বাবার মতে আমি সেই হনুমান যে সূর্যকে গিলে ফেলেছিলো। গায়ে শক্তি
এসেছে কিন্তু সেই শক্তিকে কি ভাবে ইউটিলাইজ করতে হয় সেটাই জানিনা। কথায় কথায়
ডায়লগ খাই - বড়ই হয়েছো বুঝমান হওনি। এবার আমি বলি ,এর জন্য কি আমি দায়ী ?
আমার শরীর তোমাদের বানানো , আমার ব্যাটারিতে চার্জ তোমরা দাও, শেখানোর কাজ
তোমাদের। কোথাও না
কোথাও তোমাদেরই ভুল হচ্ছে তাই আমি পারছি না। আর এটাও সবথেকে বড় প্রশ্ন , কি পারছি
না। ভারী ভারী
জিনিস তুলে ফেলতেই দেখছো , কিন্তু ভারী জিনিসগুলো তোলার জন্য যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং
অফ ডিফারেন্ট অ্যাঙ্গেল লাগে সেটা কি তোমরা লক্ষ্য করছো না। এই নাকউঁচু
লোকেদের আমার ভালো লাগে না বাপু। তোমরা বাবা মা হতে পারো , কিন্তু মনে রেখো , আইডেন্টিটি কিন্তু
ক্যারি করতে হয়। এরকম ফালতু বকলে একদিন ব্যাজটা কেড়ে নিয়ে ছেড়ে দেবো , কোরো তখন
ঘ্যান ঘ্যান।
এক এক করে ভেঙে বলি আমার বাবা মার্ সমস্যা। অর্ধেক জিনিস
যদিও আমি বুঝতেই পারিনা যে "হোয়াটস রং ইন ইট। " যেমন যা দাঁড়িয়ে আছে
, তা তো "ফলিং ডাউন" হওয়ার জন্যেই। তাই আমি ফেলে দিই। আর তাতেই
লাফিয়ে ওঠে মা বাবা। আমাদের সিক্স চেয়ার আছে। তাদের মধ্যে চারটে - মানে ওয়ান টু
থ্রি ফোর ডাউন হওয়ার
জন্যেই বসে থাকে। আমি শুধু হেল্প করি মাত্র। তাতে বাবা মার কি ? বাবা আবার আমার
ঘাড় ধরে তোলানোর চেষ্টা করে। আর হেল্প করে না। আমি কি আর তুলতে পারি। সেটা তো পরের স্কিল ডেভেলপমেন্ট। এখন শুধু
ডিসেকশন এন্ড লার্নিং। তাই ব্রেকিং ইস এন ইম্পরট্যান্ট স্কিল। আর আমি তাতে
বেস্ট।
এরপর ধরো "ইয়া-য়া- য়া- য়া- য়া- য়া- য়া
" স্কিল। আমি হাতের কাছে যা পাই , সেটা ধরে আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিই। এটা শুধু আর
কিছু না , আমার লং টার্ম এক্সপেরিমেন্ট , যে যদি কোনো জিনিসকে ওপরে ছুঁড়ে দেওয়া
হয় তাহলে সেটা নেমে আসবে কি না। মাই গড , কিছু সত্যি নেমে আসে না। কেউ না কেউ সত্যি সেটাকে ক্যাচ করে
নেয়। কিন্তু যেহেতু
আমার ক্যাচিং স্কিল এখনো ভালো হয়নি , তাই আমার মাথায় এসে পরে। ঠক করে লাগে। কিন্তু তাতে
কি আমি কাঁদি। মোটেও না। কারণ ওটা তো আমার এক্সপেরিমেন্ট এর সাকসেস। আমি জানি পেন
ইস গেন।
কিন্তু পেন যখন গেন হয় না তখন আমি কাঁদি। আমার সামনে
সবাই পেন নিয়ে খসখস করে লিখে যাবে আর আমি হাঁদার মতো তাকিয়ে থাকবো তা তো হয়না। আমার ডে
কেয়ারে প্রচুর ক্রেয়ন আছে। বাড়িতে একটাও নেই। তাই যে কোনো পেন পাই , ধরে লিখতে আরম্ভ
করে দি। আর আমি এখন
এটা ভালো বুঝি হোয়াইটের ওপর লিখলে তবেই সেটা দেখা যায়। তাই তো আমি
দেওয়ালে লিখি। বাবা একটা বিশাল হোয়াইট বোর্ড নিয়ে এসেছে আমার লেখার জন্য। কিন্তু সেটা
তো কিছুক্ষনের মধ্যেই ভরে যায়। তাই তো আমি শুরু করি দেয়াল লিখন। মা আমাকে ক্লিন ক্লিন করে আবার লিখতে
বলে। কিন্তু ওই
বোর্ডে আমার লেখাগুলো থাকে না, কারণ ক্লিন করা যায়। কিন্তু
দেয়ালে থাকে। তাই আমার সেটার দিকেই বেশি ইন্টারেস্ট। হবে না কেন। আমার
এফিসিয়েন্সি গ্রোথ রেট মেজার করতে হবে না? নিজের সাথে কম্পিটিশান করাই সবথেকে
হেলদি কম্পিটিশন। কে আর বোঝাবে। দিন রাত শুধু পেন লুকানোর খেলা চলছে। লুকানোর আগে যদি ধরে ফেলি , তাহলে আমি
টানাটানি করতে থাকি। আর যেহেতু বাবার জোর আমার থেকে অনেক অনেক বেশি , তাই বাবা যখন কেড়ে
নেয় তখন মনের দুঃখে কেঁদে ফাটিয়ে দি। আর তাতেই আমি খারাপ হয়ে যাই।
এরপর সেই জাম্প জাম্প। বাড়িতে জাম্প
করা চলবে না। রাস্তায় জাম্প করা চলবে না। জমে থাকা জলের ওপর জাম্প এন্ড
স্প্ল্যাশ করলে তো হয়ে গেলো সারাদিনের মতো। তাই বাবা বা মায়ের ওপরই জাম্প করি। ওতে তো আওয়াজ
হয় না। ওতে তো সমস্যা
হওয়ার কথা নয়। কিন্তু মাঝে মাঝেই বাবা চেঁচিয়ে ওঠে , "ওরে তোর ভাই বোন হওয়া
এখনো বাকি আছে।" কেন যে এইসব আনরিলেটেড কথা বলে ব্যাপারটা ঘুলিয়ে দেয় বুঝতে
পারিনা বাপু। মা চিৎকার করে বলে , " পেটের ভিতর ছিলিস যখন তখনও লাথি মারতিস
এখনো মারছিস।" আরে সেটা তো আমার জন্মগত অধিকার। তোমরাই তো গ্রান্ডমা গ্রান্ডপা কে বলো। তাহলে আমি কেন
মারবো না। যদি নিজেরা বাঁচতে চাও তাহলে আমার এনার্জি ঠিক দিকে চালনা করো। আমার সাথে
ফুটবল খেলো। বাবা যদিও আমাকে রোজ বাইরে নিয়ে যায়। কিন্তু রোজই
আমাকে বলে যে আর কয়েকদিন তারপর বাড়িতেই থাকবে হবে। তাই তো আমি খেলার
ব্যবস্থা করছি।
আমার ধাক্কা মারা কিন্তু এখন অনেক ঠিক হয়ে গেছে। আমি কিন্তু
এখন আর কাউকে ধাক্কা মারিনা। আমি বুঝে গেছি , দে আর ইউসলেস। আগে আমি সবাইকে খেলতে ডাকতাম আমার মতো
করে। কিন্তু ওরা
আমাকে ক্রিমিনালাইজ করলো। আমি কি করবো। এখন তাই কাউকে পাত্তা দিই না। কিন্তু আমার যেটা ইচ্ছা , সেটাই আমি
করি। যদি কেউ আমার
রাস্তায় আসে তাদের থেকে কেড়ে নিয়ে আমি আমার কাজ করি। কেউ তো বলতে পারবে না যে
আমি তাদের সুযোগ দিই নি। আমি দিয়েছিলাম, তারা আমাকে ভুল ভেবেছে। কিন্তু এখানে আমার অন্য প্রব্লেম এসে
দাঁড়াচ্ছে। সেটা আমার হাইট।
আমার মা আমাকে খিচুড়ি খাইয়ে খাইয়ে যা হাইট
বাড়িয়ে দিয়েছে তাতে হয়ে যাচ্ছে সমস্যা। আমার ক্লাসে সবাই আমার বেবি। কেউ আমার
কাঁধে পরে , তো কেউ বুকে। আর তাদের গায়ে জোর নেই। তারা তো আর খিচুড়ি খায় না , ব্রক্কলি আর ক্যারোট
খায়। সে দিয়ে কি
আর আমার মতো শক্তি হয়। বাবাকে ধাক্কা মারলে যেরকম আমিই "ফলিং ডাউন " হয়ে যাই
ওরাও আমার হাতের হালকা পুশ এ ধুপপা হয়ে যায়। আর আমার নামে কমপ্লেন আসে। এই হাইটের
জন্যে আমার রিচ অনেক বেশি। আমি এখন মায়ের কিচেন ক্যাবিনেটের ড্রয়ারে হাত ঢুকিয়ে কুড়কুড়ে
বার করে নিয়ে আসতে পারি। জলের কন্টেনার এর কলটা চালিয়ে দিতে পারি। ফ্রিজ খুলে
ওপরের তাকের জিনিস নিচে নামিয়ে আনতে পারি। বাথরুমের আয়নার সামনে বসে থাকা সোপ
কন্টেনারের ওপর হাত দিয়ে সোপ বার করে নিতে পারি। এতো কিছু পারি , তাতেও এদের উঁচু নাকে
মাছি বসা চাই। কি আর বলবো। যত এক্সপেরিমেন্ট করবো ততই তো জানবো।
আর বাকি থাকলো আমার শুয়ে পড়া। এই অভ্যেস
নিয়ে বাবা মা নাজেহাল। আমি জানি , কিন্তু আমার অন্য কোনো উপায় নেই। আমি দেখেছি যে
শুয়ে পড়লে , আমাকে টেনে তুলতে বাবা মায়ের বেশ কষ্ট হয়। কিন্তু তারা
এটা বুঝতে পারেনা যে আমি কখন শুয়ে পড়ি। তার আগে বলি আমি কোথায় কোথায় শুয়ে
পড়ি। আমি সব
জায়গায় শুয়ে পড়ি। শপিং মলে , পার্কিং লটে , মন্দিরে , রাস্তা ঘাটে , জলের ওপর , বালির
ওপর , বারান্দায় , পার্কে যেখান থেকে আমাকে টেনে নিয়ে যেতে চায় সেখানেই আমি
শুয়ে পড়ি। এটা যেন ভেবোনা যে আমি শুয়ে পড়ি মানে ঘুমিয়ে পড়ি। প্রথমে আমি
ঝুলে পড়ি। মানে যে হাত ধরে আমায় টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে , সেটাই ওপরে
করে বডিটা ছেড়ে দিই। তাতে কি হয় আমি বাবা বা মায়ের হাতে ঝুলতে থাকি। আমি জানি যে
ঝুলে থাকলে বাবার হাতের থেকে বেশি আমার হাত খুলে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। আর সেটার
জন্যেই বাবা মা বাধ্য হয় আমাকে ছেড়ে দিতে। আর যেই ছেড়ে দেয় , আমি মেঝেতে শুয়ে
থাকি , যতক্ষণ না বাবা মা অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত না হয়ে পরে। যেই ব্যস্ত হয়ে
পরে সেই আমি সেই সো কল্ড - "বদমাইশি " করতে আরম্ভ করি। কিন্তু ভেবে
দেখো আমার এই এস্কেপ মেকানিজম কি খারাপ ?
তো এই গেলো আমার আপাতত বড় হয়েছে কিন্তু বুঝমান
হয়নি ইতিবৃত্ত। তাহলে বুঝেই নিন , যেহেতু আমি সমস্ত কিছু জাস্টিফাই করতে পারি তাহলে
আমি বুঝমান , এবং যেহেতু হেলথ হাইটে বড় হয়েছি তাই আমি " বড় " আর
দ্যাট কনক্লুড যে বাবা মার মাথায় গোবর পোড়া। সঙ্গে থাকলে আরো রঙ্গ দেখাবো , আপাতত
টাটা।