Friday, March 20, 2020

#গো_করোনা_গো ( ১ ) - করোনার ডায়েরী শুরু

নাঃ … সাতদিন ধরে ভাবছিলাম লিখবো না।  কিন্তু আজ ভাবলাম লিখতে শুরু করি।  কারণ “আজ আগর তুম  জিন্দা হো তো কাল কে লিয়ে মালা জপনা , গুমনাম হ্যায় কোয়ি।  বদনাম হ্যায় কোয়ি। …… ” 

সকলের জীবনেই একটা না একটা কঠিন সময় আসে আর সে সেই নিয়ে জীবনভর ঘ্যান ঘ্যান করে কাটিয়ে দেয়। কিন্তু সকলের জীবনে একসাথে যখন একসময়ে কঠিন সময় আসে , তখন ঘ্যান ঘ্যান কার কাছে করবে।  তাই লেখো ডাইরি।  

আজকে যখন লিখতে শুরু করলাম তখন আমেরিকায় করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১৩৮৮৪।  মার্চ ৫এ যখন  প্রচুর কেস ধরা পরে আমেরিকাতে তখন সকলেই ভেবেছিলো মানে বিশ্বাস করেছিল এই সভ্য দেশে এই রোগ কিছুতেই ছড়াবে না। ঠিক কন্ট্রোল করে নেবে।  দেখতে দেখতে চোদ্দ দিনে চোদ্দ হাজার হয়ে চোদ্দ হাল হয়ে গেলো। 

শুরু করি একটু আগে থেকে।  আমি থাকি কানেটিকাটে।  মানে নিউ ইংল্যান্ডের ঠিক মাঝের স্টেটে।  খুব ঠান্ডা বলতে মাইনাস কুড়ি টুড়ি যায় , এক দু দিন।  গোটা দশ দিন বরফ পরে। কিন্তু এ বছর , না বরফ , না ঠান্ডা।  গরম দেশ থেকে এসে মাংকি ক্যাপ পরা ভেতো বাঙালির তো ভালো লাগারই কথা।  কিন্তু সময়ের কাজ সময়ে না করলে সমস্যা সৃষ্টি হয়।  শুরু হয়ে গেলো ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ।  তখনও করোনার নাম গন্ধ নেই আমেরিকায় ।  

তিন দিন ভুগে গলার আওয়াজ চলে গেলো।  ডাক্তার দেখাতে গেলাম।  প্রথমেই মাস্ক ধরিয়ে দিয়ে বললো , “একদম ছড়াবে না” ।  আমি তখন ওয়ার্ক ফ্রম নিয়ে ছড়িয়ে বসে আছি।  বাচ্চাদের দুধের বোতল পরিষ্কার করার যে ব্রাশ থাকে সেরকম একটা ব্রাশ ঢুকিয়ে দিলো নাকের ভেতরে , সেটাই নাকি ফ্লু টেস্ট করার পদ্ধতি।  কিছুটা খুঁচিয়েও দিয়েছিলো বলে রক্তও একটু বেরিয়ে এলো।  যান্ত্রিক ভাবে বলে দিলো , “আই এম সরি।” রাতে খবর এলো ফ্লু নেই।  সাথে এও বলে দিলো যে ফ্লু হলে ভালো হতো।  এটা কি ভাইরাস বোঝা যাচ্ছে না।  আপাতত সাধারণ প্যারাসিটামলেই চলো।  

আমার তো সেইটা টাকে উঠে গেছে শুনে।  কিন্তু কি করবো।  কাশি আরও বাড়তে থাকলো।  এবং শেষমেশ আমি ভেবেই নিলাম যে আমার হুপিং কাশি , টিবি , নিউমোনিয়া বা লাং ক্যান্সার হয়েছে। পাঁচদিনের মাথায় ছুটলাম আবার ডাক্তারের কাছে।  হাঁ করতে বলেই নাক চেপে ডাক্তার বললো , “বিড়ি খাও ? ব্রঙ্কাইটিস বাঁধিয়েছো তো। কবে ছাড়বে।” প্রশ্ন - উত্তর - নম্বর এবং মায়ের বকুনি একসাথে খেয়ে যখন বাড়িতে এলাম পাঁচটা করে ওষুধের ডোস নিয়ে তখন বৌ নিজের বকুনি কেন ফ্রি তে ছেড়ে দেবে?  সেও দিলো।  কেন্নোর মতো গুটিয়ে পাঁচদিন পরে থাকলাম আর সব ধীরে ধীরে সাধারণ হয়ে গেলো।  

তারিখটা ছিল ১২ ফেব্রুয়ারি যেদিন এক দিনে বারো হাজার নতুন কেস ডিটেক্ট হয় চায়নাতে।  সেদিন অফিস জয়েন করেছিলাম।  অফিসে তখনও চায়না নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি।  হচ্ছে হবে।  চলছে চলবে।  কিন্ত আমেরিকাতে কিছুই হবে না এরকমই চলতে লাগলো এর পরের বেশ কিছু দিন।  

ইতিমধ্যে দিল্লী ইলেকশান আর দাঙ্গা নিয়ে খবর জগৎ এবং আমার পারিপার্শিক এমন মেতে ছিল যে কেউ করোনা নিয়ে বিশাল কিছু মাথা ঘামায় নি।  

বোমা পড়লো ফেব্রুয়ারী ২৯ এ।  যেদিন খবর এলো ওয়াশিংটনের প্রথম করোনায় মারা পড়লো এক ৬০ বছরের বৃদ্ধ। “ তাই নাকি? “ “ তাই নাকি “ দিয়ে শুরু হয়ে থেমে যেতে লাগলো কথা বার্তা।  কিন্তু বেশিদিন লাগলো না ভয় ছড়িয়ে পড়তে।  খবর আসতে লাগলো চারিদিক থেকে।  আর শেষমেশ মার্চ ৬ থেকে শুরু হলো চব্বিশ ঘন্টা ট্র্যাকিং।  

নিচের লিংকটির একটা বৈশিষ্ট হচ্ছে সি এন এন প্রত্যেক দিনের জন্য একটা করে ওয়েবসাইট পেজ তৈরী করছে আর সমস্ত লাইভ আপডেট করছে।  লিংক এ থাকা ডেট পাল্টে দিলেই প্রত্যেক দিনের খবর পাওয়া যাবে।  

ইতিমধ্যে ইন্টারনেটের দৌলতে যেমন সঠিক খবর পৌঁছতে আরম্ভ করেছে তেমন গোমূত্র আর গোবর ছড়িয়ে চলেছে আরও তীব্র গতিতে।  মার্চ তিনে একজন হঠাৎ করে শেয়ার করলেন “ ছাব্বিশ সাতাশ ডিগ্রিতে নাকি এই ভাইরাস মারা যায়।” হেব্বি আনন্দিত হলাম , কারণ বার্ড ফ্লুর ভাইরাস ফুটন্ত তেলের টেম্পারেচারে মারা যায় শুনেই আমরা কলেজে মোচ্ছব করেছিলাম।  চিকেনের প্রাণের দাম যখন ২০ তিরিশ টাকায় নেমে গেছিলো তখন শুধুই চিকেন খেতাম শুধু এই সত্যের ওপর ভরসা করে।  মরিনি , এখনো বেঁচে আছি কারণ সেটা সত্য ছিল।  আর এখন সত্য যে কি সেটা খুঁজে বার করাটাই এক বিশাল সমস্যা। তাই প্রশ্ন করেছিলাম সূত্র কোথায়।  উত্তরটা এসেছিলো ভারতীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছ থেকে নাকি এসেছিলো।  পুরো ওয়েবসাইট ঘেঁটেও কিছু পেলাম না।  ক্ষমা করে ভুলে গেলাম লোকটিকে।  এরকম অনেকেই করছেন।  

বিশ্বের সবথেকে বড় স্বাস্থ্য সংস্থা WHO একটা পেজ খুলেছে যা নিচে লিংক দিলাম এটাতে যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাচ্ছে যা অন্তত ওয়াটস্যাপে শেয়ার করা দুর্গন্ধ থেকে অনেক ভালো।  
নাম্বারের খোঁজে বেশ কিছু ঘাঁটতে ঘাঁটতে ঘাঁটতে খুঁজে পেলাম দুটি ওয়েবসাইট। দুটোরই সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন নেই।  কিন্তু দুটোর নাম্বারে প্রায় ৩ ঘন্টার ব্যবধান লক্ষ করলাম।  মানে ৯ টায় ওয়ার্ল্ডমিটার যে নাম্বার বলছে সেটা ১২ টায়  দেখা যাচ্ছে জন হপকিন্স এর লাইভ ম্যাপে।  

এই দিয়ে আপাতত শুরু হলো করোনার গল্প। ….. কালকে সময় পেলে ও বেঁচে থাকলে আবার লিখবো।   

No comments:

Post a Comment