(৫৫) আধ্যানের
ডায়েরি - কালীপূজা
দুর্গাপূজা শেষ
হওয়ার পর থেকেই বাবার মাথায় কিছু একটা ভূত চেপেছে বুঝতে পারছি কিন্ত ভূতটা ঠিক কি
সেটা বুঝতে পারছি না। যে বাবা আমার
টিভি দেখার সবথেকে বোরো নিন্দুক সে কি করে আমাকে টিভি দেখার জন্য উৎসাহিত করে। এই তো সেদিন একটা লার্নিং মডিউল চলছিল। এনিম্যাল সাউন্ড। পর পর সমস্ত জন্তু জানোয়াররা আসছিলো আর
তাদের ভাষায় আই লাভ ইউ বলে চলে যাচ্ছিলো। আমিও শুনছিলাম
আর শিখছিলাম। নায়ন থেকে
মাক্কী, সবার আওয়াজ আমি জানি। আর সাথে সাথে
বলতেও থাকি। কিন্তু বাবা
বাথরুম থেকে বেরিয়েই ডায়নোসর হয়ে গেলো। আর ফট করে
টিভিটাও বন্ধ হয়ে গেলো। মা আগেও বলেছে
বাবাকে , মাঝেখানে বন্ধ করবে না। ইট সাউন্ডস
লাইক। বাবা যখন বলে উইল কল ইউ লেটার , আই এম
ইন মিডল অফ সামথিং। কিন্তু কে কার
কথা শোনে।
বাবা ভাবে আমি
একটা যন্ত্র। টিভি চালু তো
আমার মুখ খুলে যাবে আর আমিও হা হা করে খেয়ে নেবো। ব্যাপারটা
চলছিল কিন্তু কতদিন আর চলে। আজকাল টিভিতে
গানের সাথে সাথে নানা ধরণের স্টোরি টেলিং বা ওয়ার্ড বলা হয়। আর নার্সারি রাইমস নয়। এবার চাই কিছু আসল। কিন্তু এই
স্টোরিগুলো তো বাবাকে খুঁজে খুঁজে বার করতে হয়। আর একটার পর পর
একটা স্ত্রী চলতে থাকে না। তার ওপর আমার ভালোলাগা না লাগাও তো একটা
ব্যাপার আছে। সবকিছু আমার
ভালো লাগবে সেরকম তো আর কথা নেই। তাই আমিও ঠোঁট
টিপে বসে থাকতাম যখন গল্প পাল্টানোর সময় হতো। আর বাবা সেই
শেষ চামচের জন্য বসে থাকতো যেটা মুখে ঢোকার সাথে সাথে ধপ করে টিভি বন্ধ হয়ে যেত। একেবারে বাঘে তেঁতুলে লড়াই।
সেই বাবা আমায়
কোলে নিয়ে টিভি নয় , মোবাইলে গল্প টল্প না , আমার ফেভারিট ডেভ এন্ড এভা আর চু চু
টিভি শোনাচ্ছে। আমি তো অবাক। টিভিটা তাও আমার কাছে এপ্রোচেবল। কিন্তু ফোনটা একেবারেই নয়। ফোন পেলেই আমার ফোনের ওপর ওয়ান টু থ্রি
করতে ইচ্ছা করে। আর তাতেই ফোনটা
ডিসেবল হয়ে যায়। একবার তো মায়ের
ফোন উড়িয়েই দিয়েছিলাম। তার পর থেকে বাবা সেফ গেম খেলে। কিছুতেই আমার হাতে দিতে চায় না। এখন যখন বাবা নিজে যেচে আমাকে ফোন দিয়ে
পাশে বসিয়ে দিলো তখন আমার কাছে কেসটা বেশ জটিল হয়ে গেলো।
তার ওপর আছে
হেডফোনের হ্যাপা। বাবার কাছে
অন্তত এক শূন্য শূন্য হ্যাক্স হেডফোন আছে। কোনটা আটকায় ,
কোনটা ঝোলে , কোনটা মাথার ওপর দিয়ে , কোনটা মাথার পেছন দিয়ে - বাবা সমস্ত কিছু
ট্রাই করতে লাগলো। যেটা কানে
আটকায় সেটা সুড়সুড়ি লাগছে , যেটা ঝোলে সেটা ঝুলছে না কান ছোট বলে , যেটা মাথার
পেছন দিয়ে সেটাও টেকনিক্যালি আটকাতেই হয় , আর যেটা মাথার ওপর দিয়ে সেটা ভারী - সব
মিলিয়ে ক্যাওস চূড়ান্ত। শেষমেশ আমার
জন্মের আগের কোনো একটা মিনিয়ন দেওয়া হলুদ হেডফোন বাবা খুঁজে বের করলো , যেটা হালকা
, আমার কানের সাথে ফিট হয় আর আমিও বেশ অনেকক্ষন পরে থাকতে পারি। আমার বেশ মজা লাগছিলো। কারণ ওটা পড়লেই সমস্ত আওয়াজ বন্ধ হয়ে
যায় চারপাশ থেকে। আর আমি একাত্ম
হয়ে যাই বিংগোর সাথে। কিন্তু আমি এটা
বুঝতে পারলাম না , বাবা কিছুতেই আমাকে হেডফোন খুলতে দেবে না। যখনই আমি হেডফোন খুলে রাখতে চাইছি তখন
আবার পরিয়ে দিচ্ছে শুধু না , তিন চার বার খুলে রাখলে ফোনটোন বন্ধ করে কাঁচুমাচু
মুখ করে হতাশ হয়ে বসে থাকছে।
ব্যাপারটা বুঝতে
পারলাম বেশ কিছুদিন পর। সেদিন বিকালে
ঘুম থেকে উঠে মা আবার "কুইন" আর বাবা "কিং" হয়ে গেলো। কি সুন্দর লাগছিলো দুজনকে। বাবা হঠাৎ করে দেখি ঢিপ করে আমার সামনে
পরে গিয়ে আমার পা চেপে ধরে বললো , "আজকে চন্দ্রবিন্দু শুনতে দিস প্লিস।"
আমি তো ব্যাপারটা বুঝতেই পারলাম না। সং শোনে, কথা
শোনে , স্টোরি শোনে - কিন্তু এই চন্দ্রুবিন্দু কি করে শুনতে হয়। আর যদি শুনতেই হয় তাহলে বাবা কেন এরকম
করছে। শুনলেই হলো। তার ওপর দাঁতভাঙ্গা নাম।
জানিনা বাপু কি জিনিস।
গাড়িতে চেপে
অনেকক্ষন গিয়ে তবে হাজির হলাম ঠিক সেইরকম জায়গায় যেখানে দুর্গাপূজায় গিয়েছিলাম। সেটআপ ঠিক সেই রকম। কিন্ত স্টেজে তো কিং কুইনরা নেই। কে একটা মা কে বললো যে পূজা হয়ে গেছে। ঠাকুর নাকি প্যাক হয়ে গেছে। কি এর মানে? ঠাকুর আবার প্যাক হয়ে যায়
নাকি। ম আমাকে নিয়ে উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়লো
স্টেজের দিকে। গিয়ে দেখি
সত্যি ওই কালো "কুইন"টা ঢুকে যাচ্ছে বাক্সের মধ্যে। আর এই জিভ বার করা " কুইন "
টাকে তো রোজ দেখি বাড়ির দেয়ালে ঝুলতে। বেশ বেরিয়ে
খেলছিল। আবার বকে টকে বাক্সে পুরে দিলো। আমি জানি ওঁর কষ্ট। বড় হলে আমি আর ওদের
বাক্সে পুড়তে দেব না।
সে যাইহোক ,
তারপর বেরিয়ে এসে একটা ঘরে ঢুকলাম যেখানে নাকি খাবার দেওয়া হচ্ছে। সবাই বসে বসে খাচ্ছে - আর আমরা তিন
মক্কেল হাঁদার মতো লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। আমি এতো বিরক্ত
হয়ে গেছিলাম যে আবার শুয়ে পড়লাম মেঝেতে। বাবা উপায় না
দেখে সোজা আমাকে কাঁধের ওপর তুলে নিলো। কাঁধের ওপর উঠে
দেখি সারা ঘরে থিক থিক করছে লোক। এত লোক এক
জায়গায় অনেকদিন দেখিনি। একটু ভয়ে শান্ত
মেরে গেলাম। একটু পরে বাবা
একটা পাঁপড় ধরিয়ে দিলো সেটা খেতে খেতেই মা বাবার খাওয়া শেষ।
আবার আমাকে নিয়ে
গিয়ে ঢোকালো সেই অন্ধকার ঘরে। আমার তখন বেশ
খিদে পেয়েছে। চেয়ারে বসে বসে
প্রথমে এক বোতল মিল্ক সাঁটালাম। কিন্তু মিল্ক এ
কি আর পেট ভরে। তার ওপর আবার
আমাকে দু দিক দিয়ে আটকে দিয়েছে। একদিকে মা ,
একদিকে বাবা। আমি এক একবার
পায়ের তলা দিয়ে যেতে
আরম্ভ করতে দেখলাম বাবা আমাকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে নিজের হাত দিয়ে সিটবেল্ট বানিয়ে
দিলো। নট নড়ন নট চরণ। তারপর দেখি মা এগস বার করেছে। আই লাভ এগস। কিন্তু ওই অন্ধকারে এগস ঠিক ভালো
লাগছিলো না। তখন বাবা ব্যাগ
থেকে বার করলো সেই হেডফোন। আমার মাথায়
লাগিয়ে দিতেই সমস্ত আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলো আর কানে ভেসে এলো , রেন রেন গো এওয়ে।
এগস খাওয়া শেষ
হতে একবার মাথা তুলে দেখি বাবা মা দুজনেই মাথা আর পা নাচাচ্ছে। উঁকি মেরে দেখলাম স্টেজে কয়েকজন দাঁড়িয়ে
ভাওইন নিয়ে কিছু করছে। আর সবাই ফোন
তুলে আলো দেখাচ্ছে . সত্যি এই
গ্রোন আপস দের কাছে কিছু শেখাটা আমার এতো রিস্কি মনে হয় আর কি বলবো। সিওর এরা ভুল শেখায় আর তাতেই আমাদের
লার্নিং ডিলে হয়। আমি বরঞ্চ ফাইভ
লিটিল মানকি তে মনোযোগ করি। তাতেও বিপত্তি। যেই রাইমস এ বলেছে "ইফ ইউ আর
হ্যাপি - সে হুররে " আমিও আমার প্রথামত দু হাত তুলে
চিৎকার করে উঠলাম "হুররে" আর সামনে পেছনে
সবাই আমার দিকে ঘুরে তাকালো। আর বাবা মুখের
কাছে আঙ্গুল নিয়ে "শ - শ - শ - শ - শ - শ " করে দিলো গান পাল্টে। কিরকম মাথাটা গরম হয়ে যায়।
সেই গরম মাথা
নিয়ে বেশ কিছুক্ষন চলার পর ফিল করলাম কানটা বেশ গরম হয়ে গেছে। হেডফোনটা খুলে দিতেই কি সাংঘাতিক আওয়াজ
কানে এসে ঢুকলো। যার সুর নেই
তাল নেই , সবাই চ্যাঁচাচ্ছে। এর মাঝেই সবাই
চুপ করে গেলো , আর একটা লোক স্টেজে দাঁড়িয়ে বকেই চললো বকেয়া চললো। আমি বিরক্ত হয়ে সিটের ওপর দাঁড়িয়ে
নাম্বারিংটা আবার আউড়ে নিলাম। কিন্তু বাবা
ঘাড় ধরে নামিয়ে বসিয়ে দিয়ে আবার কানে হেডফোন গুঁজে দিলো।
কতক্ষন এরকম
খোলা পড়ানো চললো জানিনা। হঠাৎ দেখলাম
বাবা হেডফোনটোন খুলে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো। আর তারপর আমাকে
কাঁধে তুলে নিয়ে নাচতে শুরু করলো। আমি বুঝতে
পারছিলাম না হেডফোন তো আমার কানে ছিল। বাবার মাথা গরম
কেন হয়ে গেলো। আমি বাবার
মাথায় হাত রেখে বললাম , "ঠান্ডা হয় বাবা। " কিন্ত বাবার কাছে সেটা আমার
কান্না হয়ে পৌছালো। ব্যাস , মা
আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে লেডিস বাথরুমে ঢুকিয়ে দিলো। এখানেই শেষ নয়। যেহেতু বেবি চেঞ্জিং স্টেশন নেই , মা
আমার চেঞ্জিং ম্যাটটা ঠিক টয়লেটের সামনে মাটির ওপর পেতে বিন্দাস চেঞ্জ করে দিলো
আমি প্রতিবাদ করার আগে।
যখন আমরা ফিরে
এলাম তখন দেখি সবাই শান্ত। হল প্রায় ফাঁকা
, আর অন্ধকারে বাবার বত্রিশটা দাঁত দেখা যাচ্ছে। আমাকে কোলে
নিয়ে বললো , "থ্যাংক ইউ আধ্যান।" থ্যাংক ইউ শুনতে কার না ভালো লাগে। কিন্ত কারণ জানতে পারলে আরো ভালো লাগতো। যাইহোক , আমাকে এরপর টানতে টানতে নিয়ে
গেলো যেখানে ছবি তোলানো হচ্ছে একটা আমার থেকেও রোগ একটা লোকের সাথে। আমার মোটেও ইচ্ছা করছিলো না ওর সাথে ছবি তোলানোর। আমার তখন চোখ স্টেজে ওই লাল নীল আলো
গুলোর ওপর। সেগুলোর দিকে
এগোতে গিয়ে তার ফার জড়িয়ে উল্টে পরে যা তা প্রেস্টিজ পাংচার করে চলে এলাম।
এটা বুঝতে
পারলাম ওই হেডফোন , ওই মোবাইলে ভিডিও দেখিয়ে বাবা আমাকে অতক্ষণ চেয়ারে বসিয়ে
রেখেছিলো। মানুষকে মুরগি
করা ভালো না হলেও , এই ধরণের এন্টারটেইনমেন্ট আমার ভালোই লাগে। বোথ উইন উইন। আর তাতেই সুন্দর ভাবে কাটানো হলো আমাদের
একমাত্র কালীপূজা।