Wednesday, June 17, 2020

ডট ডট ডট


আর না ঠিক নিতে পারছিলাম না এই "সাথে আছি " টাইপ পোস্ট গুলো।  অভিনেতার আত্মহননে "পাগলা" বা "খ্যাপা" দের জাতে তুলে দেওয়া হলো তো।  কি দরদ মানসিক রোগীদের প্রতি।  রোজ রোজ "রাঁচিতে চলে যা" , "মানকুণ্ডুর মাল নাকি " বলা মানুষগুলোর দরদ দেখে থ্যাক করে এক তাল থুতু ফেললাম , ওখানেই ডুবে মরুক সব। 

ডিপ্রেসন নিয়ে সমস্যা  আজকে নয়।  নার্ভ জনিত হাজার সমস্যার একটা প্রকার মাত্র।  কেউ সুস্থ হয় , কেউ ওষুধের ঠ্যাকনা নিয়ে সারা জীবন ব্লাডপ্রেসারের মতো বয়ে নিয়ে চলে এই রোগ।  এই রোগ আধা শারীরিক আধা সামাজিক।  যা সমাজগ্রাহ্য তা না করলেই তাকে কাউন্সিলিং করতে পাঠাও।  কেন ? যে বলেছে তাকে সহ্য করতে সেখানও উচিত।  ওই নার্ভ শিথিলের ওষুধ খেয়ে যখন রুগী ঘন্টার পর ঘন্টা মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা উঠে পরে থাকে এই ফেসবুকের বুকে কেউ জানতেও পারে না।  সেই মা টা , সেই ভাইটা , সেই বৌটা জানে এই ওষুধের কি কষ্ট। 

সাথে থাকলে পাশে থাকলে কিচ্ছু হয় না।  হলে এসাইলাম বা পাগলা গারদ তৈরী হতো না।  আর মেন্টাল এসাইলাম মানে জানেন , মানসিক বিকৃত দের আশ্রয় দেওয়ার জায়গা।  আর বলা কি হয় " পাগলা গারদ "।  হ্যাঁ এখনো বলা হয়। 

ঠিক যেমন কালো কাগজে ন্যাপকিন মুড়ে দেওয়া হয় ( এখনো ) , মানসিক রোগের ওষুধ এখনো লুকিয়ে কিনতে হয়।  জানতে পারলেই "ওই বাড়িতে পাগল আছে , কামড়ে দেবে " বলে প্রত্যেক সমস্যায় আঙ্গুল তোলা হয়। 

ডিপ্রেশন কি ভয়ঙ্কর রোগ জানেন ? জলের মতো দুটো লাইন বলি।  ডিপ্রেশনের বিপরীত হলো এগ্রেসন। সবার জীবনেই সমস্যা থাকে।  সেই সমস্যা কখনো নিজের তৈরী , কখনো অন্যের।  কিন্তু যারা সবকিছুতেই মনে করে অন্যের দোষ , তার রোগ এগ্রেশন।  আর যে সব কিছুতেই নিজের দোষ দেখে তার ডিপ্রেশন।  এগ্রেশনে তোমার পারিপার্শিক মারা পরে , কিন্তু তুমি বেঁচে যাও।  আর ডিপ্রেশনে তুমি মরে যাবে , পারিপার্শিকের কলা।  এই এত্ত বড় মর্তমান কলা।  তুমি চ্যাঁচাতে পারো না , তাই তোমার ডিপ্রেশনে সুইসাইড করাই উচিত।  আমরা ফেসবুকে আহা উহু করে কাঁধ টাধ দিয়ে "উঁহু" পাগলা মেয়ে বিয়ে করবো না বলে সাইড কাটাবো। 

 
যারা পোস্ট করছেন তাদের জন্য বলছি।  বিশ্বাস করুন , আপনি পারবেন।  এই অবসাদে পরে থাকা মানুষগুলোকে আলো দেখাতে।  শুধু বালবিচি না বকে।  কাঁধ না এগিয়ে দিয়ে , সাইকোলজিস্ট আর সাইকিয়াট্রিস্ট এর মধ্যে তফাৎ টা একটু পরে দেখুন। আপনি জানলেই হবে।  জানাতে হবে না।  যারা এই রোগের শিকার হয়ে কালো প্লাস্টিক থেকে বার করে ওষুধ খায় তারা অবসাদ থেকে বেরিয়ে আসবে।  পাগলা , খ্যাপা , স্ক্রু ঢিলা , নাট খসা  - এসব থামিয়ে দিলেই তারা সাধারণ দোকান থেকেই ওষুধ  কিনবে।  নিজের শহর থেকে দূরে গিয়ে গাঁজার কাউন্টারের মতো দোকান থেকে ওষুধ কিনবে না। 


কিন্তু আপনি পারবেন না।  কেউ পারবেন না।  কারণ এরা খোরাক।  এদের পরিবার বাদ দিয়ে সবাই এদের নাচিয়ে আনন্দ পায়।  পাগলা চুলকে নে বলে সিরিয়াল হিট করায়।  আর তাতেই এরা ঝুলে পরে।  হ্যাঁ ঠিক এটাই কেস।  আমি এগুলোকে খারাপ ভালো বলছি না।  শুধু ফুটেজ খাওয়ার ন্যাকামো নিয়ে বলছি।  পাগলা বা মানসিক রুগীরা ওষুধ খেলে আপনাদের পাগলাই ভাবে। 

anjana anjani র পর এক দশক কেটে গেছে।  আর ফেসবুকে দুঃখ পাবেন না।  এর আগেও সহস্র বছর  কেটে গেছে মানুষ বদলায়নি।  শুধু  হাত জোর করে মিনতি করছি , এই রোগ খুন , ধর্ষণ,  হিন্দু , মুসলিম , বিজেপি , সিপিএম , কংগ্রেসের মতো মুখরোচক নয় , কুম্ভীপাকে দুগ্ধে দগ্ধে একাকিত্বে নিজেকে দোষ  দিয়ে গোটা জীবন কাটানোর মতো ভয়ঙ্কর রোগ।  চুপ থাকুন , নয় তাদের কাছে  গিয়ে বলুন যারা মুখ বেঁকিয়ে বসে আছে "পাগলা গারদে "।

সেলফি তুলে পোস্ট দিয়ে ভুলবেন না যেন। 



<a href="https://www.template.net/editable/magazines">Magazines</a>