Sunday, May 5, 2019

ভোট দেওয়ার ঠিক আগে


শালা এক ঘন্টার ওপর দাঁড়িয়ে আছি এই ঠা ঠা  রোদ্দুরে। ঠিক যেমন দাঁড়িয়েছিলাম এটিএমের সামনে , নিজের জমানো পয়সা তোলার জন্য।  সামনে আর মোটে কয়েকজন।  সাতজন মনে হচ্ছে।  কোথায় ছুটির দিনে মাংস ভাত খেয়ে ঘুমাবো,  তা নয় হাঁ করে দঁড়িয়ে আছি ভোট দেওয়ার জন্য।  এই মাঝে মাঝে জেগে ওঠা দেশপ্রেম নিয়ে কি যে করবো জানিনা।  ওই যে মালগুলো দাঁড়িয়ে আছে বুথ রিপ্রেসেন্টেটিভ হিসেবে, দেখলেই হয় গা,  রি-রি করে ওঠে। এগুলোই সেই মাল যাদের সাথে ছোটবেলায় মা কথা বলতে বারণ করতো। আর  এখন এদের সাথেই খাপি করতে বলে।  কিস্যু করে না মালগুলো।  যাকগে ওরাও করে খাচ্ছে।  কিন্তু আমি এখন কি করি। কাকে ভোট দি।  সব পার্টিই তো বাজে কাজ করছে। কেউ ধর্ম নিয়ে খেলা করছে।  কেউ সেলিব্রিটিদের টিকিট দিচ্ছে।  যদিও সেলিব্রিটি দের টিকিট দিলে কি অসুবিধা আছে।  মানুষ তো তিন ধরণের মানুষকে ফলো করতে চায় - শক্তিশালী , বুদ্ধিমান আর সুন্দর।  বুদ্ধিমানের তো আর কোনো সংজ্ঞা হয় না।  দেশ চালানো যে রকেট চালানোর থেকেও অনেক  কঠিন সে তো বুঝতেই পেরেছি।  আর এই মানুষগুলো তো নিজের জায়গায় সফল।  সফলতাই মাপকাঠি।  ধুর ধুর অতো ভেবে লাভ নেই।  যে কোনো একটাতে টিপে দিলেই হবে। আমার একার ভোটে আর কি হবে।  কিন্তু যদি এখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়ে এক ভোটে কেউ জিতে যায়।  আর আমি তাকে চাইনা।  তাহলে তো তেতো মুখ নিয়ে আরো পাঁচ বছর কাটাতে হবে।  তখন খেলবো না বললে তো আর চলবে না।  তার থেকে ভেবে চিনতে ভোট দি।  কিন্তু ভাববোটা কি ? এটা কি মিউনিসিপ্যালিটির ভোট? যাকে ভোট দিচ্ছি তাকে তো চোখেই দেখিনি কখনো।  আর ভোটের আগে যেরকম মুখে বুলি হাতে ঝুলি নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় , ভোটের পর তো থ্যাংক ইউ বলার জন্যেও কেউ আসে না।  নিশ্চয় কেউ নির্দলীয় আছে।  তারাই বেস্ট।  তারা অন্তত রেগে মেগে ভোটে দাঁড়িয়েছে যাতে কাজ না করা দল গুলোর ভোট কিছুটা হলেও কাটা যায়।  কিন্তু কোনো রকমে যদি তারা জিতে যায় তাহলেও তো কোনো না কোনো বড় পার্টি তাকে কিনে নেবে।  নাহলে পিষে মেরে ফেলবে।  ওই নির্দলীয়রা আমার থেকেও একা।  আমরা তো দায়িত্ব দিয়ে খালাস।  কিন্তু তারা দায়িত্ব পালন না করতে পেরে চাপে।  উফফ , ভাবলেই চাপ যেনো একশো গুন বেড়ে যায়। বেশির ভাগ লোকে ভাবে না।  এক বোতল জল দিয়েছিল , সেটাও শেষ হয়ে গেছে।  আর মোটে দুজন সামনে।  আর কিছুক্ষন।  আমার দিকে তাকিয়ে ওই বুথ রিপ্রেসেনটেটিভটা হাসছে কেন। কার্টেসি স্মাইল তো বিদেশী অভ্যেস , আমরা তো হাসি না।  তবে ও কি জানে আমি কাকে ভোট দেব। আমিই জানি না কাকে দেবো, তো ও কি করে জানবে।  শালা আন্দাজেই বুজরুকি এক্সিট পোল বানায়।  আর তাতেই লোকে মুরগি। ভিড়ের সাথে চলতে সবার ভালো লাগে।  একদম সহজ।  এক্সিট পোলে যাকে বেশি দেখাচ্ছে তাকেই দিয়ে দাও ভোট।  মিডিয়াকে কিনে নেওয়ার দৌড় তাই সবথেকে বেশি।  মস্তিষ্ক প্রক্ষালন যন্ত্র কি সত্যি তৈরী হয়ে গেছে।  না হয়নি , শালা আমাদের মতো লোক এখনো বেঁচে আছে। আমিই দেব ঠিক লোককে ভোট।  একের শক্তি অনেক।  আর আমার বেশি দেশ টেস ভেবে কি হবে।  আমার শুধু আমার কথা ভাবলেই চলবে। দেশ তো আমি আর আমরা দের সমষ্টি। আমার রোজকার অফিস যাওয়ার পথে গাড্ডাগুলো বুজে গেছে , আমার ট্যাক্স রিলিফ হয়েছে , আমার ঘরে লোডশেডিং হয়নি শেষ দেড় বছরে , আমার মেয়েকে পাড়ার ছেলেরা টিটকারি করে , চাঁদার জুলুম চলছে।  এক একটা সমস্যা যারা সমাধান করেছে তাদের ভোট দিলেই তো হয়।  ট্যাক্স রিলিফে ভোট দেব সেন্ট্রাল কে।  লোডশেডিংয়ের জন্য ভোট দেব রাজ্যকে আর চাঁদার জুলুমের জন্য ভোট দেব মিউনিসিপালিটিকে।  এই তো , পেয়ে গেছি সহজ সরল হিসাব।  যে কাজ করেনি, আর যে কষ্ট দিয়েছে তাকে দেবোনা ।  মূল্যবৃদ্ধি , দেশগঠন , রিসেশন , বেকারত্ব ওসব তারা ভাববে যারা ক্ষতিগ্রস্থ।  আমি যে যে ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ আমি শুধু সেটুকুই ভাবি, তাহলেই চলবে। এখানে সবাই রাজা। ভাবতেও ভালো লাগে।  কিন্তু আদৌ কি আমি রাজা।  রাজার কাজ কি।  সব কিছু অন্য কে দিয়ে করানো। মোটেই না।  আমারও তো অনেক কিছু করার আছে।  সবে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ।  ধুর ধুর ফালতু সব ইনস্পিরেশন মেসেজ দিয়ে বিশেষ কোনো লাভ নেই।  এই দেশের কিস্যু হবে না।  আজ নোটা তেই ভোট দেব। কিন্তু তাতে কি কিছু লাভ আছে।  এতো খাটনি খেটে শেষে নিজের ভোট গণ্য হবে না।  এটাই কি আমি চাই।  মোটেই না।  আমার সময়ের মূল্য আছে। আর এই লোকটা যে আমার হাতে কালিটা লাগালো তার মূল্য তো আরও বেশি।  ভাগ্যিস আমাকে দেখে বলেনি আপনার নামে তো ভোট পরে গেছে।  আচ্ছা যদি সবাই “নোটা” তে ভোট দেয় তাহলে তো আবার ভোট হবে।  এই লোক গুলো আবার এসে বসবে এই স্কুল বিল্ডিং গুলোতে।  কাল রাত থেকে বসে আছে।  এমন কত জায়গা আছে যেখানে লোকে বন্দুক নিয়ে ভোট দিতে আসে।  বুথ হাইজ্যাকিং এর সামনে এরাই তো দাঁড়িয়ে থাকে প্রাণ নিয়ে।  প্রাইভেট কোম্পানি তে চাকরি করার জন্য আমার ঘাড়ে এসব চাপবে না।  কিন্তু কয়েক লক্ষ লোক , এরাও তো রাজা।  যুদ্ধে রাজাকে বাঁচানো কর্তব্য কিন্ত এরা তো একেবারে যুদ্ধক্ষেত্রের সামনে।  শেষমেশ  মেশিনটার সামনে।  এটা কি হ্যাক হয়ে গেছে।  না হ্যাক হবে।  যেকোনো বাটনে প্রেস করলে কি একজনের কাছেই ভোট পড়বে।  নাও হতে পারে।  সর্বশক্তিমান ইলেকশান কমিশন কেন যে এই ইলেক্ট্রনিক প্রসেস এখনো চালাচ্ছে জানিনা।  সমস্ত ভালো দেশ তো এখনো  কাগজের ব্যালটে ভোট করে।  একটা নামও চেনা নয়।  একটাও না।  কিছু জনের দেওয়াল পোস্টার দেখেছি।  কিন্তু কিরকম দেখতে সেটাও জানিনা।  তাহলে কেউ অন্তত সেলিব্রিটি নয়।  এদের মধ্যেই একজনকে দিতে হবে।  ইকির মিকির চাম চিকির করবো ? না না , বড্ডো ছেঁদো কাজ হয়ে যাবে।  নোটা বড় টানছে।  না , নোটা ঠিক হবে না।  চোখ বন্ধ করি। বাবা যাকে ভোট দিতো তাদের দি।  না ,না আমার একটা ওপিনিয়ন বলে তো জিনিস আছে।  যদি ভোট দিয়ে বেরিয়ে আমার মুখ দেখে বুঝতে পারে আমি কাকে ভোট দিয়েছি তাহলে তো বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবো না।  বড্ডো ফালতু ভাবছি।  আমি জানি কাকে ভোট দেব।  আমি জানি।  এতদিন এতো খবরের কাগজে , টিভি , ফেসবুকে এতো আলোচনা পড়ার আর শোনার নিশ্চয় কিছু তো প্রতিদান আছে।  ঠিক সময়ে মাথায় এসে গেছে।  আঙ্গুল এগিয়ে যাচ্ছে।  ভুল করছি না তো।  হিরোদের সাথে সবাই থাকে হেরোদের সাথে কেউ না।  আরেকবার ভাবি।  নাহ আর ভাবার সময় নেই।  টিপে দিয়েছি।  লাল বোতাম টা জ্বলে গেছে।  আমার ভোট রেজিস্টার্ড। আমিও রাজা।        


ঠিক আগে সিরিজ