন।  আর যে সব কিছুতেই নিজের দোষ দেখে তার ডিপ্রেশন।  এগ্রেশনে তোমার পারিপার্শিক মারা পরে , কিন্তু তুমি বেঁচে যাও।  আর ডিপ্রেশনে তুমি মরে যাবে , পারিপার্শিকের কলা।  এই এত্ত বড় মর্তমান কলা।  তুমি চ্যাঁচাতে পারো না , তাই তোমার ডিপ্রেশনে সুইসাইড করাই উচিত।  আমরা ফেসবুকে আহা উহু করে কাঁধ টাধ দিয়ে "উঁহু" পাগলা মেয়ে বিয়ে করবো না বলে সাইড কাটাবো। 

 
যারা পোস্ট করছেন তাদের জন্য বলছি।  বিশ্বাস করুন , আপনি পারবেন।  এই অবসাদে পরে থাকা মানুষগুলোকে আলো দেখাতে।  শুধু বালবিচি না বকে।  কাঁধ না এগিয়ে দিয়ে , সাইকোলজিস্ট আর সাইকিয়াট্রিস্ট এর মধ্যে তফাৎ টা একটু পরে দেখুন। আপনি জানলেই হবে।  জানাতে হবে না।  যারা এই রোগের শিকার হয়ে কালো প্লাস্টিক থেকে বার করে ওষুধ খায় তারা অবসাদ থেকে বেরিয়ে আসবে।  পাগলা , খ্যাপা , স্ক্রু ঢিলা , নাট খসা  - এসব থামিয়ে দিলেই তারা সাধারণ দোকান থেকেই ওষুধ  কিনবে।  নিজের শহর থেকে দূরে গিয়ে গাঁজার কাউন্টারের মতো দোকান থেকে ওষুধ কিনবে না। 


কিন্তু আপনি পারবেন না।  কেউ পারবেন না।  কারণ এরা খোরাক।  এদের পরিবার বাদ দিয়ে সবাই এদের নাচিয়ে আনন্দ পায়।  পাগলা চুলকে নে বলে সিরিয়াল হিট করায়।  আর তাতেই এরা ঝুলে পরে।  হ্যাঁ ঠিক এটাই কেস।  আমি এগুলোকে খারাপ ভালো বলছি না।  শুধু ফুটেজ খাওয়ার ন্যাকামো নিয়ে বলছি।  পাগলা বা মানসিক রুগীরা ওষুধ খেলে আপনাদের পাগলাই ভাবে। 

anjana anjani র পর এক দশক কেটে গেছে।  আর ফেসবুকে দুঃখ পাবেন না।  এর আগেও সহস্র বছর  কেটে গেছে মানুষ বদলায়নি।  শুধু  হাত জোর করে মিনতি করছি , এই রোগ খুন , ধর্ষণ,  হিন্দু , মুসলিম , বিজেপি , সিপিএম , কংগ্রেসের মতো মুখরোচক নয় , কুম্ভীপাকে দুগ্ধে দগ্ধে একাকিত্বে নিজেকে দোষ  দিয়ে গোটা জীবন কাটানোর মতো ভয়ঙ্কর রোগ।  চুপ থাকুন , নয় তাদের কাছে  গিয়ে বলুন যারা মুখ বেঁকিয়ে বসে আছে "পাগলা গারদে "।

সেলফি তুলে পোস্ট দিয়ে ভুলবেন না যেন। 



<a href="https://www.template.net/editable/magazines">Magazines</a>

Saturday, May 9, 2020

#গো_করোনা_গো ( ২০ ) - আনসাং হিরোস



unsung heroes - কথাটা এলে এদের নাম কেউ নেয় না।  কারণ এরা প্রাণ বাঁচায় না।  জীবন বাঁচায়।  করোনার প্রকোপে গৃহবন্দী কোটি কোটি মানুষ এই মৃত্যুঞ্জয়ীদের চরণ চুমে না।  বরঞ্চ তাদের কপালে জোটে গালাগালি।  কারণ এদের নাম নেই।  নেই এদের একক প্রচেষ্টার কোনো মূল্য।  এই গোষ্ঠী যা মানুষের মনে ঢুকিয়ে দিয়েছে মনুষ্যত্ব লোপ পাওয়ার ভয়। সেই গোষ্ঠী যাদের কারণে মানুষ মানুষকে ভুলে যন্ত্রের দাস  হয়ে গেছে।  সেই টেকনোলজির মানুষগুলির গান কেউ গায় না।  

করোনা মৃত্যুদূত।  তাদের সাথে সাদা কালো যুদ্ধে লড়ছে ডাক্তার রা। আর টেকনোলজি লড়ছে তাদের জন্য যারা ঘরে বন্দী , অথচ মৃত বা আহত নয়।  মানুষকে মনে করিয়ে দিচ্ছে এখনো তারা মানুষ, এবং তারা মানুষই থাকবে।  

মানুষ এখনো মারা যায়নি।  মরতে দেয়নি এই প্রযুক্তিবিদ্যা।  ঘরে বন্দী থেকে অনলাইনে চলছে অর্ডার।  বাড়িতে আসছে খাবার।  ধরে নিন সেই দিনগুলির কথা, যেদিন ইন্টারনেট নেই।  নেই ফোন।  আছে করোনা।  আর আপনি গৃহবন্দী।  বাইরে পুলিশের লাঠি , নয় মারণ ভাইরাসের কামড়।  ভেবেছেন কখনো স্প্যানিশ ফ্লু তে লকডাউন না হয়ে ছাতারের মতো মানুষ কেন মরেছিল।  শুধু টেকনোলজি ছিল না বলে।  

বৃদ্ধ বাবা মা কে রেখে মোটে তিরিশ কিলোমিটার দূরে থাকা মানুষ গুলোর ছটফটানি থামছে ভিডিও চ্যাটে।  পঞ্চেন্দ্রিয়র অন্তত দুটো ইন্দ্রিয়ের পরিতুষ্টির দায়িত্ব নিয়েছে এই টেকনোলজি।  দুই দেশে আটকে পড়া মানুষগুলো বলছে , “মা , বেরিও না বাইরে।  আমি অনলাইনে অর্ডার করে দিচ্ছি।” 

ঘরে বন্দী থেকে কিচ্ছু করার নেই বলে আতিয়ে পড়া মানুষ আজ “বোকাবাক্স” নাম দেওয়া যন্ত্রের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।  দেখছে সেই সুন্দর দিনগুলোর কথা।  মনে রাখছে সেও মানুষ।  সরাসরি রাষ্ট্রনায়কদের কথা শুনছে।  শুনছে বিশ্বব্যাপী তান্ডবের কথা।  কখনো ভেবেছেন কি ভাবে এ সব সম্ভব।  

কখনো ভেবেছেন ওয়্যারলেস  কিন্তু আদপে তারে তারে সংসযোগ।  আপনার জন্য কেউ টাওয়ারে চড়ছে শুধু এক এন্টেনা থেকে আরেক এন্টেনার পনেরো ডিগ্রি এঙ্গেল ম্যাপ রাখতে। ঝড় জলের শেষে পাওয়ার কাটে বিরক্ত হয়ে “ধুর শালা” র পর যখন কারেন্ট আসে তখন ইলেকট্রিক টাওয়ারে ওঠা ছেলেটার কথা কি কখনো মনে করেন।  ঠিক সেরকম ভাবেই আজ ধন্যবাদ পায়না সেই মানুষগুলোর কথা যারা আজও প্রাণ হাতে করে রাউটার রুমে বসে আছে যাতে আপনার অর্ডার পৌঁছে যায় দোকানগুলোর কাছে।  জানেন তো সেন্ট্রালাইজড এয়ার কন্ডিশনে করোনা তাড়াতাড়ি ছড়াচ্ছে।  

দিব্যি লাগছে অনেকের ওয়ার্ক ফ্রম হোম।  বাস ট্রামে ধাক্কাধাক্কি নেই।  নেই চ্যাঁচামেচি চিৎকার।  আছে শুধু ল্যাপটপ আর ইন্টারনেট।  হয়ে যাচ্ছে কাজ।  বাড়িতে বসেই জগৎ কাঁপাচ্ছে মানুষ।  কনফারেন্স কলে বাড়ি দেখা যাচ্ছে বলে হা হুতাশ করছেন। আর প্রাইভেসি চলে যাচ্ছে বলে বাপ বাপান্ত করছেন।  তাদের বলে রাখি , যেহেতু আপনি আপনার ডেটা শেয়ার করছেন তাই কোম্পানি আপনাকে এলাউ করছে ওয়ার্ক ফ্রম হোম করার।  নাহলে আপনি ডেটা বিক্রি করতে পারতেন যে কোনো ভাবে।  যা যেকোনো কোম্পানির কাম্য নয়।  

এই টেকনোলজি জায়েন্টরা এই সমস্যার দিনে ফুলে ফেঁপে উঠছে বলে সবার লালামিশ্রিত ঘেন্না বাড়ছে বড়লোকদের প্রতি।  কিন্তু শুধু এই কোম্পানিগুলো কোনো না কোনো সময়ে জল কাদা বৃষ্টির কষ্ট ত্যাগ করে সমুদ্রের তলায় , পাহাড়ের ওপরে , মাটির নিচে বিশাল বড় বড় ডেটা সেন্টার বানিয়েছিলো বলে আজকে আমি আপনি ঘর নামক জেলে বন্দি হয়ে পেনের শিস চোখে ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করছি না ,  বরঞ্চ  নেটফ্লিক্স এন্ড ছিল করছি।  

মাসের পর মাস বন্ধ থাকা স্কুল খুলে যাচ্ছে অনলাইন এডুকেশনে।  প্রাইভেট টিউটর রা ক্লাস নিচ্ছে ভিডিও চ্যাটে।  হোম ওয়ার্ক আসছে পিডিএফ এ আর প্রিন্ট করে সেটাই হচ্ছে ক্লাস।  আপনার আমার বাড়ি কখনো হয়ে যাচ্ছে স্কুল , কখনো কলেজ , কখনো অফিস কখনো দোকান।  হ্যাঁ হ্যাঁ দোকান ও।  সেলাই মেশিন নিয়ে মাস্ক বানিয়ে বিক্রি কি আগে করতে পারতেন।  ফেসবুকে টুক করে এড বানিয়ে হাজার হাজার ডেলিভারির অর্ডার কি কখনো আগে পেতেন।  ঘরে বসে ফ্রি টাইমে বানানো আর্ট এখন লোকে বিক্রিও করছে।  আর ইন্টারনেট কে গালাগালিও। দিচ্ছে, তাদের প্রাইভেসি শেষ করে দেওয়ার জন্য।  

সব কথার শেষ কথা, এই পুরো দক্ষযজ্ঞে ইন্টারনেট বা কম্পিউটার সম্পর্কিত তথ্যপ্রযুক্তির কোনো কালো হাত নেই।  অথচ সবথেকে বেশি অর্থনৈতিক ডোনেশন তাদের হাত দিয়েই পেয়েছে পৃথিবী।  পয়সা দিয়ে , সার্ভিস দিয়ে , শান্তি দিয়ে মানুষকে মানুষ করে রেখেছে এই তথ্য প্রযুক্তি । শুধু এই ইনফ্রাস্ট্রাকচার বাঁচিয়ে রাখতে, এই পরিষেবা দিতে , বেশ কিছু মানুষ প্রাণ দিয়েছে , শুধু অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে।  এই ছোট্ট সময়ে , এতো বড় দক্ষ যজ্ঞ সম্পন্ন করতে আহুতি দেওয়া হয়েছে।  নাঃ তারা পি পি ই পায়নি।  

থাক, আর বললাম না।  নিয়মমতো , “হোয়াটস ইন ইট ফর মি।” আমার বেঁচে থাকার জন্য আজ এদের অবদান আমি অন্তত অস্বীকার করতে পারবো না।  তাই বলি , 
“এই মৃত্যুঞ্জয়ীদের চরণ চুমি , 
যারা জীর্ণ মলিন মুখে জাগালো ভাষা , 
জীর্ণ জাতির প্রাণে জাগালো আশা। …… ”           

#গো_করোনা_গো ( ১9 ) - আজ পর্যন্ত। .......




 #গো_করোনা_গো ( ১9 ) - আজ পর্যন্ত। ....... 

-- আজ পঁয়তাল্লিশ  দিন গৃহবন্দী ( মাঝে মাঝে গ্রসারি ) 
-- আমেরিকায় আটষট্টি হাজার লোক মারা গেছে করোনায় আর বিশ্বে আড়াই লক্ষ আর দেশে মারা গেছেন দু পাঁচজন। 
-- বাইরে মাস্ক ছাড়া বেরোনো আইনত অপরাধ তাই জাঙ্গিয়া মুখে পরেও লোকে বেরোচ্ছে 
-- লাল বাঁদরের মতো দেশে পেছন লাল করে মানুষ ঘুরছে 
-- লাল জোনে যে শহর গুলোর নাম পড়েছে তারা সবুজ জোনের মদের দোকান খোলা দেখে রেগে লাল হয়ে গেছে।   
-- জটলা দেখলেই রাজনীতির গন্ধ পেয়ে ছুটে যাচ্ছে সোশ্যাল পুলিশ , খ্যাঁক খ্যাঁক করলেই বলছে আমরা কি চা খাবো না ? 
-- মানুষ এখনো মনে করছে তাদের ভগবানে বাঁচাবে 
-- রমজানের চাঁদ দেখে শেরি করতে বাড়িতে বাড়িতে হচ্ছে ভিয়ান 
-- ওপাড়ার মামনি এপাড়ার চাঁদুকে চুমু না খেয়ে আজও ঘুমোতে পারছে না। .. ফ্লাইং কিস 
-- তেইশ ডিগ্ৰীৱ ওপরে না বাঁচা ভাইরাস চল্লিশ ডিগ্রিতে লোককে নাকানি চোবানি খাওয়াচ্ছে 
-- দান করে সেলফি তুলছে লোকে , থ্যাঙ্কু না বললে থাপ্পড় 
-- কাঁসর ঘন্টার জায়গায় থালা বাজিয়ে মিছিল বার করা জনতার রোডিস এ আর কোনো টাস্ক দিচ্ছে না সুপারম্যান 
-- ব্লিচ শরীরে ইনজেক্ট করলে ঠিক কি হবে তা নিয়ে চলছে গবেষণা 
-- বন্দুক উঁচিয়ে সব খুলে দেওয়ার জন্য জনতা নেমেছে রাস্তায় 
-- মদ পাচ্ছে না বলে দেশের অর্থনীতি খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছে দেশবাসী 
-- মদ পাচ্ছে বলে আমেরিকায় সবার নাক লাল 
-- সবাই রাঁধছে ও খাবারের ছবি দিচ্ছে ( সাজানোর চক্করে খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে) 
-- ঘরে বসে খেয়ে খেয়ে ওজন বৃদ্ধি হচ্ছে আর হাঁটুতে সমস্যা বাড়ছে 
-- ওয়ার্ক ফ্রম হোম থাকলেও ভয়ঙ্কর সক্রিয় মানুষ হোয়াটস্যাপ ফেসবুকে 
-- চিকেন চাউমিন চিলি ফিস খেতে খেতে চাইনিস মোবাইলে চাইনিস দ্রব্য বয়কট করার আর্জি জানাচ্ছে সবাই 
-- দিনান্তে সবাই সবাইকে পরিষ্কার থাকার জ্ঞান দিচ্ছে 
-- গরিবের কি হবে সেই বুক ফাটা আর্তনাদ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে ফেসবুকে 
-- সবাই হাতে বাইনোকুলার নিয়ে বসে আছে 
-- ঝাড়ি মারা আর টোন টিটকিরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য নারীবাদ আপাতত গুটিয়ে আছে 
-- সমস্ত ইসম আর বাদ আপাতত বাদ দিয়ে সবাই বাড়িতে বৌয়ের ঝাড় খাচ্ছে 
-- ঘরে ঘরে চলছে প্রস্তুতি ডিভোর্সের 
-- বারান্দার টাইম ল্যাপ্স ভিডিওতে একটু ধুলো পর্যন্ত নড়ছে না 
-- রাস্তা ঘাটে দইওয়ালার ঘুরে বেড়াচ্ছে আর অমল বসে আছে জানলা ধরে 
-- আমেরিকাতে বসন্ত এসে গেছে বলে স্প্রিং ব্রেকে ফ্লোরিডায় বিকিনি ধরতে করোনা ছুঁড়ে মারছে সবাই 
-- বনগাঁ লোকালের ডেলিপ্যাসেঞ্জার ওয়ার্ক ফ্রম হোম পেয়ে স্টেটাস দিচ্ছে "বোরড লাইক হেল " 
-- ওজোনের ফুটো বন্ধ হয়ে গেছে 
-- স্যানিটাইজার এখনো পাওয়া যাচ্ছে না কারণ অনেকেই চরণামৃত করে খাচ্ছেন 
-- বাথরুম টিসু নিয়ে ফুটবল খেলছেন মানুষ আর কিছু লোক গু নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন 
-- যদি হঠাৎ কালকে প্রতিষেধক বেরিয়ে যায় , সবাই ছোট ছোট ঘুমটি খুলতে পারে বাড়ির ব্যালকনিতে 
-- হাত ধুয়ে ধুয়ে হাতে হাজা হয়ে গেছে কিন্তু ওষুধ নিতে গেলেই করোনা ধরবে 
-- সব স্কুল পড়ুয়া পাস্ করে গেছে আর বাবা মা রা বাঁশ খেয়ে গেছে 
-- যারা গায়ক নয় তারা গাইছে , যারা বাদ্যকার নয় তারা বাজাচ্ছে আর যারা লেখক নয় তারা আমার মতো লিখে সময় নষ্ট করছে আর হ্যাজাচ্ছে। ............ 

#গো_করোনা_গো ( ১৮ ) - বসন্ত এসে গেছে !!!

#গো_করোনা_গো ( ১৮ ) - বসন্ত এসে গেছে  !!!
 
 আজ হোক না রং ফ্যাকাশে তোমার আমার আকাশে , 
 চাঁদের হাসি যতই হোক না ক্লান্ত।  
 বৃষ্টি নামুক নাই বা নামুক ঝড় উঠুক নাই বা উঠুক 
 আজ বসন্ত। …… 
 
 মনের আকাশে সত্যি রং বড্ড ফ্যাকাশে। ঘরের বাইরে পরে থাকা মন এখন বাধ্য ঘরের বাঁধনে। প্রাণ হাতে নিয়ে বাইরে বেরোনো আর নিঃস্বাস আটকে ফিরে আসা এখন জীবনের অঙ্গ।  টিভি , ল্যাপটপ আর ট্যাবলেটে ধ্বসে যাওয়া আউটডোরের আনন্দ রিওয়াইন্ড করে দেখতে দেখতে আর কত দিন কাটানো যায়।  
 
 গত সেপ্টেম্বরে হঠাৎ শুরু হয়েছিল জিকা ভাইরাসের নাটক।  মশার কামড় থেকে নিজেকে বাঁচাতে সেই ঘরে বন্দি হয়ে গেছিলাম।  তারপর শীত আর বাধ্যতামূলক মনের  শীতঘুম। কিন্তু আজ বসন্ত।  
 
মানুষ যে ভাবে প্রকৃতির অপচয় করেছে , আজ প্রকৃতি জানলার বাইরে মেলে দিয়েছে রূপ আর বলছে , “দ্যাখ কেমন লাগে। ” ঘাস হয়েছে সবুজ।  ফুটে উঠছে ড্যান্ডেলায়ন।  শুকনো ডালে গজাচ্ছে নতুন পাতা। গোলাপি চেরি ব্লসম আর সাদা আপেল ব্লসম এর শেষে এখন হালকা সবুজ গাঢ় সবুজের খেলা।  অবাধ সূর্যের ঔদ্ধত্ব রুখতে এখন মুখিয়ে উঠেছে কচি পাতা।  দু হাত বাড়িয়ে শুষে নিচ্ছে সূর্যালোক , আর স্বাধীনতাকামি মানুষগুলোর বুভুক্ষ হৃদয়ে জেগে উঠছে হিংসা।  কি সুন্দর আজ প্রকৃতি।  

শীতে উত্তর আমেরিকার রুক্ষ ছবি এতটাই রুক্ষ যে ক্যামেরাতে ধরা পরে শুধুই সাদা কালো ছবি।  দশটা পোশাক চাপিয়ে ভালুকের মতো কাটানো বছরের অর্ধেক সময় থেকে বেরিয়ে আজ উদ্দাম নগ্ন নৃত্য করতে ইচ্ছা করে মন।  হিটারের শুকনো হাওয়ায় ঢোক গিলে হিউমিডিফায়ার চালিয়ে নাক দিয়ে বেরিয়ে আসা রক্ত কে বন্ধ করতে হয় সারাটা শীত।  তারপর বৃষ্টির ভিজে ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে সময় পেরিয়ে যখন বসন্তের হাওয়া এসে শরীরকে শরীর বানায় তখন ভেঙে যাওয়া শরীর আবার বাঁচতে চায়।  

সবুজ ঘাসে পা দিয়ে চলতে চলতে , নাম না জানা আগাছার লাল নীল ফুলের নাম দিতে দিতে, প্রথম গাছ বসায় মানুষ।  শহরের ব্যালকনি , সাবারব এর ছোট্ট ফ্লাওয়ার বেড , গ্রামের ব্যাকিয়ার্ড সাজানোর সময় শুরু হয়।  পাখির আওয়াজ বাড়তে থাকে।  আর আসে হামিং বার্ড।  চিনিগোলা জল দিয়ে তাদের ডেকে আনা হয় প্যাটিওতে।  কিচির মিচির করে দৌড়ে বেড়ায় কাঠবিড়ালি আর খরগোশের ছানা।  ট্রাফিক আটকে  পার হয় ক্যানাডিয়ান গুস আর গোল বলের মতো ছোট ছোট গুসলিং। ফাঁকা মাঠে মাটি ফুঁড়ে ওঠা কেঁচো খেতে মাঠে ভিড় করে রবিন , ফিঞ্চ , চড়ুই আর মার্টিনের দল।  আর তাদের কিচির মিচিরের সাথে শুনতে পাওয়া যায় খিল খিল করে হাসতে থাকা শিশুদের খেলার শব্দ।  

আজ সবই বন্ধ। নানা সব নয়।  মানুষগুলো। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে গরম নিঃস্বাস বাতাসে মিলিয়ে দিয়ে শান্ত হয় আবার ইউটিউব , নেটফ্লিক্সে ফিরে আসছে মানুষ।  পাখি পাখির মতো উড়ছে , গাছে গাছে ফুল ফুটছে , গরম হয়েছে বাতাস।  ম্যাগনোলিয়ার গন্ধে ম ম করছে বাতাস।  বসন্ত তার মতো পাখনা মেলছে আর মানুষ গুটিয়ে নিয়েছে মনের পাখনা।        

Sunday, April 19, 2020

#গো_করোনা_গো (১৭) - শিশু যখন গৃহবন্দী

বাইরে জমে থাকা বরফ গলে গেছে অনেক দিন।  সকালে পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে।  কোকিল তো এখানে ডাকে না।  কিন্তু বসন্তের পাখি অনেক আছে।  তারাই গাইছে।  স্নো বুট ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে।  জ্যাকেটও এখন পাতলা।  লনে গজিয়েছে ঘাস।  এখন বাচ্চাদের বেরিয়ে আসার সময়।  তারা বেরিয়ে আসবে দলে দলে।  মাঠে ঘাটে পিল পিল করে ভিড় জমাবে।  খেলবে , কাদা মাখবে , ঘামে চপচপে হয়ে বাড়ি ফিরবে লাল টমেটো হয়ে।  প্রতি উইকেন্ড এ হবে নানা টুর।  বাবা মা কে বগলে নিয়ে ঘুরতে যাবেন মহাশয়রা।  চড়বেন পাহাড় , পুঁতবেন গাছ।  আরো কত কি।  কিন্তু এ বছর হয়তো আর কিচ্ছু হবে না।  

আমার ছেলে এখন ফাঁকা কমিউনিটি তে ডেলিভারি গাড়ি থেকে বেরোনো লোকেদের দেখলেই ঘরের ভেতর থেকে চিৎকার করে , “হ্যালো - ও -ও ও। …….হ্যালো - ও -ও ও ” উত্তর আসেনা।  সে সামনের মাসে চারে পড়বে।  তার এখন সাংঘাতিক ছুটে বেড়ানোর সময়।  আর সে মানুষ ভালোবাসে।  দূর থেকে বাচাদের কলরব শুনে “চিলফ্রেন চিলফ্রেন ” ( ফ্রেন্ড আর চিলড্রেন একসাথে) বলে দৌড়ে যেতে চায়।  কিন্তু সে পারেনা।  

কি অসহায় অবস্থা।  নতুন স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর তার দুটো স্কুল ছিল।  একটা ডে কেয়ার , একটা স্কুল।  তার চারপাশে ছিল প্রচুর মানুষ।  নানা রঙের , নানা বৈচিত্রের নানা কর্মকান্ডের মানুষ।  এখন তার হাতে শুধু বাবা আর মা , আর দুজনেই কর্মরত।  তাদের ওয়ার্ক ফ্রম হোমে বাধা দিলেই জুটছে কপালে চিৎকার।  বেরিয়ে আসছে কান্না।  অপরাধবোধে জড়িয়ে থাকা আদরের কিছু মুহূর্ত বাদ দিয়ে কিই বা তারা দিতে পারে। এবার তার দাদু দিদা , ঠাম্মা -দাদুর কাছে যাওয়ার কথা ছিল , তারাও এখনো সেই ফোন বন্দী।  রোজ যখন কথা হয় , তখন তাদের দুশ্চিন্তা ভরা মুখ দেয়না তাকে আনন্দ।    

তার ছিল রাশি রাশি খেলনা।  না বাড়িতে নয়।  যেহেতু সেও বড়দের মতো অফিস করে।  তার দুই স্কুলে ছিল ভর্তি ভর্তি খেলার সামগ্রী।  আমাদের পক্ষে সেই খেলনার সমকক্ষ খেলনা কেনা অসম্ভব।  তার ছিল বল পিট্।  সেখানে গিয়ে সে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারতো। তার ছিল বিশাল বড় বড় প্লে এরিয়া।  যেখানে স্লাইড করতে পারতো , দোলনা চড়তে পারতো।  আর পারতো ছুটে বেড়াতে।  তার কাছে এখন একটা ছোট্ট স্লাইড।  যেটাতে সে আঁটে না।  কিন্তু তাই দিয়েই চলছে।  একা একাই।   লাইন নেই , দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার ব্যাপার নেই।  নেই বন্ধুদের সাথে দৌড়ানোর ব্যবস্থা।  আছে বাবা , ছুঁড়ে দিচ্ছে বল, আর ডুবে যাচ্ছে মোবাইল নয়তো ল্যাপটপে।  

তার পছন্দ ছিল বই।  একের পর এক বই নিয়ে আসতো বাবা।  লাইব্রেরি থেকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত কুড়িটা করে নানা রঙের বই এসে হাজির হতো তার ঘরে।  বাবা অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত শরীরে একের পর এক বই পরে যেত তার কানের কাছে।  কিন্তু এখন লাইব্রেরি বন্ধ , নতুন বই আর আসছে না।  সেই পুরানো বই নিয়েই নাড়া ঘাঁটা।  এই এক মাসে সব মুখস্ত হয়ে গেছে।  

তার স্কুলে ছিল আর্ট টাইমের নোংরা করার আনন্দ।  কৌটো কৌটো রং , মুঠো মুঠো রং পেন্সিল, হাজার হাজার ডু ইট ইওরসেল্ফ একটিভিটি।  গায়ে এপ্রোন পরে দু হাত রঙে চুবিয়ে ছাপ দিতো সে সাদা কাগজের ওপর।  আজ একটা রঙের ডিবি থেকে একটু রং বার করে একটু খেলার পরেই তাকে ক্লিন করতে হয়।  কড়া নজর , কার্পেটে না পরে। 

যেহেতু মাঠে খেলতে পারবে না তাই মাঝে মাঝে গাড়িতে চাপিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি ফাঁকা রাস্তায়।  মুখ থেকে দীর্ঘশ্বাসের পর বেরিয়ে আসে , “নো স্কুল , নো পিপল , নো ফ্রেন্ডস।” কিছুক্ষনের মধ্যেই গাড়ির দুলুনি তে ঘুম এসে যায়।  সিটবেল্ট বাঁধা শরীরটা গভীর ঘুমে ঢুলে পড়ে।  চোখ খুলতে আবার সেই বন্ধ ঘর।  

মাঝে মাঝে কমিউনিটিতে হাঁটতে নিয়ে গেলে , হঠাৎ করে চোখে পড়া মানুষের দিকে দৌড়ে যায়।  “হাই” বলতে চায়।  কিন্তু চেপে ধরে থাকি হাতটা , যদি ছুটে গিয়ে ছুঁয়ে দেয়। বুকের ভেতরটা ডুকরে কেঁদে ওঠে , কিন্ত কিছু করার নেই।  

আগে ছিল বাবা মার্ সাথে সপ্তাহান্তে বাজার করতে যাওয়া।  ওয়ালমার্টের আইলে আইলে বসে থাকা মেলার মধ্যে ছুটে বেড়ানো আর রেজিস্টার কাউন্টারের ওপরে লেখা নাম্বার গোনার খেলা।  এখন তার দোকানে যাওয়া বারণ।  এমনকি দোকান থেকে ফেরার পর বাবা মার কাছে যাওয়া বারণ।  জিনিসপত্রে হাত দেওয়া বারণ।  শুধু বারণ আর বারণ।  

স্ক্রীনটাইম নিয়ে এতো তোলপাড়ের পর, এখন সবাই নীরবে বাড়িয়ে দিচ্ছে তাদের ট্যাবলেট বা ফোন।  ঘাড় ঝুঁকে যাচ্ছে মিকি , মিনি , ডিজনি আর মোবাইল গেমের মধ্যে।  স্কুল থেকে পাঠানো হচ্ছে নানা এক্টিভিটির খবর।  কিন্তু বেশির ভাগ অনলাইন নয়তো বাবা মা কে সঙ্গে নিয়ে বসতে হচ্ছে।  আর বাবা মা অফিসের সাথে তাল মেলাতে খিঁচিয়ে যাচ্ছে।  আগে মাঝে মধ্যে ব্লাঙ্কেট জড়িয়ে বসে থাকা মুভি নাইট এখন আর হচ্ছে না। কারণ খালি সময়ে সবাই চেষ্টা করছে যাতে টিভি ইন্টারনেট ছাড়া অন্য যদি কিছু করা যায়।  

দরজার বাইরে ছুটে যাচ্ছে কাঠ্বেরালি , উড়ে যাচ্ছে পাখি , দৌড়ে বেড়াচ্ছে খরগোশের দল।  কিন্ত তার পেছনে ছোটার জন্য দরজা আর খুলছে না।  নরম ঘাস কচি পায়ে সুড়সুড়ি দেওয়ার বদলে এক নিশিডাকা হাতছানির মতো দুলে যাচ্ছে।  ফুটছে ড্যান্ডেলায়ন , সবুজ পাতা আসছে গাছে।  চেরি ব্লসম , আপেল ব্লসমে সাদা , হয়ে যাচ্ছে গাছগাছালি  কিন্তু ছোট্ট মানুষটা আর বিকশিত হচ্ছে না।  

স্কুল বন্ধ থাকবে এই পুরো স্কুল ইয়ারটা , মানে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।  ডে কেয়ারও খুলবে না।  খুললেও হয়তো আমরা পাঠাবো না।  একাকিত্বে কেটে যাবে একটা বড় সময়।  জীবন মানুষ একবারই পায়।  শৈশব , কৈশোর , যৌবন সবই মানুষ একবারই পায়।  একটার সাফল্যের ছাপ আরেক জীবনে এসে পরে।  জানিনা এই শিশুদের পরবর্তী জীবন কেমন হবে।  যুদ্ধের সময়ের বছরের পর বছর এই লকডাউনে বসে থাকা শিশুগুলোর ওপর পরবর্তীকালে এসেছিলো মানসিক বিকৃতি।  জানিনা , এরাও কোনো কিছুর শিকার হবে কি না।  

শেষ হোক এই বন্দী দশা এই কামনা করি।  

Sunday, April 12, 2020

#গো_করোনা_গো ( ১৬) - করোনায় কেশ ও না

 
 
ঘর থেকে বেরোবিনা।  এক্কেবারে বেরোবিনা।  সবার থেকে দূরে দূরে থাকবি।  ছ ফুট দূরত্বে।  এহঃ , প্রেম। ওসব দেখা টেখা , চুমু টুমু সব মুলতুবি, মাস্ক পরে কি আর চুমু হয়।  ভেবে নে , এক বছরের অশৌচ।  ওই দোকানদারের প্রেমে পড়েছিস নাকি।  সারা পৃথিবীতে লোক মরছে , আর তুই পঞ্চব্যঞ্জনের জন্য হেদিয়ে পড়ছিস।  দু দিন ডাল ভাত খেয়ে থাক।  টাটকা সবজি টবজি না খেলেই নয়।  বেশি সবজি খেলে হাগা হয়।  ডাল ভাত খা।  স্টোর করে রাখ।  যেখানে যা পাচ্ছিস নিংড়ে খা।  অতো নন ভেজ খাবার কি আছে। নিউট্রেলা খা।  

কিন্তু মাসি তখন থেকে শুধু খাবার আর প্রেমের কথা বলে চলেছো। আমি বলছি চুলের কথা।  মানুষের সংস্পর্শে যাবো না, তার হাজার পন্থা আছে।  কিন্ত নিজের চুল নিজে কাটি কি করে।   

মাস খানেক গৃহবন্দীর পর এই প্রশ্নে অখণ্ড নীরবতা পালন।  

অঙ্ক কষে দেখেছি , কদমফুল থেকে পাখির বাসা হতে আমার পাক্কা তেত্রিশ দিন লাগে।  যেদিন থেকে ঘরে খিল মেরেছি তবে থেকে এই চিন্তা মাথার মধ্যে উকুনের মতো ঘুরে চলেছে।  নিজ প্রশ্নের উত্তর নিজেই দিয়ে নিজেই পিঠ চাপড়ালাম , “দাড়ি কাটার ট্রিমার চালিয়ে উড়িয়ে দিই।” 

একেতেই বাড়িতে বসে থাকতে থাকতে মাথা গরম হয়ে আছে।  চুল বাড়লে আরো গরম হবে। হতে হতে না হওয়া ডিভোর্স হয়তো আজই হয়ে যাবে। আর সবথেকে বাজে ব্যাপার আমার চুলে কিছুতেই স্টাইল নামক কিছু করা যায়না।  লোকে এই সুযোগে নানা স্টাইলের চুল বাড়িয়ে ফেলবে।  কিন্ত আমার শুয়োরের কুঁচির মতো চুলে গুটলি পাকানো ছাড়া কিছুই হবে না।  শুধু সুন্দরীরা যখন চুল কাটে তখন কমপ্লিমেন্ট দেয় , যে এই টেকোদের নরকে আমি শক্ত চুলের ইন্দ্র।  কিন্তু তারা তো জানে না , সেলুন থেকে বেরিয়ে কানে ফুরফুরে হাওয়া লাগিয়ে গুনগুনিয়ে গান গাই , “মুক্তির মন্দির সোপান তলে , কত চুল হলো বলিদান।”  

তাই সেই মুক্তির স্বাদ , এই ট্রিমারই দিতে পারে।  ভুরু বাদ দিয়ে সব উড়িয়ে দিই। এক্কেবারে ন্যাড়া।  সেই কোন কালে শেষ  ন্যাড়া হয়েছিলাম পৈতের সময়। সে সময় মশারিতে টাক আটকে যাওয়া ছাড়া সমস্যা কিছু ছিল না। এখন তো আরো আরাম। আমার মাথাটা বেশ বড় , মানে বিশাল , মানে সবথেকে বড় সাইজের হেলমেট বেশ টাইট হয়, সেইরকম বিশাল।  চুলে কাঁচি চালালে কট কট করে আওয়াজ হয়। এই চুল রেখে কি হবে।  যা ইস্টাইল দেয়না , কালবৈশাখীতেও ওড়ে না , কাটার পর দাঁড়িয়ে থাকে , এরকম বেয়াদপ চুলের জন্য সুন্দরীর নিস্বাসের করোনা খাবো কোনো দুঃখে। উড়িয়েই দেব শালা। ট্রিমারে ছেঁটে , রেজারে চেঁচে , ঘাম তেলে লেপটে হালকা হয়ে যাবো।  না হয় একটা কোলাব্যাঙের মতো দেখতে লাগবে কিন্তু আমায় আর কে দেখবে।    

ওদিকে যাকে দেখবে , সেই আমার পুত্র সন্তানের জিনবাহিত রোগ হিসেবে টুপি চুলের বিস্তারে তারও ভয়ানক অবস্থা।  ওনাদের চুল কাটার দোকান আবার আলাদা।  ওই চেয়ারের ওপর একটা পাটাতন রেখে উঠে বসে বাটি বসিয়ে কেটে দিলে চলবে না।  এনার ওয়ান্ডারল্যান্ডের মতো দোকানে চুল কাটার থেকে স্বপ্ন দেখানো বেশি হয়।  আর ছেলের চুল যে কাটে, সে reese witherspoon কে কপি করে।  তাই এ সব ছেড়ে তারও বেশ সমস্যা। হাজার হোক , “মেন উইল বি মেন।” সে এই কসাই বাবার কাছে চুল কাটবে কেন।  অথচ বাবার বিদ্যার দৌড় সেই কোদালেই।  

এই সমস্ত চিন্তা ভাবনা করতে করতে বাড়িতে ফোন করতেই , “কি শুনছি রে ? আমরা বেঁচে থাকতে ন্যাড়া করবি কি ? ” মানে বিভীষণ খবর পাঠিয়ে দিয়েছে। তারপর বাকিটা আর এগোলো না।  আপাতত মিঠুন চক্কোত্তি হতে চলেছি,ভুঁরি নিয়ে ডিস্কো ডান্সার তো হতে পারবো না।  তার বদলে ঘাড়ের চুল দুলিয়ে বলবো , “ ইয়ায়িশ। … সাপের ছোবল আর চিতার খাবল , যেখানেই পরবে , আড়াই কেজি মাংস তুলে নেবে।” ইয়ে, মানে,  তখনও  করোনা দা ছিলেন না আর কি।     

Monday, April 6, 2020

#গো_করোনা_গো ( ১৫) - বাজার থেকে ফিরে


 
বাড়িতে বলতেই খিঁচিয়ে উঠলো , “বাজারে যাবার নাম করলেই রোজ জ্ঞান দিচ্ছিস, আর আজকে তুই কি করছিস?” একদম হক কথা। লকডাউনের পর থেকে খেঁচিয়ে চলেছি বাবা মার ওপর, কিন্তু আজ আমাকেই বেরোতে হলো দুধ নেওয়ার জন্য।  কিছুদিন আগে পর্যন্ত ধ্বস্তাধ্বস্তি করে বেশ কিছু খাবার জোগাড় করে ঘরের মধ্যে সেঁধিয়ে গেছি।  কিন্তু কিছু জিনিস আনতে যে যেতেই হচ্ছে।  

কেন ? অনলাইন অর্ডার করলে হয় না।  অবশ্যই হয়।  পৃথিবীর বহু লোক তো তাই করছে।  কিন্তু পরিস্থিতি ঠিক ততটা অনুকূল নয় আমার এই শহরে।  সেই বলতেই এই লেখা।  

আমি যে শহরে থাকি , সেটি একেবারেই রেসিডেন্সিয়াল। নাম করা দোকান বলতে কিছুই নেই।  যা আছে, তা ঠিক পাশের শহরে। যা দূরে না হলেও সফটওয়্যারে কিন্তু জিপকোড যা সেট করা থাকে তাই দিয়েই ডেলিভারি বিচার হয়।  তাই আমার বাড়িতে ডোমিনোসও আর ডেলিভারি করে না।  

আমেরিকায় হোম ডেলিভারি কোনোদিনই দেশের মতো দারুন ভালো ছিল না।  তার কারণ , আর কিছুই নয় , অতিরিক্ত লেবার চার্জ , যার জন্য আমরাও এদেশে পরে আছি।  এখন এই কঠিন সময়ে সবাই আমরা উদার হয়ে হাতে পয়সা নিয়ে যদিও বসে আছি ডেলিভারির জন্য কিন্তু সময় বদলালে আমরাও হাত গুটিয়ে নেবো।  এখন তাই আমাদের সার্ভ করতে ডেলিভারি বয় গার্ল দের নাকের জলে চোখের জলে এক হয়ে যাচ্ছে , এদের আবার ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হবে সময় যখন বদলাবে।    

এখন আছে প্রাণের ভয়।  শুধু নিজের নয়, একবার ভাবুন তো এই মানুষ গুলোর কথা।  তারা আজ পেটের দায়ে এই ভয়াবহ সময়ে রোজ কাজে বেরোচ্ছে।  আর জানা না জানা দোকান থেকে জিনিস তুলে বাড়িতে বাড়িতে ডেলিভারি দিয়ে যাচ্ছে।  সবাই নিজের দরজায় এখানে “Thank You”  লিখে রাখছে শুধু এই লোক গুলোর জন্য।  

এখন সমস্যা হলো সাধারণ ভাবে অর্ডার ডেলিভারি করার জন্য যে পরিকাঠামো থাকে বা আছে ,  সেটা প্রচন্ড ডিমান্ডের চাপে প্রায় ভেঙে পড়েছে।  এমনিতেই আমেরিকা ভিড় সামলাতে একেবারেই পটু নয়।  তবু পিজা অন্তত আগে তাড়াতাড়ি ডেলিভারি হতো ।  কিন্তু এখন সেটাও প্রচুর সময় লাগাচ্ছে।   

ওয়ালমার্টে খুব সুন্দর গ্রসারি পিকাপ এর ব্যবস্থা আছে।  অ্যাপ থেকে অর্ডার করে দিন , কর্মচারীরা পিকআপ করে গাড়িতে এসে তুলে দিয়ে যাবে।  কিন্তু এই পিকাপের জন্য সারাদিনের একটা নির্দিষ্ট শ্লট আছে।  মানে নটা পাঁচ থেকে নটা পনেরো আপনার টাইম, যা আপনি বুক করেছেন।  কিন্ত সারাদিনের সমস্ত স্লট প্রত্যেকদিন ভরে যাচ্ছে। আমি দিনের পর দি চেক করে করেও স্লট পাচ্ছি না।  

ইন্সটাকার্ট বলে একটা ওয়েবসাইট আছে , যা সাতদিন পরে ডেলিভারি দিচ্ছে এবং ওয়ালমার্টের দুদিনের বদলে সাত দিনের শ্লট দেখাচ্ছে।  কিন্তু আমার জিনিসপত্র প্রায় কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না ইনস্টকার্ট এ।    

আমরা তো যা কিছু খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবো কিন্তু ছেলেটা ছোট।  তাই দুধ ডিম আর কিছু সবজি তো লাগবেই।  দুধ ডিম নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিতে জানতে পারলাম মিল্কম্যান বলে একটা লোকাল ডেয়ারী দুধ, ডিম্, পাউরুটি , বাটার আর চিস ডেলিভারি করছে।  অতি উত্তম , ইউরেকা বলে লাফিয়ে উঠে দাম দেখে বুঝতে পারলাম সবার জন্য সব কিছু না।  আমি যেখানে থাকি সেখানে,  এদিক ওদিক থেকে টেসলা টুকি টুকি খেলে।  এ তাদের জন্য, আমার জন্য নয়।  

পেলাম পি-পড বলে স্টপ এন্ড শপ বলে একটা গ্রোসারি স্টোরের ডেলিভারি সিস্টেমের খোঁজ।  সেখানেও ডেলিভারির সেই লম্বা লাইন।  এই এতো তুলকালাম , তার একটাই কারণ আমাজন ফ্রেশ বা আমাজন প্যান্ট্রি আমার শহরে ডেলিভারি করে না।  

অগত্যা , মাথায় পালকের টুপি , হাতে বল্লম , চোখে ভয় , আর যুদ্ধের রঙে নিজেকে রাঙিয়ে সেইটা হাতের মুঠোয় ধরে এক্সিলারেটরে চাপ দিলাম।  মাস্ক তো এতদিন হলো কিনতে পারিনি।  তাই দেশের স্টাইলে রুমাল মুখে বাঁধতে গিয়ে দেখি বড় রুমাল নেই।  এখানে যেহেতু ধুলো নেই , তাই রুমাল রাখার অভ্যাস ও নেই।  দেশে কিনেছিলাম দু চারটে রুমাল , সেটাই স্যুটকেস থেকে বার করে নিয়ে দেখি এই কেস।  তারপর আর কি , “সেফটিপিন জিন্দাবাদ”।  মুখই দেখা যাবে না তো মাথার পেছনে সেফটিপিন গোঁজা দেখে মুচকি মেরে হাসা লোকেদের কটাক্ষে লজ্জিত হওয়ার কিচ্ছু নেই।  

গাড়িটা দাঁড় করিয়ে মুখোশটা ভালো ভাবে পড়লাম।  তারপর হাতে বাসন ধোয়ার ভিনাইল গ্লাভস পড়লাম। সেখানেও চিত্তির , এই গোদা হাতে কি আর গিন্নির মিডিয়াম গ্লাভস ঢোকে, লার্জ পাইনি।  স্পাইডারম্যানের কষ্ট সেদিন বুঝতে পারলাম।  কানে ইয়ারফোন আগেই গুঁজে দিয়েছি যাতে যদি ফোন আসে তাহলে কষ্ট করে ফোন তুলতে হবে না।  

সেই রণসজ্জায় সজ্জিত হয়ে বেরিয়ে যেই শপিং কার্টে হাত দিলাম , প্রচন্ড ভয় এসে চেপে ধরলো।  নিঃস্বাশ- প্রস্বাস দ্রুত হতে লাগলো।  এক অসহায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে দোকানের ভেতরে ঢুকলাম।  মনে হলো এই মাত্র পুলিশে ক্যাদানে গ্যাস ছেড়ে গেছে। সবাই আমার থেকেও অভিনব মাস্ক লাগিয়ে ঘুরছে।  যারা লাগায়নি , তাদের হাতে অন্তত গ্লাভস, সেও নানা তার রূপ।  

একটা জিনিস দেখে কষ্ট লাগলো , এই অসময়ে বেশ কিছু বয়স্ক মানুষ বাজার করতে এসেছেন।  এই ভাইরাসের সবথেকে বড় টার্গেট এরাই।  কিন্তু আজ তাদের বেরোতে হয়েছে যেহেতু কেউ নেই তাদের কাছে।  কেউ নেই তাদের জন্য বাজার করে দেওয়ার। আমার বাবা মাও ঠিক এইরকম করে বাজার করছে।  

সোশ্যাল ডিস্টেন্স বজায় রাখার জন্য খুব সুন্দর ব্যবস্থা করা হয়েছে।  দরজা দিয়ে ঢুকে একটা এক মুখী তীর আঁকা আছে মেঝের ওপর।  সেটা ফলো করে চললেই সমস্ত আইল ঘুরে ঠিক চলে আসবেন ক্যাশ রেজিস্টারের কাছে। তাহলে সবাই সবার থেকে অন্তত বেশ কিছুটা ব্যবধান রাখতে পারেন।  কিন্ত আমার মতো বেশ কিছু লোক সারা দোকানে ঘোরার মুড নিয়ে আসেনি।  তারা এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছে।  পকাপক জিনিস তুলে তাড়াতাড়ি কেটে পড়তে তারা মুখিয়ে আছে।  

কি মনে হলো আমি ওদের দল থেকে বেরিয়ে ওই লাইন ধরে পর পর আইলগুলো দিয়ে ঘুরতে লাগলাম।  লোকে বেশ কিছুটা ব্যবধান রাখছে। স্যানিটাইজার নেই , হ্যান্ডওয়াশ খালি , ডিসিনফেক্টিভ ক্লিনার শেষ , ওয়াইপ শেষ , ফ্রোজেন ভেজিটেবল শেষ , চিকেন শেষ আর যা যা চাইছিলাম তার বেশির ভাগই শেষ।  বেশিদিন চলে বলে টাটকা সবজির মধ্যে ফুলকপি , বাঁধাকপি ,  স্কোয়াশ , কুমড়ো , আলু , শালগম , গাজর , বিট সব শেষ।  দুধ ডিম আর কিছু সবুজ ভেজিটেবল তুলে নিলাম।  মনে পড়লো গিন্নি মেসেজ করেছে লিস্ট।  কিন্ত এখন সেই মেসেজ খুলতে আমাকে খুলতে হবে গ্লাভস।  যা কিছুতেই সম্ভব নয়। 

দোকান থেকে বেরোতে চিন্তা এলো এবার গ্লাভস খুলে কি স্টিয়ারিংয়ে হাত দেব ? না গ্লাভস পরে।  গ্লাভস খুলে গাড়িতে বসলে স্টিয়ারিংয়ে হয়তো করোনা লাগবে না।  কিন্ত যখন জিনিসগুলো নামাবো তখন তো হাতে লেগে যাবে। আর যদি গ্লাভস পরি , তাহলে স্টিয়ারিংয়ে লেগে যাবে।  তাহলে প্লাস্টিকের ওপর টিকে থাকা করোনা , তিন দিন পর্যন্ত গাড়ির মধ্যে ঘুরঘুর ঘুরঘুর করবে।  আর আমার নাক থেকে এক হাতের মধ্যেই ঘুরে বেড়াবে।  কিন্ত যদি খুলে রাখি তাহলে বাড়ি গিয়ে আবার পরে কিনেআনা জিনিস বাড়িতে রাখতে রাখতে ভুল করে একবার নাকে হাত দিলেই সব শেষ।  অনেক কিছু চিন্তা করে , প্রায় দম বন্ধ করে দোকান থেকে বাড়ি ফিরলাম গ্লাভস পরেই।  

যে জিনিস খারাপ হবে না , সেই জিনিস গুলো পরে থাকলো গ্যারেজে, পরের তিন দিনের জন্য।  আর বাকি সমস্ত জিনিসকে ডিসিনফেক্টিভ দিয়ে পুঁছে এক এক করে তুলে রাখা হলো ঘরে।  সে দুধ হোক কি সবজি এখন সব কিছুতেই ব্লিচিং এর গন্ধ। যখন বাইরের জামা কাপড় বাইরে ছেড়ে গরম জলের তলায় গিয়ে দাঁড়ালাম। তখন একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো বুক থেকে।  

ওই তিন গ্যালন দুধ শেষ হতে আর ৯ দিন।  

Thursday, April 2, 2020

#গো_করোনা_গো ( ১৪ ) - 1 million in world 250K in US




worldometer এর পেজ রিফ্রেশ করতে পৃথিবীর নাম্বারে  ৭টা সংখ্যা দেখালো।  ওদিকে আমেরিকা আড়াই লক্ষ ছুঁই ছুঁই।  এদিকে জীবনে এসে গেছে “আর ভালো লাগছে না।” বিরক্তিতে মুখ পাঁচের মতো করে দিবারাত্রি অফিসের কাজ করে চলেছি আর খবরে পরে চলেছি সারা পৃথিবীর অতিসামাজিক কার্যকলাপের কথা।  

মানুষ এখনো সেই প্লেগের গল্পের মতো কথা বলে চলেছে।  “আমার হবে না”। সবাই তাই ভেবেছিলো।  আমেরিকাতে শুরু হয়েছিল এমন এক রাজ্যে , যেখানে শুধু বড় বড় জঙ্গল আর স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া। টুইলাইটের ভ্যাম্পায়ারই বেঁচে থাকে ওই রাজ্যে। কেউ তাই বিশেষ পাত্তাই দেয়নি।  এরপর স্বাভাবিক কারণে নিউ ইয়র্ক আর ক্যালিফোর্নিয়া , আমেরিকার সবথেকে বড় দুই বহির্জগতের গন্তব্য যখন সংক্রমিত হতে লাগলো।  তখনও শুধু নিজের রাজ্য ছাড়া মানুষ কিছু দেখেনি।  আর ঘুরতে বেরিয়েছে।  মিশিগান, ওহাইয়ো আর ইলিয়নয় যাকে এক সাথে মিড্-ওয়েস্ট বলা হয় সেখানে থাকা বন্ধু বান্ধবদের বলতে শুনেছি , “এখান পর্যন্ত আসবে না।” এখন প্রত্যেক দিন তারা এগিয়ে চলেছে।  কম্পিটিশন চলছে কে কত সংক্রমিত লোকের নাম দেবে , আর কে কত মৃত্যু ঘোষণা করবে।  কিন্তু মানুষ এখনো বলে চলেছে , “আমার কাউন্টি বা আমার শহরে তো হয়নি।  চিন্তা কম।” ধীরে ধীরে সবার হবে।  

আমেরিকা পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে বেশি করোনা টেস্ট সম্পন্ন করেছে আজ পর্যন্ত, অন্তত এই নম্বর এখনো কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি।  কিন্তু আজ ডাক্তার বার্কস বললেন যে ১৩ লক্ষ টেস্ট করানোর পর শুধু ৬.৬ লক্ষ টেস্ট রেজাল্ট তার কাছে এসেছে।  মানে এখনো ছবিটা বাকি আছে।  যত টেস্ট করা হবে তত মৃত্যু সামনে আসবে।  

সামনে আসবে সেই মানুষগুলোর কথা যারা এই নিদারুন সময়ে তাদের জীবনের তোয়াক্কা না করে মানুষকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে।  একবার কোনোদিন ডাক্তারদের পিপিই বা পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন , সাধারণ মুম্বাইয়ের বৃষ্টি পর্যন্ত ওই দিয়ে আটকানো সম্ভব নয়। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত খবর আসছে নির্দোষ ডাক্তারদের মৃত্যুর খবর।  সেই ছবিটা দেখে বুক কেঁপে উঠেছিল যখন চায়নার নানা প্রান্ত থেকে ডাক্তার রা হুয়ান প্রদেশে যাচ্ছিলো , আর তাদের পরিবাররা শেষ বিদায় দেওয়ার মতো কাঁদছিলো।  এখন সেই ছবি চারপাশে , আসে পাশে।  

আর এর মধ্যেই “নেপো”র উপদ্রব শুরু হয়েছে।  ড্রাগ মাফিয়ারা এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে চোরাচালানে দ্রুতি এনেছে , ভ্যান গগের ছবি চুরি হয়েছে , আর নিউ ইয়র্কের ক্রাইম বেড়ে গেছে ১২ শতাংশ।  পুলিশ সারা পৃথিবী জুড়ে নানা ভাবে ক্রিমিনাল দের কার্যকলাপ থামাতে বলছে।  ক্রাইম রেট কমছে অনেক জায়গায়।  কিন্তু তাও ছয়লাপ।  দু ট্রিলিয়ন ডলার থেকে নেপোরা কতটা পাবে সেটা যেমন দেখার মতো , তেমনি ভারতের বুকে এর পরবর্তী যুগে বেরোবে করোনা স্ক্যাম।  এই কোটি কোটি ডলারের গভর্নমেন্ট পয়সা উজাড় করলে কেউ যে হাত সাফ করবে না সে তো আর হয়না।  ঠিক যেমন অনেকেই আমেরিকায় এখন আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট নেওয়ার জন্য হাত পেতেছে।  

খবর আসছে বড় বড় কোম্পানির লে অফের।  তুর্কিশ এয়ারলাইন্স ৯০% ছাঁটাই , ডিজনি বেশির ভাগ কর্মচারীকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে , ব্রিটিশ এয়ারলাইন্স আঠাশ হাজার লোক বার করে দিয়েছে এরকম খবর রোজ আসছে। অনেক কোম্পানি চেষ্টা করছে যাতে মাইনে কম দিয়ে চাকরি বাঁচিয়ে রাখানো যায়।  অনেকে ছুটি ব্যবহার করে নিতে বলছে।  কিন্তু কেউ জানেনা কি হতে চলেছে।  সেই গুমনাম এক শত্রু নানা দিক থেকে চেপে ধরছে গলা।  

এখনো দেশে এই আতঙ্ক ছড়ায়নি এতটা, তাই এখনো টিকটক চলছে।  সময় আসলে আর সময় থাকবে না আল্লাহ , রাম, যীশুর নাম নেওয়ার। কালকে আবার বাঁচতে চাই , নিউ ইয়র্কের ওই রাস্তার ধারে পরে থাকা মোবাইল মর্গে শুয়ে থাকতে চাইনা।  তাই কালকে উঠে আবার লিখবো।     

Tuesday, March 31, 2020

#গো_করোনা_গো ( ১৩ ) - ভয় শুধু ভয়



আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে বেজায় চাপ খেয়ে গেছিলাম।  ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছি , কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি লগইন করতে পারছি না।  বিন বিন করে ঘাম হতে লাগলো . এতো লোক মারা যাচ্ছে এতো পয়সার ক্ষতি , তার বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে চাকরি যাওয়া তো শুরু হয়ে গেছে . নিউ ইয়র্ক এ রেস্টুরেন্টের কর্মচারিরা চাকরি হারিয়ে কান্নাকাটি করছে . মালিককে গিয়ে ধরা হচ্ছে , “ ওদের বার করে দিলেন ? ওদের সংসার কে চালাবে ? “ উত্তরে আসছে , “ ওদের রাখলে আমাদের সংসার কে চালাবে আর দোকানটাও তো রাখতে হবে যাতে ওরা ফিরতে পারে. “ ঠিক এই কথাটাই শোনার অপেক্ষা করছি এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আর তার মধ্যে এই কেস .

ম্যানেজার , তার ম্যানেজার পাড়া প্রতিকলিগদের ফোন করে আসল ঘটনা বুঝতে পারলাম আমার বাৎসরিক আইডি রিনিউ এর দিনটি ছিল আজ. যেহেতু করোনার জন্য আমার ডকুমেন্ট সাবমিট করতে আমার ম্যানেজার ভুলে গেছে তাই ওটা ডিএক্টিভেটেড হয় যায় . আধ ঘন্টার জন্য আমার হৃৎপিণ্ডও ডিএক্টিভেটেড হয়ে গেছিলো. 

ভয় কিভাবে আসছে বুঝতে পারছেন তো . এখন যখন লিখছি তখন করোনা টাস্ক ফোর্স এর ডাক্তার ফাউচি হোয়াইট হাউসে  দেশবাসীকে এক লক্ষ মৃত্যুর জন্য তৈরি হতে বলছেন। ডাক্তার বার্কস বলছেন মৃত্যুহার দ্রুত বৃদ্ধি পাবে ও ধীরে ধীরে কমবে।  একমাত্র ওয়াইওমিং স্টেট্ বাদ দিয়ে সমস্ত স্টেট্ আজ মৃত্যুর দিক দিয়ে ইউনাইটেড।  চিরশত্রু রাশিয়া আজ এসে দাঁড়াচ্ছে সাহায্যের জন্য। সকলের কাছে হাতজোড় করা নিউ ইয়র্কের গভর্নরের ভাই আজ করোনার কবলে।  নিউজার্সি অতিরিক্ত রেফ্রিজারেটর ট্রেলার অর্ডার করেছে , অতিরিক্ত বডি রাখার জন্য।  ইন্ডিয়ানা , টেক্সাসে এবরশান কে নন এমার্জেন্সির মধ্যে ফেলে স্থগিত রাখার আদেশ এসেছে।  প্রতিটা স্টেট থেকে আসছে মেডিক্যাল কর্মচারী আর পুলিশের মৃত্যু ও অসুস্থতাটার খবর।  

আর আসছে কিছু ধর্মীয় বেয়াদপের গণহত্যার খবর।  লুইসিনিয়া প্যাস্টর মার্ক এন্থনি স্পেল যখন হাজার জনের গ্যাদারিং এ যীশু যীশু করছিলো , তখন আল্লাহ আল্লাহ করছিলো দিল্লীর নিজামুদ্দিনে। গোমুত্র পার্টি থেকে শুরু করে আমরা তো এই নোংরামিতে এগিয়েই আছি।  

একসাথে মৃত্যুভয় , বেকারত্বের ভয় , আত্মীয়বিয়োগের ভয়, গৃহযুদ্ধের ভয়  আর সাথে ভয় এই ধর্মীয় উন্মাদনার। আর ভয় এই অদ্ভুত বড়লোকদের রাজনীতির খেলায়।  সারা পৃথিবী থেকে যখন প্রাইম মিনিস্টার রিলিফ ফান্ডে টাকা যাচ্ছে , তখন পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি চুপ করে পয়সা গুনে চলেছে। যে দেশকে বেচে দেওয়া হলো এই লোকটার কাছে , সেই সরকারের আজ যখন দরকার তখন তিনি ঘন্টা বাজিয়ে শেষ।  না দিক কিছু , অন্তত নিজের দশ লক্ষ কর্মচারী কে যেন না ছাঁটে।  অনেক নোংরামোর শেষে যেন এই নোংরামো না করে।  

যাইহোক , দেশ কিন্তু আগে এগিয়ে হাজার পূর্ণ করেছে কালকে।  আমেরিকার কার্ভ  দেখে গতি মিলিয়ে নিন।  আমাদের কিচ্ছু হবে না বলে চা খেতে বেরিয়ে গিয়ে থু করে করোনা ছুঁড়ে পালিয়ে আসবেন না।  ঘরে থাকুন বেঁচে থাকুন।  

Monday, March 30, 2020

#গো_করোনা_গো ( ১২ ) - USA 150,000




আজকের দিনটা অনেক কিছু ঘটনার।  আড়াই দিনে ১ লক্ষ থেকে দেড় লক্ষ পৌঁছে গেলো আমেরিকা। প্রথমবার পাঁচশো লোকের মৃত্যু নথিবদ্ধ করলো আমেরিকা।  আমেরিকার প্রথম মেডিকেল স্টাফের মৃত্যু হলো।  নিউ ইয়র্কের ফুসফুস সেন্ট্রাল পার্কে তৈরী হলো টেম্পোরারি ৬৮ বেডের হাসপাতাল।  নিউজার্সির আড়াইশোর ওপর পুলিশের ধরা পড়লো করোনা। ভেন্টিলেটরের দাম কুড়ি হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার হয়েছে।  আর দেশ হাজার ছাড়িয়েছে।  

এখনো ফোনে লোককে বলতে শুনছি ইন্ডিয়ার কিচ্ছু হবে না। কোনো সমস্যাই হবে না।  মোদী বাঁচিয়ে নেবে।  পুলিশ বাঁচিয়ে নেবে।  কোনো না কোনো দেবতা তো আছেই বাঁচানোর জন্য।  সত্যি কি ইন্ডিয়া বাঁচবে।  সত্যি সত্যি কি ভিড়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে না এই রোগ।  না পড়ুক , মানুষগুলো বাঁচুক। যদি সত্যি সত্যি কোনো দেবতা থাকে বাঁচিয়ে নিলে বাঁচিয়ে নিক।  

তবে যদি না থাকে।  আর চায়নার মতো পলিটিকাল নোংরামিতে চাপা পরে যাক বয়স্কদের মৃত্যু , তবে ? আমার আপনার প্রিয়জন তখন মেঘের আড়ালে বা মাটির তলে। একটা কথা বলে রাখি, আমেরিকা ঠিক একই রকম ভুল করেছিল।  ল্যাজ আমাদের মতোই মোটা করে ঘুরে বেড়াতো। এবং টেস্ট এর ব্যবস্থা করেনি।  

দেশেও একই সমস্যা হতে পারে।  আমেরিকাতে দশ লক্ষ টেস্ট পরে , এক লক্ষ লোকের ধরা পড়েছে।  আর আমরা যখন খেলি তখন কোটিতে খেলি।  আমাদের টেস্টই তো করানো হয় না।  কোনদিন সাধারণ সর্দি কাশিতে ডাক্তারের কাছে গেছেন কখনো।  কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্টরাই তো দেশ চালায় , আর যদি কারো একটা মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্তিভ থাকে , তাহলে তো কোনো কথাই নেই। যে দেশে অসুখ সারাতে এখনো লোকে আগে মন্দির মসজিদে তারপর হাতুড়ে তারপর যায় হসপিটালে , সেই দেশে এই ভয়ঙ্কর অবস্থায় কি ভয়ঙ্কর অবস্থা হতে পারে , ভেবেই শিউরে উঠছি।  

সেই মানুষগুলো যারা বয়স্ক , যারা এক্ষুনি মারা গেলেন রাস্তায়।  কে বিচার করবে , তার মৃত্যু করোনা না কিসের থেকে হয়েছে।  বয়স্ক রা তো স্বাস কষ্টেই মারা যায়।  আর বয়স্ক মরে গেলে যৌবনের তো লাভই। অস্বাভাবিক মৃত্যুর পোস্টমর্টেম হয়।  কিন্তু করোনার মৃত্যু এখনও স্বাভাবিক।  দেশের কোটি কোটি মৃত্যুর কারণ চেপে যায় স্বাভাবিক মৃত্যু বলে , আর এই অবস্থায় তো স্বয়ং ক্যারিয়ার জানে না যে সে বইছে।  

সাথে আছে আমাদের অদ্ভুত গা ফিলতি।  আমরা চাই না লোককে কিছু বলতে। সব রোগই গুপ্ত রোগ।  ছোঁয়াচে রোগ হলেও ছুটি নিতে নারাজ।  এইডস কেউ ছোয়াঁচে বলে এপিডেমিক করে তুলেছে তো অনেক আগেই। এপিলেপ্সি বললে বিয়ে হবে না , সাইকিয়াট্রিস্ট দেখালে লোকে পাগল বলে ঢিল ছুঁড়বে , তিন মাসের আগে প্রেগন্যান্সির খবর ছড়ালে নজর লেগে গর্ভপাতের সম্ভবনা থাকবে , এই সবের দেশ আমার ভারতবর্ষ।  সেখানে দাঁড়িয়ে বড় বড় কথা আসে কি করে।  

সারা পৃথিবীতে যা মরেছে তা আমাদের কাছে নস্যি।  যে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আমাদের লোক মরে অনেক বেশি।  আর স্বাভাবিক ভাবেই বৃদ্ধ ওর শিশুরাই প্রথমে মরে।  এবার শিশুদের রেহাই দিয়েছে প্রকৃতি।  আর বুড়ো বুড়িদের কে দেখে।  

ছবিটা একটি আমেরিকার করোনা হাসপাতালের ওয়ার্ডের ছবি।  একবার ভাবুন , আপনার টেস্ট পসিটিভ হলো।  আর আপনার স্থান হলো ওই ওয়ার্ডের কোনো একটা বেডে।  ভাবুন তো , মৃত্যু আসে পাশে।  রোজ রোজ কোনো না কোনো বেড খালি হচ্ছে , ডেডবডি নিয়ে চলে যাওয়া হচ্ছে স্ট্রেচারে করে। একটু উঁকি মারলেই মৃত্যু টুকি করছে। এইটাই সত্য , বাকিটা নয়।  

যাইহোক , ভিড় সামলাতে আমাদের দেশ এক নম্বরে , তাই হয়তো সময় বলবে দেশের অবস্থা কিরকম হবে।  কিন্তু চেষ্টা করে যান এই সময়ে শিকল পড়ার।  হয়তো কিছু লোক বেঁচে যাবে। 

Sunday, March 29, 2020

#গো_করোনা_গো ( ১১ ) - চায়না চাইনা , কিন্তু !!!



“গত পঞ্চাশ বছরে চারটে এপিডেমিক এনেছে চায়না। “ 
“আজ থেকেই সমস্ত চাইনিস দ্রব্য বর্জন করা হোক।” 
“চায়না ক্ষতিপূরণ দিক।” 
“ওই সস্তার মাল সব ফেলে দেওয়া হোক।” 

করোনার গৃহবন্দীদের ঘরজামাই এর মতো এইসব আস্ফালন শুনতে ভালোই লাগছে।  ফেসবুক ওয়ারিয়র বলে একটা নতুন প্রজন্ম তৈরী হয়েছে যারা এইসব বেফালতু কমেন্ট মেরে উত্তর পূর্ব ভারতের নাক বোঁচা চোখ কুতকুত দের করোনা বলে গালাগালি দিয়ে বলছে দেশে ফিরে যাও।  

আমেরিকা রেসিস্ট , গৃহযুদ্ধের কারণ এবং বহু বছর  ধরে মানুষে মানুষে ভেদাভেদের কারণ এই ভয়ঙ্কর রেসিজম।   কিন্ত এই রেসিজমের কারণ অর্থনৈতিক।  আর আমাদের দেশে অকারণ কাঠি করার কারণ এই রেসিজম।  আমরা ভালোবাসি এমনি এমনি খেতে।  আমার চোখ হাতির মতো কিন্তু মাথাটাও হাতির মতো তাই আমাকে অনেকেই হাঁসজারু মনে করে।  কিন্তু যাদের চোখ ছোট আর নাক বোঁচা তারা কি বাদুড় খেয়ে করোনার মতো দেখতে হয়ে গেছে।  

এখন প্রথম প্রশ্ন, সকলে মনে করে চাইনিসরা এই ভাইরাসের কারণ।  কনস্পিরেসির গন্ধ পেলেই লোকে “উলুস” বলে ঝাঁপিয়ে পরে।  জীবনে তো কোনোরকম উত্তেজনা নেই।  এমনকি সেক্স করতে গিয়েও জোয়ান বয়সেও পেনেগ্রা খেতে হয়।  তারাই এইসব উদ্ভট চিন্তা ভাবনা করতে পারে।  আর এখন তো ইরাকের পর বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার এর তত্ত্ব  যে কেউ খায়।  যদিও পৃথিবী এখন এমন কন্ডিশনে যাচ্ছে , ৭ লক্ষ মানুষ এই ভাইরাসের আওতায় চলে এসেছে তখন অবিশ্বাস করতেও ভয় হচ্ছে।  

কিন্তু একবার ভেবে দেখুন এই যুদ্ধে লাভ কার  আর ক্ষতি কার ? চায়না ম্যানুফ্যাকচারিং হাব।  বিশ্বের লোকেদের ঘরে বসিয়ে রাখলে এদের লাভ কি। এদের ব্যবসায় তো সবথেকে বড় ক্ষতি।  অর্থনৈতিক লাভ ছাড়া আর মনে হয় কোনো লাভের জন্য কোনো রাষ্ট্র এতবড় ক্ষতি করেনা।  এরা তো রমেশ আর সুরেশ না, যারা খান্তমণির প্রেমে পাগল হয়ে সুইসাইড করতে চলেছে।  

এবার আসি বর্জন করার কথা নিয়ে।  বড় বড় কথা যারা বলছে তারাই সস্তার খোঁজে চাইনিস জিনিসের পেছনে দৌড়েছিলো। এই সস্তার চক্করে শেষ হয়ে গেছে প্রচুর দেশি কোম্পানি। কিন্তু এরা এখনো দৌড়োচ্ছে আর দৌড়াবেও।  সমস্যা চায়নার না , আমাদের।  সস্তা বলে কোনো জিনিস হয়না। তোমার কাছে আমার কাছে সস্তা মানে কোনো দেশে কোনো মানুষ তার জীবনের মূল্য শূন্য করে আমাদের জন্য জিনিস বানাচ্ছে।  তাই দাম দিয়ে জিনিস কিনুন।  আর যদি ক্ষমতা না থাকে , তাহলে যারা সস্তায় যোগান দিচ্ছে তাদের সম্বন্ধে বোকা  বোকা কমেন্ট করা ছাড়ুন।  

মেক ইন ইন্ডিয়ার সিংহ কেনিয়ার জঙ্গলেই এখনো ঘুরছে। গির থেকে বেরিয়ে যদি বিশ্বমাঝে ঘুরতো , তাহলে হয়তো আমাদের এইসব কথা বলা মানাতো।  

আর ক্ষতিপূরণ !!!! আমেরিকার একজন কেস করেছে দেখলাম।  কিসের ক্ষতি আর কিসের পূরণ।  এইসমস্ত ভুলচুলের জন্য , অদ্ভুত ভাবে চায়নার সত্যি আবার ধামা চাপা পরে যাচ্ছে।  সারা পৃথিবী যখন হাজার হাজার লোক যোগ করছে এই মহামারীতে, তখন চায়না একেবারে থেমে গেছে।  বুঝতে পারছেন তো , ওখানের মানুষগুলোর কি অবস্থা।  সত্য গোপনে চায়না সবথেকে উপরে।  আর আরো বেড়ে যাচ্ছে।  

আর চায়নার ভুলের ফসল নিজের দেশের মানুষদের দেওয়া কেন? নর্থ ইস্ট তো আমাদের দেশের অংশ।  আমাদের মানুষ। মোদিকেই ভোট দিয়েছে , জনগণমনই গায় , পাসপোর্ট এ এখনো ইন্ডিয়ানই লেখা আছে, ওদের ভগবানও শচীন টেন্ডুলকার। তাহলে ? সমস্যা কি ? 

এই বন্দী জীবনে আলো দেওয়ার জন্য অনেক কিছু আছে।  সুন্দর গান আছে , গল্প আছে এমনকি কল্পবিজ্ঞান আছে। অবাক হয়ে পৃথিবীর ভুলচুল দেখার সময় আছে।  গুরুগম্ভীর তত্ব আছে , পানু আছে , সময় কাটানোর সমস্ত সরঞ্জাম আছে।  তাহলে এসব কি ? 

ওসব চায়না টায়না ছেড়ে এবার নিজের দেশের দিকে নজর দিয়ে বাড়ি থেকে বেরোনো ছাড়ুন। 

Saturday, March 28, 2020

#গো_করোনা_গো ( ১০ ) - লোক-ডাউন , গণ প্যাঁদানি ও চাটাচাটি




মহিলার চাটাটা দেখলেন ? উফফ কি দিলো মাইরি।  স্কিলটা বেশ ভালো।  কাজে লাগবে। সমস্যা খুব।  দু পক্ষেরই।  অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে।  কিন্ত এখন কেসটা একবারে পচা কেস।  না প্যাঁদালে কাঁসর ঘন্টা নিয়ে করোনা ফেস্টিভ্যাল করবে আর প্যাঁদালে বলবে অমানুষিক।  

আজ যখন লিখতে বসেছি তখন আমেরিকা পৃথিবীর রেকর্ড ভেঙে কুড়ি হাজার নতুন করোনা কেস রেজিস্টার করেছে। ইতালিতে আজকেও সাড়ে আটশোর ওপর লোক মারা গেছে।  আর পৃথিবীর বৃহত্তম ডেমোক্রেসির ঘুম ভাঙছে চতুর্থ লকডাউনের দিনে।  

প্রচন্ড মুষড়ে পড়েছিলাম যখন দেখি হাততালির বদলে কেউ সিলিন্ডার বাজাচ্ছে , ইউটিউবে ভিডিও পোস্ট হচ্ছে টপ ১০ জনতা কারফিউ নয়েস।  আমার মা নিউমোনিয়ার রুগী।  এই শুয়োরের বাচ্চাদের জন্য এমনি এমনি মারা যাবে।  ঠিক যেমন কুড়ি হাজার লোক মারা গেলো কিচ্ছু না বুঝে।  

কিন্তু যখন দেখলাম পুলিশ পেটাচ্ছে , তখন আরো বেশি খারাপ লাগলো।  না না ওসব ব্যাথা মানসিকতা নয়।  দুঃখ লাগলো এই ভেবে যে এরা ভোট দেয়।  গরু ছাগলও নিজের ভালো বোঝে।  তারাও মৃত্যুভয়ে পালতে জানে।  আর এই মানুষগুলোকে না পেটালে বোঝানো যায় না যে এরা একই সাথে মরছে ও মারছে।  দুদিন বাদে আবার ড্যাং ড্যাং করে ভোট দিয়ে অবতার নিয়ে আসবে।  

মুম্বাইয়ের দাদর স্টেশনে একবার দেখেছিলাম এক খাটো ধুতি পরিহিত রাজস্থানি চাষী প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনলাইনে ঝুঁকে গ্রাম্য অভ্যাসবশতঃ দেখছে , ট্রেন আসছে কি না।  মুম্বাইয়ের তিন লোকাল ট্রেন লাইনের ব্যস্ততম জাংশানে যেখানে ২ মিনিট অন্তর অন্তর ট্রেন আসে তখন ওই ভাবে মুখ বাড়ানোর একটাই পরিনাম - মৃত্যু।  আর লোকটির মৃত্যুর সাথে মৃত্যু হবে “সময়ের” . যে শহরে প্রতিটা মিনিট বাঁধা থাকে টাকার সাথে , সেখানে সময় নষ্ট হওয়া মানে মৃত্যু ডেকে আনার মতো।  সেদিন এক রেলওয়ে পুলিশ সোজা গিয়ে একটা লাঠি চালিয়েছিল পায়ের গোছে।  খুব খারাপ লেগেছিলো মানুষটির জন্য।  কিন্তু আজ বুঝতে পারছি মানুষ শুধু লাঠি বোঝে।  

তাহলে কি বলবো পুলিশ এখন যা করছে , “বেশ করেছে” ? না , কারণ প্রচুর অসহায় মানুষ মার্ খাচ্ছে।  কোল্যাটারাল ড্যামেজ বলে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া যায় না।  কারণ এদের মধ্যে অনেকেই আছে যাদের জন্য মানুষ খেতে পাচ্ছে। কিন্তু কাকে কি বলি ? পুলিশরাও মানুষ।  তাদের যদি কেউ চেটে দেয় তাহলে তারাও লাঠি চালাতে বাধ্য।  

এই বাড়িতে গ্রসারি লোড করা ভদ্রলোকদের শখের চা খেতে গিয়ে প্যাদানি খেয়ে পুলিশের মানবিকতাহীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ন্যাকামোতে সারা দিতে পারলাম না।  খাক তারা মার।  আরো মার , আরো মার। যদি সহানুভূতি দেখাতেই হয় তো তাদের দেখাবো যারা বাড়ি ফেরার জন্য মাইলের পর মেইল হেঁটে চলেছে। কোলে বাচ্চা নিয়ে , পেটে খিদে নিয়ে , ভবিষ্যতের আশংকা নিয়ে , আর পদে পদে পুলিশের মার্ খেয়ে।  তাদের ছেড়ে দিন প্লিস।  সহানুভূতি সেই বৃদ্ধ বৃদ্ধার জন্য , যাদের জোয়ান ছেলেমেয়ে মেয়ে কর্মসূত্রে বাইরে থাকে।  সহানুভূতি তাদের জন্য যারা শিশুর খাবার যোগানের জন্য মার্ খেয়ে বাজার করে নিয়ে আসছে।  সহানুভূতি তাদের জন্য যারা ডেলিভারি বয়ের কাজ করতে গিয়ে মার খাচ্ছে।  তাদের জন্য না , যারা প্রেসক্রিপশন নিয়ে মদ কিনতে বেরোচ্ছে , ফাঁকা রাস্তা দেখে বাইকের রেস লাগাচ্ছে , খোলা ছাদ দেখে পিকনিক করছে।  

এইমুহূর্তে দু চারটে কালশিটের থেকে অনেক বেশি সমস্যায় আছে পৃথিবী।  আর হ্যাঁ যদি পুলিশের ভালো কাজের জন্য চাটতে হয় তাহলে একটু অপেক্ষা করুন। ……