Friday, December 6, 2019

সত্যিটা কি ?






আহা বেশ বেশ বেশ। চার চারটে রেপিস্ট এক সাথে সাবাড়। আহা বেশ বেশ বেশ। চার জনকে নিয়ে যাওয়া হলো ক্রাইম সিনে। আহা বেশ বেশ বেশ। এক সাথে চার জন পালাতে চাইলো। দারুন। সবাইকে একসাথে গুলি করে মেরে দেওয়া হলো। কি দারুন ব্যাপার। ক্রিমিনাল গট পানিশ্ড ইন লোকেশন অফ দেয়ার ক্রাইম। কিরকম লোম খাড়া হয়ে যায়। জাস্টিস ও চোখ থেকে কাপড় সরিয়ে , নিক্তি ফেলে বলছে , "অ্যাঁ" ।

হবে নাই বা কেন। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। অব তক ছাপ্পান দেখি আসে পাশে। পুলিশটার নাম কি ভাই। মেয়েরা তো ছবি রাখবে পকেটে , শিবের ছবির পেছনে ল্যামিনেট করে। ধনঞ্জয়ের ফাঁসির পর ব্যাপারটা সফ্ট ছিল। এটা এক্কেবারে মনের মতো। রেপিস্টদের ঠিক এরকমই হওয়া উচিত। ওদের বাঁচার অধিকার নেই। তুমি সাস্পেক্ট তাই তুমি খুনি। সমস্ত গলা মোমবাতির শপথ , আই লাভ মাই পুলিশ।

আই লাভ রাজনীতি টু। সত্যি এরা শ্রদ্ধার পাত্র। প্রতি দিন অন্তত ৯০টা মেয়ে রেপ হয়ে যাচ্ছে। মোমবাতি কজন পাচ্ছে। বছরে গড়ে ৫ টা। আর ফাঁসি হচ্ছে কজনের , জানিনা। যখনি সমস্যা সামনে এনে চোখ ঘুরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয় , তখনই হয় নারীদের ওপর অত্যাচার। সারা দেশে অনেক সমস্যা। সত্যি বলছি অনেক সমস্যা। এতো বড় সমস্যায় একটা গোষ্ঠী কখনো একসাথে পড়েনি। অদ্ভুত এই সমস্যার সময় , মানুষকে আর মানুষের মাথা ঘোরানোর একমাত্র অস্ত্র চুলকে ঘা করে মলম লাগানো। মলম লাগানো চলছে। মি টু তে ফাঁসা হাজার হাজার সেলিব্রিটির এনকাউন্টার হবে না , নিত্যানন্দ আইল্যান্ড কিনবে আর ক্রাইম সিনে মুখ থুবড়ে পড়বে যার পেছনে রাজনীতি নেই।

কি সহজ মানুষকে মেরে ফেলা। কি সহজ বদলা নিয়েছি বলে নৃত্য করা। ভাবুক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে কবিতা লিখতে ইচ্ছা করলো। পাশ দিয়ে যাওয়া একটা পিঁপড়ে চলে যেতে চাইছিলো। "তুই আমাকে কামড়াতে পারিস আর হয়তো কাউকে কামড়েছিস " দিলাম টিপে মেরে। মানুষের মতো নৃশংস কেউ হয় না। আর নৃশংসতার কারণ একেবারেই জানা যায়না। রেপ মোটিভ জানা , জনগণের শিক্ষাদান , ছেলেকে মানুষ করে তোলা , নারীর সমানাধিকার। সব বড় কঠিন ও দীর্ঘ প্রসেস। শুধু উত্তেজনা চাই , উত্তেজনা। রেপ হয়েছে , মোমবাতি জ্বালাও। রেপিস্ট এনকাউন্টার হয়েছে , বাড়িতে বাড়িতে মিষ্টি দিয়ে আসো।

মানুষ কখনো দৌড়াতে দৌড়াতে ভাবতে পারেনা। তাই বুদ্ধিমানেরা ( আমাদের রাজনীতিকরা ) তাই সবাইকে দৌড়াতে সাহায্য করে। একবার বসে ভাবুন। মানুষ হিসেবে। ওই মহিলার কথা যে মারা গেছে , একবার ভাবুন সেই মহিলাদের কথা যারা মারা যায়নি - লড়ে যাচ্ছে , একবার ভাবুন সেই মহিলাদের কথা যারা ঢোক গিলে বার বার রেপ হওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে , আর তারপর ভাবুন শেষ তাদের কথা কতবার ভেবেছেন। ক্রিসমাসে কেক খাবেন না , থার্টি ফার্স্ট এ মদ গিলে উদোম নৃত্য করবেন না , ভ্যালেন্টাইনে প্রেম খুঁজে বেড়াবেন না ---- সব ছেড়ে জ্বালান দেখি মোমবাতি। রোজ। ওই নব্বই টা রেপের জন্য , যা আজ হয়ে গেলো। পারবেন না , কারণ রাজনীতিকরা চায় না। আর আপনি মুরগি। আর তাই প্রমান করে দিয়ে গেলো উন্নাও এর মেয়েটি। আপনি তো বুঝতেও পারলেন না আপনার শরীরই আপনাকে খেতে দেওয়া হয়েছে।

ভেবে দেখুন এই এনকাউন্টারের কারণ। বেশি নাচবেন না। কিচ্ছু ভালো হয়নি। রেপিস্ট একটা মানসিকতা, এর প্রতিকার পিটিয়ে হয় না। হয় ক্রমপরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে। হায়দারাবাদের লোকগুলোর পয়সা ছিলো না তাই উন্নাওয়ের পয়সাওয়ালা ও ক্ষমতাসীন বাবার ছেলের রেপের ঘটনা চেপে দেওয়ার জন্য এই ঘটনার শিকার হলো। ভাবতে পারেনি যে মেয়েটা স্টেটমেন্ট রেকর্ড করানোর মতো ক্ষমতায় থাকবে। খবর পেতেই বাবার পার্টি অফিসে ফোন। পার্টির নাম আগুন লাগার আগেই ঘুরিয়ে দিতে হবে নজর অন্য দিকে। খোঁজ খোঁজ , কাকে কাটা যায়। যাকে কাটলে সারা দেশের ধন্যি ধন্যি তে স্টেটমেন্ট এর গোঙানি চাপা পরে যায়। দ্রুতগতিতে দিল্লী থেকে হায়দরাবাদে আদেশ পাঠিয়ে দেওয়া হলো এবং চার জনের জীবন নিয়ে নেওয়া হলো। এ কল্পনা যেন সত্য না হয়। কিন্তু খটকা আসে সকাল সাড়ে ছটার সময় নিয়ে। সে থাক, যদি সত্যি সত্যি পুলিশ প্রোগ্রেসিভ হয়, তাহলে কয়েকদিনের মধ্যেই উন্নাও এর রেপিস্ট দেরও একই ব্যবস্থা দেখতে চাই। কিন্ত শিক্ষার কিছু ফল আছে। একটু হলেও ভবিষ্যৎ দেখায়। কিস্যু হবে না।

আমি জানি ওপরে উঠতে হলে অনেকের রক্তে পথ পিচ্ছিল করে উপরে উঠতে হয়। তাই এই রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে আমি কিছু বলতে চাইনা। কিন্ত কোল্যাটারাল ড্যামেজের নাম করে নিজের আমোদের ভিকটিম কে বলি দেওয়াকে সমর্থন করতে পারিনা। মানুষ বড় অসহায়। এটা ক্ষমতার লড়াই, আর জনগণ এখানে ফেক গণতন্ত্রে বেঁচে আছে। এই হতাশায় শেষ করলাম , " আজ অগর তুম জিন্দা হো , কল কে লিয়ে মালা জপনা। "

যায় যায় হিন্দ

Sunday, October 27, 2019

(৫৫) আধ্যানের ডায়েরি - কালীপূজা (২০১৮)


(৫৫) আধ্যানের ডায়েরি - কালীপূজা 


দুর্গাপূজা শেষ হওয়ার পর থেকেই বাবার মাথায় কিছু একটা ভূত চেপেছে বুঝতে পারছি কিন্ত ভূতটা ঠিক কি সেটা বুঝতে পারছি না।  যে বাবা আমার টিভি দেখার সবথেকে বোরো নিন্দুক সে কি করে আমাকে টিভি দেখার জন্য উৎসাহিত করে।  এই তো সেদিন একটা লার্নিং মডিউল চলছিল।  এনিম্যাল সাউন্ড।  পর পর সমস্ত জন্তু জানোয়াররা আসছিলো আর তাদের ভাষায় আই লাভ ইউ বলে চলে যাচ্ছিলো।  আমিও শুনছিলাম আর শিখছিলাম।  নায়ন থেকে মাক্কী, সবার আওয়াজ আমি জানি।  আর সাথে সাথে বলতেও থাকি।  কিন্তু বাবা বাথরুম থেকে বেরিয়েই ডায়নোসর হয়ে গেলো।  আর ফট করে টিভিটাও বন্ধ হয়ে গেলো।  মা আগেও বলেছে বাবাকে , মাঝেখানে বন্ধ করবে না।  ইট সাউন্ডস লাইক।  বাবা যখন বলে উইল কল ইউ লেটার , আই এম ইন মিডল অফ সামথিং।  কিন্তু কে কার কথা শোনে। 

বাবা ভাবে আমি একটা যন্ত্র।  টিভি চালু তো আমার মুখ খুলে যাবে আর আমিও হা হা করে খেয়ে নেবো।  ব্যাপারটা চলছিল কিন্তু কতদিন আর চলে।  আজকাল টিভিতে গানের সাথে সাথে নানা ধরণের স্টোরি টেলিং বা ওয়ার্ড বলা হয়। আর নার্সারি রাইমস নয়।  এবার চাই কিছু আসল। কিন্তু এই স্টোরিগুলো তো বাবাকে খুঁজে খুঁজে বার করতে হয়।  আর একটার পর পর একটা স্ত্রী চলতে থাকে না।  তার  ওপর আমার ভালোলাগা না লাগাও তো একটা ব্যাপার আছে।  সবকিছু আমার ভালো লাগবে সেরকম তো আর কথা নেই।  তাই আমিও ঠোঁট টিপে বসে থাকতাম যখন গল্প পাল্টানোর সময় হতো।  আর বাবা সেই শেষ চামচের জন্য বসে থাকতো যেটা মুখে ঢোকার সাথে সাথে ধপ করে টিভি বন্ধ হয়ে যেত।  একেবারে বাঘে তেঁতুলে লড়াই। 

সেই বাবা আমায় কোলে নিয়ে টিভি নয় , মোবাইলে গল্প টল্প না , আমার ফেভারিট ডেভ এন্ড এভা আর চু চু টিভি শোনাচ্ছে।  আমি তো অবাক।  টিভিটা তাও আমার কাছে এপ্রোচেবল।  কিন্তু ফোনটা একেবারেই নয়।  ফোন পেলেই আমার ফোনের ওপর ওয়ান টু থ্রি করতে ইচ্ছা করে।  আর তাতেই ফোনটা ডিসেবল হয়ে যায়।  একবার তো মায়ের ফোন উড়িয়েই দিয়েছিলাম। তার পর থেকে বাবা সেফ গেম খেলে।  কিছুতেই আমার হাতে দিতে চায় না।  এখন যখন বাবা নিজে যেচে আমাকে ফোন দিয়ে পাশে বসিয়ে দিলো তখন আমার কাছে কেসটা বেশ জটিল হয়ে গেলো। 

তার ওপর আছে হেডফোনের হ্যাপা।  বাবার কাছে অন্তত এক শূন্য শূন্য হ্যাক্স হেডফোন আছে।  কোনটা আটকায় , কোনটা ঝোলে , কোনটা মাথার ওপর দিয়ে , কোনটা মাথার পেছন দিয়ে - বাবা সমস্ত কিছু ট্রাই করতে লাগলো।  যেটা কানে আটকায় সেটা সুড়সুড়ি লাগছে , যেটা ঝোলে সেটা ঝুলছে না কান ছোট বলে , যেটা মাথার পেছন দিয়ে সেটাও টেকনিক্যালি আটকাতেই হয় , আর যেটা মাথার ওপর দিয়ে সেটা ভারী - সব মিলিয়ে ক্যাওস চূড়ান্ত।  শেষমেশ আমার জন্মের আগের কোনো একটা মিনিয়ন দেওয়া হলুদ হেডফোন বাবা খুঁজে বের করলো , যেটা হালকা , আমার কানের সাথে ফিট হয় আর আমিও বেশ অনেকক্ষন পরে থাকতে পারি।  আমার বেশ মজা লাগছিলো।  কারণ ওটা পড়লেই সমস্ত আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায় চারপাশ থেকে।  আর আমি একাত্ম হয়ে যাই বিংগোর সাথে।  কিন্তু আমি এটা বুঝতে পারলাম না , বাবা কিছুতেই আমাকে হেডফোন খুলতে দেবে না।  যখনই আমি হেডফোন খুলে রাখতে চাইছি তখন আবার পরিয়ে দিচ্ছে শুধু না , তিন চার বার খুলে রাখলে ফোনটোন বন্ধ করে কাঁচুমাচু মুখ করে হতাশ হয়ে বসে থাকছে। 

ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম বেশ কিছুদিন পর।  সেদিন বিকালে ঘুম থেকে উঠে মা আবার "কুইন" আর বাবা "কিং" হয়ে গেলো।  কি সুন্দর লাগছিলো দুজনকে।  বাবা হঠাৎ করে দেখি ঢিপ করে আমার সামনে পরে গিয়ে আমার পা চেপে ধরে বললো , "আজকে চন্দ্রবিন্দু শুনতে দিস প্লিস।" আমি তো ব্যাপারটা বুঝতেই পারলাম না।  সং শোনে, কথা শোনে , স্টোরি শোনে - কিন্তু এই চন্দ্রুবিন্দু কি করে শুনতে হয়।  আর যদি শুনতেই হয় তাহলে বাবা কেন এরকম করছে।  শুনলেই হলো। তার ওপর দাঁতভাঙ্গা নাম। জানিনা বাপু কি জিনিস। 

গাড়িতে চেপে অনেকক্ষন গিয়ে তবে হাজির হলাম ঠিক সেইরকম জায়গায় যেখানে দুর্গাপূজায় গিয়েছিলাম।  সেটআপ ঠিক সেই রকম।  কিন্ত স্টেজে তো কিং কুইনরা নেই।  কে একটা মা কে বললো যে পূজা হয়ে গেছে।  ঠাকুর নাকি প্যাক হয়ে গেছে।  কি এর মানে? ঠাকুর আবার প্যাক হয়ে যায় নাকি।  ম আমাকে নিয়ে উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়লো স্টেজের দিকে।  গিয়ে দেখি সত্যি ওই কালো "কুইন"টা ঢুকে যাচ্ছে বাক্সের মধ্যে।  আর এই জিভ বার করা " কুইন " টাকে তো রোজ দেখি বাড়ির দেয়ালে ঝুলতে।  বেশ বেরিয়ে খেলছিল।  আবার বকে টকে বাক্সে পুরে দিলো।  আমি জানি ওঁর কষ্ট। বড় হলে আমি আর ওদের বাক্সে পুড়তে দেব না। 

সে যাইহোক , তারপর বেরিয়ে এসে একটা ঘরে ঢুকলাম যেখানে নাকি খাবার দেওয়া হচ্ছে।  সবাই বসে বসে খাচ্ছে - আর আমরা তিন মক্কেল হাঁদার মতো লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।  আমি এতো বিরক্ত হয়ে গেছিলাম যে আবার শুয়ে পড়লাম মেঝেতে।  বাবা উপায় না দেখে সোজা আমাকে কাঁধের ওপর তুলে নিলো।  কাঁধের ওপর উঠে দেখি সারা ঘরে থিক থিক করছে লোক।  এত লোক এক জায়গায় অনেকদিন দেখিনি।  একটু ভয়ে শান্ত মেরে গেলাম।  একটু পরে বাবা একটা পাঁপড় ধরিয়ে দিলো সেটা খেতে খেতেই মা বাবার খাওয়া শেষ। 


আবার আমাকে নিয়ে গিয়ে ঢোকালো সেই অন্ধকার ঘরে।  আমার তখন বেশ খিদে পেয়েছে।  চেয়ারে বসে বসে প্রথমে এক বোতল মিল্ক সাঁটালাম।  কিন্তু মিল্ক এ কি আর পেট ভরে।  তার ওপর আবার আমাকে দু দিক দিয়ে আটকে দিয়েছে।  একদিকে মা , একদিকে বাবা।  আমি এক একবার পায়ের তলা  দিয়ে যেতে আরম্ভ করতে দেখলাম বাবা আমাকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে নিজের হাত দিয়ে সিটবেল্ট বানিয়ে দিলো।  নট নড়ন নট চরণ।  তারপর দেখি মা এগস বার করেছে।  আই লাভ এগস।  কিন্তু ওই অন্ধকারে এগস ঠিক ভালো লাগছিলো না।  তখন বাবা ব্যাগ থেকে বার করলো সেই হেডফোন।  আমার মাথায় লাগিয়ে দিতেই সমস্ত আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলো আর কানে ভেসে এলো , রেন রেন গো এওয়ে। 

এগস খাওয়া শেষ হতে একবার মাথা তুলে দেখি বাবা মা দুজনেই মাথা আর পা নাচাচ্ছে।  উঁকি মেরে দেখলাম স্টেজে কয়েকজন দাঁড়িয়ে ভাওইন নিয়ে কিছু করছে।  আর সবাই ফোন তুলে আলো দেখাচ্ছে  . সত্যি এই গ্রোন আপস দের কাছে কিছু শেখাটা আমার এতো রিস্কি মনে হয় আর কি বলবো।  সিওর এরা ভুল শেখায় আর তাতেই আমাদের লার্নিং ডিলে হয়।  আমি বরঞ্চ ফাইভ লিটিল মানকি তে মনোযোগ করি।  তাতেও বিপত্তি।  যেই রাইমস এ বলেছে "ইফ ইউ আর হ্যাপি - সে হুররে " আমিও আমার প্রথামত  দু হাত তুলে চিৎকার করে উঠলাম "হুররে"  আর সামনে পেছনে সবাই আমার দিকে ঘুরে তাকালো।  আর বাবা মুখের কাছে আঙ্গুল নিয়ে "শ - শ - শ - শ - শ - শ " করে দিলো গান পাল্টে।  কিরকম মাথাটা গরম হয়ে যায়। 

সেই গরম মাথা নিয়ে বেশ কিছুক্ষন চলার পর ফিল করলাম কানটা বেশ গরম হয়ে গেছে।  হেডফোনটা খুলে দিতেই কি সাংঘাতিক আওয়াজ কানে এসে ঢুকলো।  যার সুর নেই তাল নেই , সবাই চ্যাঁচাচ্ছে।  এর মাঝেই সবাই চুপ করে গেলো , আর একটা লোক স্টেজে দাঁড়িয়ে বকেই চললো বকেয়া চললো।  আমি বিরক্ত হয়ে সিটের ওপর দাঁড়িয়ে নাম্বারিংটা আবার আউড়ে নিলাম।  কিন্তু বাবা ঘাড় ধরে নামিয়ে বসিয়ে দিয়ে আবার কানে হেডফোন গুঁজে দিলো। 

কতক্ষন এরকম খোলা পড়ানো চললো জানিনা।  হঠাৎ দেখলাম বাবা হেডফোনটোন খুলে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো।  আর তারপর আমাকে কাঁধে তুলে নিয়ে নাচতে শুরু করলো।  আমি বুঝতে পারছিলাম না হেডফোন তো আমার কানে ছিল।  বাবার মাথা গরম কেন হয়ে গেলো।  আমি বাবার মাথায় হাত রেখে বললাম , "ঠান্ডা হয় বাবা। " কিন্ত বাবার কাছে সেটা আমার কান্না হয়ে পৌছালো।  ব্যাস , মা আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে লেডিস বাথরুমে ঢুকিয়ে দিলো।  এখানেই শেষ নয়।  যেহেতু বেবি চেঞ্জিং স্টেশন নেই , মা আমার চেঞ্জিং ম্যাটটা ঠিক টয়লেটের সামনে মাটির ওপর পেতে বিন্দাস চেঞ্জ করে দিলো আমি প্রতিবাদ করার আগে। 

যখন আমরা ফিরে এলাম তখন দেখি সবাই শান্ত।  হল প্রায় ফাঁকা , আর অন্ধকারে বাবার বত্রিশটা দাঁত দেখা যাচ্ছে।  আমাকে কোলে নিয়ে বললো , "থ্যাংক ইউ আধ্যান।" থ্যাংক ইউ শুনতে কার না ভালো লাগে।  কিন্ত কারণ জানতে পারলে আরো ভালো লাগতো।  যাইহোক , আমাকে এরপর টানতে টানতে নিয়ে গেলো যেখানে ছবি তোলানো হচ্ছে একটা আমার থেকেও রোগ একটা লোকের সাথে।  আমার মোটেও ইচ্ছা করছিলো  না ওর সাথে ছবি তোলানোর।  আমার তখন চোখ স্টেজে ওই লাল নীল আলো গুলোর ওপর।  সেগুলোর দিকে এগোতে গিয়ে তার ফার জড়িয়ে উল্টে পরে যা তা প্রেস্টিজ পাংচার করে চলে এলাম। 

এটা বুঝতে পারলাম ওই হেডফোন , ওই মোবাইলে ভিডিও দেখিয়ে বাবা আমাকে অতক্ষণ চেয়ারে বসিয়ে রেখেছিলো।  মানুষকে মুরগি করা ভালো না হলেও , এই ধরণের এন্টারটেইনমেন্ট আমার ভালোই লাগে। বোথ উইন উইন।  আর তাতেই সুন্দর ভাবে কাটানো হলো আমাদের একমাত্র কালীপূজা। 
  

আধ্যানের ডায়েরি







নাসকা (NASKA) কালী পূজা - 2019



এরা পাংচুয়াল , ভালো আর্টিস্ট আনে আর ভালো মাংস খাওয়ায়। আর এবার দশ বছর নাসকার।  কিছু তো দারুন হবে।  ভেবেই টিকিট টা কেটেই ফেললাম। আগের বার পাংচুয়ালিটির ঠ্যালায় ঠাকুরই দেখতে পাইনি।  এবার ঘড়ি মিলিয়ে তাই ঠিক সময়ে গিয়ে হাজির হয়েছিলাম নাসকার কালীপূজায়।  আমার দ্বিতীয় , নাসকার দশ। টিকিট কাটার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে পোস্ট হলো  ওয়েবসাইটে “এবার মাছও আছে।” তাইতো , বাঙালি কে কি শুধু মাংস খাইয়ে রাখা যায়।  একটু মৎস্য অবতার পাতে আশীর্বাদ না দিলে ধাতে সয় না। এবারে তাই নাসকা মানে মাছ , মিষ্টি এন্ড মাটন ।  

পোস্টটা দেখেই বুঝলাম , নাঃ এবারও মোগাম্বো খুশ হবে।  তাই সময়ে গিয়ে হাজির হতেই সেই খেটে ক্ষতবিক্ষত মুখগুলো দেখতে পেলাম।  পরিশ্রমের চাপের ছাপ পরিষ্কার।  এবার নতুন ভেন্যু।  নতুন স্কুলের বাস্কেটবল কোর্টে মা কালী দক্ষিনেশ্বর মন্দির থেকে বেরিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এরকম মণ্ডপ গত এগারো বছরে আমার ঘোরা আমেরিকায় তো দেখিনি।  দশের চমক দিতে প্রত্যেকবারের মণ্ডপ সজ্জার দায়িত্বে থাকা মানুষটি এবার বেশিই খেটে ফেলেছেন। সেই বিশাল ব্যাকড্রপের উজ্জ্বল উপস্থিতি, অন্যই মাত্রা এনে দিয়েছিলো দিনটির।  

আমেরিকার পুজোগুলোর একটা বেশ বড় সমস্যা সেলফি কুইন বা কিং-কংদের। বছর বছর পুজোর ছবি পাল্টায় না।  মূর্তিই জোগাড় করা চাপের তো থিম বানানো তো আরো কঠিন।  তাই বছরের পর বছর থাকা মানুষগুলোর ব্যাকড্রপ ধীরে ধীরে উধাও হয়ে যায় ছবি থেকে।  “বিন দেয়ার ডান দ্যাট ” এরপরে পরে থাকে ফি বছরের সাজগোজ আর বাড়তে থাকা মেগাপিক্সেলের ক্ল্যারিটি।  নাসকার এই ব্যাকড্রপ দেখে নিজস্বীলোভীদের মুখশ্রী বিশ্রী ভাবে দন্তবিকশিত হতে দেখা গেলো ।  আর আমরা সুযোগের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েই থাকলাম। 

তবে হ্যাঁ , এবার পুজো দিয়েছি।  ইয়েস - ইয়েস - ইয়েস।  বলে না , ভক্তি মনে, ওই পুজো টুজো ভালোলাগা শুধু মনের ব্যাপার।  একদম হক কথা।  সমীরণ চক্রবর্তীর পুজো দেখুন বুঝবেন।  হু হু বাবা , নাস্তিকের নাস্তিকতা কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।  গিন্নি আমার বেজায় খুশি পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে।  আর আমি খুশি পূজা পদ্ধতি আর মন্ত্রোচ্চারণ দেখে।  হাজার হোক নিউ ইয়র্ক কালী মন্দিরের পুরোহিত। 

তা পুজো দেখে শান্ত হলে কি হবে এদিকে ছুটে বেড়াচ্ছেন আমার তিন বছরের ধনুর্ধর , যে শুধু দৌড়েই খুশি।  বিশাল বাস্কেটবল কোর্টের এপার থেকে ওপর শুধু ছুটে বেড়াচ্ছেন আর মাঝে মাঝে ঠাকুরের সামনে জমে থাকা ভিড়ের মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে যাচ্ছেন।  আর আমি পেছন পেছন , “সরি- সরি” বলতে বলতে ছুটছি।  এই ঝড় থামলো যখন ঢাকের কাঠি তার হাতে এলো।  চুটিয়ে ঢাক পিটিয়ে তাঁকে টানতে টানতে নিয়ে আসা হলো প্রসাদ বিতরণীতে। 
 প্রসাদ খেয়ে আমি এই নাকখত দিলাম। পরের বার থেকে আর খাবো না।  মাইরি বলছি , প্রথম প্লেটে ভোগের খিচুড়িটার জাস্ট ছোঁয়া ছিল , তার জন্যেই দ্বিতীয় প্লেট আবার নিলাম, যখন সবার নেওয়া শেষ আর বেশ কিছু খিচুড়ি পরে আছে।  কিন্ত তাতেই হলো গেরো।  পেট গেলো ভরে।  কি করবো , খিচুড়ি ছাড়াও চালমাখা, গোটা গোটা সন্দেশ , গুড়ের নাড়ু , লুচি সবই দুর্দান্ত। মন এবং পেট ভরে গেলেও “মাছ যে টানছে”। 

প্রসাদের বাটি ফেলে এদিক ওদিক বেশ কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি  করলাম। যদি একটু নামে ।  এই কালীপূজা মোটামুটি কানেটিকাটের মিলনমেলা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় ছশো বাঙালি সেদিন রকি হিল স্কুলে ঘোরাফেরা করছে। নতুন পুরানো আলাপচারিতা, ‘হাই‘ , ‘হ্যালো ’,  ‘ফাংশন দেখবে ?’ ‘খেয়েছো ‘ ইত্যাদির পর দেখলাম ধীরে ধীরে সবাই হাঁটা দিচ্ছে ক্যাফেটেরিয়ার দিকে। 

প্রথম ভিড় সামলে উঠে লাইন তখন বেশ  ফাঁকা, কিন্ত টেবিলগুলো ভর্তি।  সুন্দর ধুতি পাঞ্জাবি পরে একজন থালা আর ন্যাপকিন বাড়িয়ে দিয়ে পেছনের লাইনের দিকে উদ্যেশ্য করে বললো , “দুটো লাইনেই এক জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। ভেজ নন ভেজ দুটোই। ” এই শনিবারে পূজা করার এই এক ঝামেলা।  অনেকেই ভেজ।  এতেই আমাদের মতো মানুষের লাভ।  মনে বল ভরসা যে মাছ মাংস শেষ হয়ে যাবেনা।  গিন্নি যদিও ভেজ খেলো।  যখন অর্ধাঙ্গিনী খাচ্ছে যখন বাকি অর্ধেক নন ভেজে মন দিতে পারে।  

শুরু হলো সালাদ দিয়ে যেমন হয় , কিন্ত সাথে আছে পাঁপড় ভাজাও।   এরপর ভেজ পোলাও, বাটার পনির , ডাল পেরিয়ে এলো কোফতা।  তারপর নন ভেজ কাউন্টার।  স্বয়ং অবতার কেলি করছে লাল টুকটুক ঝোলে পাশে অগ্নির বাহন। কিন্তু মিষ্টি কৈ , “পিছে দেখো পিছে” । থরে থরে গুলাব জামুন সাজানো আছে। রসগোল্লা হলে একটু ভালো হতো কিন্তু এই সবথেকে সাধারণ মিষ্টি বানানো যে কি অসাধারণ সমস্যার সে যারা বানিয়েছে তারাই জানে।  

মণ্ডপে ঢোকার আগেই দেখে নিয়েছিলাম নাসকার পেজে, যে মাছ রান্না হচ্ছে ইন-হাউস।  গামছা বেঁধে লেগে পড়েছে একটা গোটা টিম।  এক্কেবারে প্রথম বছরের মতোন, যখন পুরোটাই রান্না করা হতো ঘরে। এবারের এই আকর্ষণে তাই প্রথমে কামড় বসলাম।  ও-র-রে না-আ-আ !!!! এতো সেই পুরানো সর্ষের তেলের ঝাঁজ।  যা আপাতত অনেক হেলথ - এন্ড -হাইজিন - সেন্টার ফ্যামিলিতেই উধাও।  আরেকটা মাছ পাওয়া যাবে !! দেখলাম ছেলের পঞ্চাশ গ্রামের পিসটা পরে আছে।  গিন্নি তখন ছেলেকে মাংস খাওয়াতে ব্যস্ত।  আর কি, ছোঁ মেরে তুলে নিলাম।  গিন্নির অবাক প্রশ্নবোধক চোখের দিকে গম্ভীরভাবে উত্তর ছুঁড়ে দিলাম , “থাক , কাঁটা বিঁধে যেতে পারে। ” 

খাবারের সম্বন্ধে আর বেশি কিছু বলার নেই।  সব কিছুই অসাধাৰণ। খাবারের কোয়ালিটি থেকে শুরু করে পরিবেশনের ধরণ পর্যন্ত এক্কেবারে মিষ্টি।  একটু ঠান্ডা কোল্ড্রিংকস আর পানমসলা থাকলেই ব্যাপারটা নিখুঁত হতো আর কি।  গিন্নিকে বলতে বললো , “এহঃ খেতে পেলে শুতে চায়। এই টেবিলে রাখা কোল্ড্রিংকস খাও।  নইলে ভেন্ডিং মেশিন থেকে নিয়ে নাও। “ কিরকম থতমত খেয়ে ভেন্ডিং মেশিন থেকে একটা স্পার্কলিং ওয়াটারের ক্যান নিয়ে এলাম।  খুলে চুমুক মারতেই দেখলাম ভুল করে ফেলেছি।  আনসুইটেন্ড লেখাটা খেয়ালই করিনি।  

খাওয়া শেষে অডিটোরিয়ামে ঢুকে বসলাম।  এবার আগের বারের থেকে কাচ্চা বাচ্চা বেশি।  মনে হলো কোনো একটা পার্কে এসে হাজির হয়েছি।  এর মধ্যে অনুপম তার মেলোডি গাইবে !!! ভাবলেই অবাক লাগে। অনুপমের অনুষ্ঠান আগে দেখিনি। কিন্ত শয়নে স্বপনে জাগরণে গুচ্ছ গান গুনগুন বা ঘ্যানঘ্যান করতে থাকি অনুপমের।  

অনুপমের গান যেন অদ্ভুত এক মুগ্ধতা। ভালোবাসার মানুষটাকে পাশে নিয়ে জীবনের প্রত্যেক খাঁজে ডুবে যাওয়া মানুষের চাহিদা থাকে শব্দের আর সুরের মেলবন্ধনের। কখনো আকাশ বেয়ে চুপ করে , নেমে আসে ভালোবাসা খুব ভোরে। স্নানের ঘরে জমে ওঠা বাস্পে ভিজে চোখে ঠোঁটে গালে লেগে থাকার স্বপ্ন নিয়ে যতদিন কাছে পাওয়া যায় তাই নিয়ে চলতে থাকে জীবনের টানাপোড়েন। চাওয়া পাওয়ার লড়াইয়ে যা ছিলোনা তা না পেয়ে খুশি থাকার ইচ্ছা ক্রমশ ফ্রিজের পিয়াঁজ কলির মতো শুকাতে থাকে। রাত দুপুরের মিষ্টি আবদারে পাশ ফিরে শোয় মন যখন। বোবা টানেল ধরে ইচ্ছারা ছুটে চলে। ভালোবাসার দেওয়া নেওয়াতে সঙ্গী হয় একাকিত্ব। ঘড়ির কাঁটায় লেগে থাকা আমি তুমির আনন্দ গুলো ভুলে গিয়ে অকারণ বানানের চিন্তায় নিমগ্ন হয় সম্পর্ক। টুঁটি টিপে প্রেম এসে ধরলেও বসন্তের বিকালে একঘেঁয়ে বিষাদ সুর বাজতে থাকে। বুকের ভেতর ফেটে ওঠে অস্তিত্বের মাইন , আর শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়া প্রেমের বীজ সৃষ্টি করে এক যন্ত্রনা। পকেট ভরা সত্যি মিথ্যে ব্যাখ্যা করে একে অপরের জীবন।  বুক ফেটে বেরিয়ে আসে , নেই , কেউ নেই তোর , তোর কেউ নেই।  

কিন্তু অনুপম মানুষটার স্টেজ প্রেসেন্স খুবই ভালোমানুষের, ঠিক নতুন আলুর খোসার মতো।  স্টেজ সবার জন্য নয়। স্টেজের ওপর দাঁড়িয়ে হাতে মাইক নিয়ে গান করাটাই শুধু প্রোগ্রামের অংশ নয়।  প্রোগ্রামে ব্যাগে নিতে হয় অডিয়েন্সকেও।  অনুপমের সং রিকোয়েস্ট রেসপন্স শুনে গাল টিপে দিতে ইচ্ছা করবে।  কি মিষ্টি একটা লোক ! মনে হয় সেই কারণেই অতো ব্যাথা খেয়ে গান লিখতে পারে। নিজেই মেনে নিলো সেই কথা , “আমি সবসময় শুনি যে আমি শুধু কেঁদে ভাসানোর গান লিখি। তাই আজকে একটা নাচের গান , “মিথ্যে কথা ”। 

কিন্তু পাগল করার মতো একটা জ্যামিং কম্পোজিশান ছিল।  স্যাভি , প্রশান্ত , অয়ন আর অশ্রুজিতের উত্তাল সেই পারফর্মেন্স কাঁপিয়ে দিয়েছিলো ছোট্ট অডিটোরিয়ামকে।  কলেজ লাইফের রক ব্যান্ডগুলোর কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলো সেই আট মিনিটের কম্পোজিশান। 

নাঃ এবার আর ছবি তুলতে পারলাম না অনুপমের সাথে।  এক অদ্ভুত মুগ্ধতা নিয়ে ফিরে এলাম বাড়িতে।  ঠিক সেই অনুভূতি নিয়ে যার অপেক্ষায় ছিলাম এক বছর।  আবার থাকবো গোটা একটা বছর।  প্রোগ্রামের শুরুতে নাসকার কমিটি বুঝিয়ে দিলো যে তারা নতুনের হাতে তুলে দিয়েছে অনেক কার্যভার, যা যেকোনো শক্তিশালী সংগঠনের মূল স্তম্ভ।  তাই বছর বছর নতুনের আবির্ভাব আর বৈচিত্রের মুগ্ধতা দেখতে পাবো বলেই আশা করি।  সেই আশা নিয়েই আমার তরফ থেকে , “আসছে বছর আবার যাবো।” দশ বছরের অনেক শুভেচ্ছা নাসকা কে ,বলার আর কি আছে  
 “আসছে বছর আবার হবেই - হবে । …… ”       

Saturday, October 5, 2019

(৫৬) আধ্যানের ডায়েরি - দূর্গাপূজা (২০১৮)

(৫৬) আধ্যানের ডায়েরি - দূর্গাপূজা


আমি টিভির সামনে নাচছিলাম।  নতুন নতুন গান এখন চলছে আমার জন্য।  আগের মতো এক ঘেঁয়ে রাইম্স নয়।  এখন রাইমসের সাথে সাথে স্টোরীটেলিং চলে।  ঘরে বেডরুমটা বন্ধ ছিল।  দরজা খুলে যেতেই মায়ের ওপর চোখ পড়তেই মুখ থেকে বেরিয়ে এলো , "কুইন" . মা কে সত্যি কুইনের মতো লাগছিলো।  কি সুন্দর।  মা বাবাকে বলতে যাচ্ছিলো , " শাড়িটা একটু ধরো। ..... " কিন্তু আটকে গেলো যেই বললাম , "কুইন" বুঝতেই পারলাম মায়ের বেশ ভালো লেগেছে।  তাই আরো দু তিনবার বলতে মা এসে আমাকে চটকে আদর করে দিলো।  মা আজকে দারুন সেজেছে।  আর আমাকেও বাবা দারুন ভাবে সাজিয়ে দিচ্ছে।  কেন জানিনা।  কি জানি কোথায় যাবো।

মা যে ড্রেসটা পরে আছে সেটা কিন্তু রোজ রোজ পড়তে দেখিনা। বাবাও অন্য ধরণের ড্রেস পরে আছে।  যদিও শার্ট প্যান্ট এর মতো কিন্তু অনেক বড়।  আর আমার যে ড্রেসটা সেটা তো হেব্বি মজাদার।  আমার জন্মদিনে এরকমই একটা ড্রেস পড়িয়েছিলো কিন্তু সেটা বেশ ভারী।  এটা কিন্ত বেশ হালকা।  মা একটা ভেতরে মোটা প্যান্ট পরিয়ে দিয়ে বললো , "পরে নে।  নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে।" বাইরে খুব হাওয়া চলছে।  আমাকে একটা মেরুন রঙের পাঞ্জাবি পরিয়ে দিয়েছে।  ও হ্যাঁ তাই তো , এটাকে পাঞ্জাবি বলে।  বাবাও ওরকম একটা কিছু পরে আছে।  কিন্তু বাবার টা বাবারে বড়।  আমাকে মাঝে মাঝেই বাবা নিজের জামা পরিয়ে দেয় আর আমি ঝল ঝল করে  হাঁটি , কিন্তু এটা একটু বাড়াবাড়ি বড়।  খাটের ওপর রাখা ছিল আমি ঢুকে গেছিলাম , আর বেরোতে পারছিলাম না।

আমারটা কিন্তু আমার গায়ের সাথে আঁট।  আসলে সেই যে দেশে গেছিলাম তখন নিয়ে আসা হয়েছিল।  তখন কি কেও জানতো যে আমি এরকম বড়সর হয়ে যাবো। যাকগে বাবা ফাইনালি এঁটে গেলেই হলো।  এঁটে গেলো , আর নিচে যে কাপড়টা আমার প্যান্টের ওপর পরিয়ে দিলো সেটা থেকে একটা কি জানি কোঁচকানো একটা কাপড় বেরিয়ে আছে।  সেটাকে নাকি বলে ময়ূরপুচ্ছ।  উচ্চারণই করতে পারছিলাম না।  শেষ পর্যন্ত পারিও নি।  কিন্তু মা ওটাকে ম্যানেজ করা ছাড়লো না।  পকেটের সাথে আটকে দিলো।  স্নান করার পর , মাঝে মাঝেই বাবা এরকম একটা কাপড় যাকে গামছা বলে সেটা জড়িয়ে দেয় আমার গায়ে।  সেটা বেশ টাইট থাকে, কিন্তু এটা এক্কেবারে ঝলঝলে।  কি বিরক্তিকর।  কি সাংঘাতিক বিরক্তিকর।  সামনে পা ফেলছি , পাশে টান পড়ছে।  এদিকে বাবা মা আমাকে ধরে টানছে।  যদি কোথাও যাওয়ার তারা থাকে আর বাবা মা র দেরি হয়ে যায় তাহলে মা চালু হয়ে যায় , "আধ্যান তাড়াতাড়ি কর , তাড়াতড়ি কর দেরি হয়ে যাচ্ছে। " সেদিনও তাই করছিলো।

আমরা যখন গিয়ে পৌছালাম জায়গাটাতে , আমার কাছে জায়গাটা খুব একটা নতুন লাগলো না।  আগে এসেছি, আগে এসেছি মনে হতে লাগলো।  কিন্তু কিছুতেই মনে করে উঠতে পারলাম না।  কারণ এখন আমার মেমোরি বিল্ড হচ্ছে।  যেইদিন থেকে আমি মা বাবার মতো হড়হড় করে কথা বলবো তবে থেকে আমার সমস্ত মায়ের পেটের মেমোরি ওয়াইপ আউট হয়ে যাবে আর আমার এই মেমোরি গুলো সলিড স্টেট্ নেবে। যদিও আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু ওয়াইপ আউট দোস মেমোরিস।  কিন্তু কি করবো। বড় তো হতে হবে।

বেশ বড় একটা হল ঘরে তখন প্রচন্ড ভিড়।  সবাই দাঁড়িয়ে আছে।  আর স্টেজে কিছু একটা হচ্ছে।  মা তড়বড়িয়ে এগিয়ে চললো।  আমি কিছুক্ষনের মধ্যেই আর খুঁজে পেলাম না।  বাবার হাত ধরে ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছি।  কিন্তু কত আর বাবার হাত ধরে ঘোরা যায়।  কিচ্ছুক্ষণের মধ্যে বাবার হাত ছাড়িয়ে এগিয়ে এগিয়ে গেলাম সামনে একটা টেবিলের দিকে।  সেখানে কত কিছু ছবির বই  ছড়িয়ে আছে।  আমাকে যেরকম পিকক টেইল ধুতি পরিয়ে দিয়েছে।  ওখানেও একজনের ছবি ছিল যে পিকক টেইল মাথায় পরে আছে। আমি উঁচু হয়ে দু তিনটে বই নিলাম আর তার পর একটার পর একটা সাজিয়ে ওয়ান টু থ্রি খেলতে লাগলাম।  বাবা ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে গেলো।

দেখলাম গন্তব্য সেই স্টেজটা।  মা ওই স্টেজেই দাঁড়িয়ে আছে।  কিন্তু স্টেজে ওঠে কি করে।  আমি এগোতে লাগলাম কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই পায়ের দেয়ালে আটকে যেতে লাগলাম।  স্টেজের নিচে অনেকক্ষন একবার এদিক থেকে ওদিক আর ওদিক থেকে এদিক ঘুরে ঘুরে চেষ্টা করতে লাগলাম ওপরে ওঠার।  আমাকে সবাই কোলে করে বসে যেতে লাগলো।  কি আপদ রে বাবা।  আর আমার একমাত্র বাবা পেছন থেকে "সরি সরি " করতে করতে ছুটতে লাগলো।  কিন্তু বাবা কি আর আমার সাথে পারে। এক ফাঁকে টুক করে ভিড়ের মধ্যে এমন ভাবে লুকিয়ে পড়লাম যে আর বাবা দেখতেই পেলো না।  কিন্তু আমিও বেশ ঘাবড়ে গেছিলাম, কারণ আটকা পড়েছিলাম ভিড়ের মাঝে। না এগোতে পারছি , না পিছোতে।  পেছন ফিরে শুধু পা দেখতে পারছি , বাবা কে না।  ঠিক যেমন বিছানায় লেপের মধ্যে ঢাকা দিয়ে দিলে মাঝে মাঝে বেরোনোর পথ খুঁজে পাইনা , ব্যাপারটা ঠিক ঐরকম।  কিন্তু হঠাৎ করে দেখলাম দেওয়াল।  অনেক চেষ্টা করে দেওয়ালের ওপরে মুখ তুলে স্টেজ দেখতে পারলাম।  তারপর কি হলো জানিনা, কে আমাকে স্টেজে তুলে নিয়ে চলে এলো।  একদম মায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।

মা আমাকে ধরে দাঁড়িয়েছিল।  আমিও তখন হাঁফিয়ে টাফিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কুইন দেখছিলাম।  এখানে সবাই মায়ের মতো কুইন।  অনেক অনেক কুইন।  আর ঠিক মাঝখানে ওয়ান টু থ্রি ফোর ফাইভ কুইন আর আর কিং আছে।  কি সুন্দর দেখতে তাদের।  আর তাদের কি সুন্দর সাজ।  সবাই ঝকঝক করছে।  আমাদের বাড়িতে দেওয়ালে যে কুইন গুলো ঝুলছে কিংগুলোর সাথে।  তাদের মতোই দেখতে।  হঠাৎ দেখি মায়ের হাতে চলে এসে এক গুচ্ছ ফ্লাওয়ার।  ইয়েলো , হোয়াইট আর রেড ফ্লাওয়ার।  ও মা সবার হাতেই তো ফ্লাওয়ার চলে এসেছে।  কোই আমাকে তো কেউ দিলো না।

ইতিমধ্যে কি হলো একটা লোক আমার মতো ড্রেস পরে হাতে একটা কি নিয়ে কিসব বলতে লাগলো , আর সবাই সেরকমই কিছু একটা বলতে লাগলো।  মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি মাও প্রায় চোখ বন্ধ করে সেরকমই কিছু বিড়বিড় করে বলে চলেছে।  আমি আর কতক্ষন এই পাগলামির মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি।  আমি একটু স্টেজে ঘুরে আসতে গেলাম।  একটু এগিয়ে দেখি যে লোকটা ধুতি পরে স্টেজে দাঁড়িয়ে বকর বকর করছে সে আমার দিকে ওই হাতের জিনিসটা এগিয়ে দিলো।  ও নিয়ে আমি কি করবো।  ফুল ইগনোর মেরে এগিয়ে গেলাম ওই পাঁচ কিং কুইনের কাছে।  কিন্তু ওই সিক্সথটা কি।  এদের মধ্যে সুন্দরও নয় আবার এদের মতোই ড্রেস পড়া।  কুইন কুইন ভাব অথচ কুইনের মতো দেখতে নয়।  মাথার ওপর আবার কাপড় দেওয়া।  মুখটা তো দেখায় যাচ্ছে না।  হেড শোল্ডার নিস্ এন্ড টোস পর্যন্ত তো ঠিক আছে কিন্তু আইস এন্ড ইয়ার্স এন্ড মাউথ এন্ড নোস্ কি করে হবে ? তারজন্য তো ওই হেড থেকে কাপড়টা সরাতে হবে।  আমি গিয়ে যেই টেনেছি দেখি ভেতরে একটা ট্রি।  নো কুইন।  হেব্বি রেগে গিয়ে জোরে টান মারতেই মুখ থুবড়ে এসে পড়লো।  কি জ্বালাতন।  বাবা দেখি নিচ থেকে ছুটে এসেছে , মা বিড়বিড় করতে করতে ছুটে এসেছে। পাশে মায়ের মতো একজন ছিল সে আমাকে ধরে নিজের কোলে বসিয়ে নিলো।  চারপাশে একটা গেলোরে - গেলোরে ভাব চলে আসলো।

তারপর ব্যাপারটা খুব বোরিং।  ওই একঘেঁয়ে চলতে লাগলো।  আর শেষে আমরা খেয়ে দিয়ে চলে এলাম।  পরের দিনও আবার একই জায়গা।  কিন্তু ড্রেস আলাদা।  আমাকে জন্মদিনে যেটা পরিয়েছিল এবারও সেটাই পরে গেলাম।  কিন্তু জন্মদিনের পায়জামার জায়গায় এবার ধুতি।  বাবাও নীল পড়েছে আমিও নীল পড়েছি।  ওখানে গিয়ে সবাই দেখছি আমাকে ধরছে আর বলছে , "আজকেও কি কলাবৌ নিয়ে চলে জাবি। " " তোর কি কলাবৌ চাই। " ইত্যাদি ইত্যাদি।  আমি কিছুতেই ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না। তবে এটুকু বুঝে গেছি , সবাই আমাকে দেখেছে।  এনি পাবলিসিটি ইস  গুড পাবলিসিটি।  আমি তো সেলিব্রিটি।  আমার পাবলিসিটি না হলে চলে।

যাইহোক সবাই দেখলাম আমাকে বেশ সমীহ করে চলছে।  সবাই নিজের পেন লুকিয়ে রাখছে গোপনে।  আমাকে ওই কিং কুইনদের কাছে যেতে দিচ্ছে না।  আর গেলেই কেউ না কেউ ধরে আদর করে দিচ্ছে।  সব মিলিয়ে আমি বেশ চুবে ছিলাম।  পরে শুনেছিলাম ওটা দূর্গাঠাকুর আর আমি যাকে টেনেছিলাম সেটা ওঁর বৌমা নাম কলাবউ ।  ঠিক যেমন আমার মা আমার ঠাম্মার বৌমা।  তবে এই নামটা কিরকম শোনা শোনা মনে হচ্ছিলো।  কিছুতেই মনে করতে পারলাম না।  যাক , যেমন চলছে তেমন চলুক।  কত বলবো , কত ভুলবো।  এই দুর্গাপুজোয় তবে এইটুকু থাক।  পরের বার কালীপূজার গল্প।

আধ্যানের ডায়েরীর আগের পাতাগুলো