Sunday, February 3, 2019

(৫৬) আধ্যানের ডায়েরি - বাংলা কি কঠিন



বাংলা না শেখালে চলে।  ছেলে যদি বাংলায় না কথা বলে তাহলে মাথা কাটা যাবে বাবার।  তাই বাবার চেষ্টা অন্তহীন।  ইংরেজি তো শেখাতে  হবে না , এমনি এমনি শিখে যাবে।  কিন্তু বাংলা শেখাতে দম ছুটে যাবে।  বাবা এসব অনেক কিছুই মনে মনে বিড়বিড় করে মায়ের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতো।  কিন্তু সাহস পেতো না আমাকে বাংলা শেখানোর।  কোথায় যেন পড়েছিল নাকি এখানে সবাই বাড়িতে ইংলিশ এ কথা বলে, বাচ্চাদের জন্যে।  কিন্তু ব্যাপারটা যখন জানতে পারলো পুরো উল্টো।  মানে ডাক্তারই বললো যে বাড়িতে দুটো ভাষাই বলে চলো তখন গিয়ে বাবা কোকুন থেকে বেরোলো।

আর বেরিয়ে আমাকে ঘ্যাঁক করে কামড়ে দিলো বাংলায় ঘষামাজা দাঁত দিয়ে।  কেসটা শুরু হয়েছিল মাম্মি ড্যাডির জায়গায় মা বাবা দিয়ে।  বিশেষ কাজ হয় নি।  কারণ জনি জনি ইয়েস পাপা মাঝে ঢুকে গিয়ে আমি বেশ গোলমাল করে ফেলেছিলাম।  তারপর যেদিন বাবা লিখলো এম এ , এম এ , মামা , সেদিনের পর থেকে মা কে মামী মামী করে ধেয়ে যেতে লাগলাম। আর তার কয়েকদিন পর থেকে ড্যাডি শার্ক ডু ডু ডুডু।  বাবা ছেড়ে দিলো।  আর বাবা বলতে বলে না বাবা।  ড্যাডি হয়েই খুশি।

কিন্তু নাম্বার নিয়ে শুরু হলো বাবার।  বাবাই শুরু করেছে আমার নম্বর শেখার খেলা।  সেই কতদিন আগে ফোর ফিশ "গ্লুপ - গ্লুপ - গ্লুপ -গ্লুপ " করে "ফো" বেরিয়েছিল।  এখন সেই ফো হান্ড্রেড পর্যন্ত পৌঁছেচে বাবার জন্য।  একটা বিশাল বড় বোর্ড আর মার্কার কিনে এনেছে বাবা। আমার থেকেও বড়।  প্রথমে বাবা ওতে ওয়ান টু টেন লিখতো।  তারপর ইয়াভেন টু টুনটি লিখতে আরম্ভ করলো।  তারপর একে একে হান্ড্রেড।  যদিও এখনও পুরো আয়ত্তে আনতে পারিনি।  কিন্তু প্র্যাক্টিস চলছে বেশ দ্রুতগতিতে।

ঠিক যেরকম একই সময় একই জিনিস করলে সেই সময়ে সেই জিনিস মনে রাখতে সুবিধা হয়।  আমার ইংলিশ নাম্বার শেখার মতো বাংলাও শুরু হয়েছিল নাম্বার দিয়ে। একই সময়ে , একই জায়গায়, একই ভাবে।  আমার স্নান হয়ে গেলে , সারা বাথরুম ধোয়া হয়ে যায়।  আর ধোয়াঁয় মিররটা আরো ধোঁয়া ধোঁয়া  হয়ে যায় , কিচ্চ্চু দেখা যায়না।  বাবা রোজ ওখানে বাংলা নাম্বার লিখতে থাকে আর নাম্বারের সংখ্যা বাড়াতে থাকে।

কিন্তু ব্যাপারটা খুব কঠিন।  ইংলিশ এর মতো সহজ তো নয়ই।  ইংলিশ এ তো কোনো প্রবলেমই নেই।  ওয়ান টু টোয়েন্টির পরে তো সব  রিপিটেশন আর রিপিটেশন।  দুটো জুড়ে দিলেই হয়।  টোয়েন্টি ওয়ান , থার্টি টু , ফোর্টি থ্রি ,  ফিকটি ফোর , সিকস্তি ফাইভ। কিন্তু বাংলায় সব আলাদা আলাদা।  আমি প্রথমে শিখলাম  এক , দো , পিম , চ্যার , পাচ , ছৌ, স্যাট , আট , নৌ , ডস , ইগারো , ব্যারো ।  কিন্তু তারপর আর কিছুতেই ঠিক বেরোচ্ছিলনা  অনেক দিন। ইগারো , ব্যারো , প্যারো , চব্বে , পোঁদেরো , ষোলো,  সতেরো , আঠেরো , উনিশ , কুই।  রোজ বলে বলে ঠিক যখন করলাম তারপর আমাকে নিয়ে গেলো কুড়ির ওপারে।  আমি ভাবলাম টোয়েন্টির মতোই  কুড়ি এক , কুড়ি দুই হবে।  কিন্তু না , একুশ, ব্যাইস , পেয়িস , চব্বে, পঁচিশ , ছাব্বিশ , স্যাটাস , আঠাশ , উটিরিশ , তিরিশ।  আবার ছিল এক্সপেক্টেশান।  ব্যাপারটা সিমপ্লিফাই হবে।  কিন্তু হলো না আমার ভুলে তিনটা পিমই থেকে গেলো , তেরোটা প্যারোই থেকে গেলো আর তেইশ থেকে গেলো পেয়িস।  তাই যখন সব কিছুতেই পি আছে।  এখানেও শুরু হলো , পেকতিশ , পতিরিশ, চব্বে , পঁয়তিরিশ , ছতিরিশ , শাতিরিশ , আতিরিশ , উচলিশ , চল্লিশ।

চল্লিশ এর কাঁটা পেরোতে আবার গেলো সব গুবলেট হয়ে।  আগে দুই নিয়ে যতটা কনফিউসড হয়নি তার থেকে অনেক বেশি কনফিউসড হয়ে গেলাম যখন লিখলো ৪২।  এটা তো এইটি টু।  এটা যেই লিখতে আরম্ভ করলো , আমার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে লাগলো  , এইটি থ্রি , এইটি ফোর , এইটি ফাইভ।  কিছুতেই এগোতে পারছিলাম না বলে বাবা সোজা চলে গেলো পেতাল্লিস , চুয়াল্লিশ, পঁতাল্লিশ , ছেল্লিস , সাতোচোচোল্লিশ , আট্টালিশ , উঁচঞ্চাস , পঞ্চাশ। ....ইয়ে-য়ে-য়ে-য়ে-য়ে-য়ে-য়ে-য়ে-য়ে-য়ে-য়ে  . এই ইয়ের মানে কি জানো।  আজ তবে এটুকুই থাক।  কিন্তু বাবা তো ছাড়ার পাত্র নয়।  তাই পুরো মিরর জুড়ে লেখাগুলোর ওপর আবার বড় বড় করে লিখে দিতো এক শূন্য শূন্য হ্যাক্সো আর ওয়ান জিরো জিরো হান্ড্রেড। 

এই করতে করতে নাম্বারগুলোর নলেজ হয়তো বেড়ে যাবে কিন্তু বাংলা ওয়ার্ড শেখাতে বাবা খুব চাপে পরে গেছে।  আর আমাকেও চাপে ফেলে দিয়েছে।  সেদিন তো শেপস নিয়ে বসেছিল।  আমি তো হাঁ।  প্রথমে বললো গোল , আমি ভাবলাম বাহ্।  তারপর বললো চৌকো।  আমি ভাবলাম যা তা তো।  কিন্তু তারপর নিজেকে ঠিক করে নিয়ে বললো ওটা ভুলছিলো - আয়তক্ষেত্র - বর্গক্ষেত্র রেকট্যাংগল আর স্কয়ার।  আবার ওদিক থেকে মা বললো , না না ওটা চতুর্ভূজ।  সমবাহু আর সমকোণী।  বাবা তেড়েমেরে বলে উঠলো তাহেল স্কয়ার কি সমকোণী নয়।  মা পালাতে আরেকটা বোমা ফেললো বাবা  - হৃদয়াকার।  কেলো করেছে , এ আবার কি।  আবার হীরকাকার , কোন কাকার ? বাবা কিছুক্ষন পরেই ছেড়েছুড়ে দিয়ে বললো ইয়ে-য়ে-য়ে-য়ে-য়ে-য়ে-য়ে-য়ে-য়ে মানে আজ তবে এইটুকু থাক।

কিন্তু বাবা হাত তোলেনি।  হাত তুলতেই বডি পার্টস এর দিকে নজর পড়েছে আর মনে পড়েছে হেড শোল্ডার নিজ এন্ড টোজ এর কথা।  একদিন দেখি গুনগুন করছে - মাথা , কাঁধ , হাঁটু,  পায়ের পাতা , চোখ - এবং কান এবং - মুখ - এবং নাক।  কি বিচ্ছিরি শোনাচ্ছিল সে আর কি বলবো।  নানা কিছু ঘুরিয়ে টুরিয়ে ছন্দে ফেলার চেষ্টা করছিলো।  কিন্ত আরো জঘন্য জঘন্য ছড়া বেরিয়ে আসছিলো।  বেশ কিছুক্ষন পর ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে বসে পড়লো।  আমিও বললাম , "এই যাঃ "

" এই যাঃ " আর " চল চল " আমি আগে শিখেছি।  কিন্তু রিসেন্টলি আমি "ওহ নো " বলতে শিখে মাঝে মাঝেই এই যাঃ কে রিপ্লেস করে দিচ্ছি।  কিন্তু বাবা মেক শিওর করছে যে আমি এই যাঃ বলি।  বাবা আজকাল আমার সাথে যে কোথায় বলে, সবকিছু দুটো ভাষায় বলে।  যেমন ধরো , আধ্যান তুমি কি করছো ? হোয়াট আর ইউ ডুইং আধ্যান  ? বা গেট দা বল।  বলটা দাও।  চল চল স্নানে চল , লেটস টেক দা শাওয়ার।  আমি পাগল হয়ে যাই প্রসেস করতে।  এখনো আমার কাছে বেশির ভাগটাই বেবি ল্যাঙ্গুএজ দিয়ে চলে।  তাতেও যখন সমানে বাবা দুটো ল্যাঙ্গুয়েজে কথা বলে যায় তখন মাথা কিরকম ঘুরতে থাকে বোঝো।

আমি তো বেশ কিছু জায়গায় ইগনোর মেরে দিই।  যার ফলে বার বার নো - নো - নো - নো করতে থাকলেও আমি সারা দিই না।  নিজের কাজ করে বেরিয়ে যাই।  সবসময় পাত্তা দিতে হবে এরকম মাথার দিব্যি কে দিয়েছে।  তারপর আবার এই দুই ভাষাতে।


 

আধ্যানের ডায়েরির আগের পাতাগুলো