ভেবেছিলাম লিখবো না । বাবার ওপর
হেব্বি রাগ হয়ে গিয়েছিল । অত করে বলা সত্বেও যখন সেই আমার জন্মদিনে এলোনা তখন আমিও
লেখা ছেড়ে দিয়েছিলাম । কিন্তু যখন শুনলাম তিনি আসছেন ফাইনালি তখন মাফ টাফ করে দিয়েছি। হাজার
হোক বাবা তো । কাহাতক রাগ করে থাকা যায় । তার ওপর একটা লাল টুকটুক ট্রাইসাইকেল
পাঠিয়েছে । আর একটা অদ্ভুত খেলনা । তার গল্পই তো আজকে বলব। আমার জন্মদিনের গল্প ।
তখনও আমার জন্মদিন আসতে এক রাত
বাকি । সকালে উঠলেই আমার হ্যাপ্পি বাড্ডে । রেগুলার মতই আমি অনেক রাতে খেয়ে খেলা
করছি । হঠাৎ দেখি মা দৌড়ে বেড়াচ্ছে । কোনও কিছু ঘটার আগে মা একটাই কাজ করে , দৌড়ায়
। আমি তখন বসে বসে টিভিতে শাকিরার গান
দেখছিলাম । কোথা থেকে মা এসে ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে গেল , “আরে চল চল, কেক কাটতে হবে তো। বারোটা বাজতে চলল তো ।” আমি
বেশ থতমত খেয়ে গেলাম। প্রথমে মা আমার বারোটা বাজাতে চলেছে । আর তারপরে কেক কাটবে ।
অনেক দিন ধরেই শুনছিলাম আমার জন্মদিনে কেক কাটা হবে । কিন্তু কেক যে কি বস্ত সেটা
জানিনা। এটলিস্ট এটা একটা হাপি ইভেন্টে কাটা হয় সেটা জানি । কিন্তু এই এত রাতে
কেন? জন্মদিন তো কালকে। আর মাই বা আমার বারোটা বাজাতে চলেছে কেন । তাহলে কি মা
আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে । মা বাবাকে বলেছিল । এই এক বছর একা একা সামলেছি আর একদিন
বেশী হলেই আমি ওকে দিয়ে আসব । কোথায় দিয়ে আসবে সেটা বলেনি । মা কে না কিরকম
জুজুবুড়ির মত দেখতে লাগছিল । সত্যি আমাকে কোথাও দিয়ে আসবে না তো । কেক টা কি ?
সন্দেহ আরও ঘনীভূত হল যখন একটা নতুন জামা পরিয়ে দিল মা । আমি ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলাম। তবু দেখি
মায়ের কোনও উচ্চ বাচ্চা নেই । দিব্যি হাসি হাসি মুখে আমায় আদর করে চলেছে । এর পর
দেখি দুটো ফোনে দুটো মুখ ফুটে উঠলো একটা মাসির , আর একটা বাবার । তাহলে কি সবাই
আমায় বিদায় জানাবে । হাউ হার্টলেস । এরপর একটা বিশাল বড় বাক্স খুলে গেল । দেখলাম
একটা বড় সাদা কিছুর ওপর অনেক কিছু লেখা । আর দুটো হলুদ আপ্পু দুদিক থেকে একটা বড়
লাঠির ওপর ঝাপিয়ে পড়ছে । এ তো হাডুপের আপ্পু । আমার যেমন আপ্পু , ডাগ কাটিং কাকুর
ছেলের আপ্পুর নাম হাডুপ । বুঝলাম ওটাই কেক আর ওর ওপরেই একটা বড় সর মোমবাতি লাগিয়ে
মা বলল , “হ্যাপি বাড্ডে টু ইউ ...।। ” অনেক বড় গান । ইয়া বড় । সাথে সবাই গাইল , বাবা , দাদু , দিদা , মাসি সব্বাই ।
ব্যাপারটায় যেরকম ঘাবড়ে গিয়েছিলাম সেরকম ব্যাপারটা নয় । কিন্তু ঐ কেক জিনিসটা কি বিচ্ছিরি
খেতে। কি মিষ্টি রে বাবা । আর আবার মা কেক তুলে তুলে মুখে মাখাচ্ছে । এ আবার কেমন
ধারা ঢং । আমি কি ক্যানভাস না দেওয়াল । আর ঐ চ্যাটচ্যাটে জিনিসটা না মাখালেই নয় ।
তায় এত মিষ্টি । তোমরাই তো বল , “সুগার ইস ব্যাড” আর তুমিই তুলে তুলে গায়ে মাখাচ্ছ
। আমার স্কিন খারাপ হয়ে গেলে কি হবে? ইউ গাইস ক্রিয়েট ইওর ওন প্রবলেম অ্যান্ড
ইনভল্ভ এভরিওয়ান । আর বাবাই নাকি ঐটা ডিসাইন করে পাঠিয়েছে। বাবার মুখচোখ কিরকম রহস্যময় দেখলাম ।
রাতে শুয়েছিলাম এই ভেবে যে বাবা
সকাল বেলা আমায় ঘুম থেকে তুলে হ্যাপ্পি বাড্ডে বলবে । একজন বলেছিল বাবারা
সুপারম্যান হয় । দেখবি ঠিক উড়ে উড়ে চলে আসবে। আমি ওসব ফালতু সুপেরস্টিশনে বিশ্বাস
করিনা । আমি ভেবেছিলাম ব্যাপারটা সারপ্রাইস । বাবা সারপ্রাইস দিতে উস্তাদ। এই
সমস্ত ন্যাকামো করে শেষমেষ ঠিক সময়ে হাজির হয়ে সারপ্রাইস দেবে । কিন্তু কই । সকালে
নিজেই দিব্যি আড়মুড়ি কাটতে কাটতে উঠে পরে দেখি বাবা নেই । আর মা দৌড়ে বেড়াচ্ছে ।
জন্মদিন
বলে কথা । এই ধরাধামকে ধন্য করে আমি বিছানা থেকে আস্তে আস্তে এক পা নামালাম।
ভেবেছিলাম ওপর থেকে ফুলবৃষ্টি হবে । কিন্তু কই কিছুই হল না । আমি দিব্যি গ্যাট
গ্যাঁট করতে করতে হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে হাজির হলাম রান্নাঘরে । আমায় দেখেই মায়ের
তড়াক লাফ । মা ভাবতেই পারেনি আমি উঠে গিয়ে মায়ের কাছে চলে আসব । চমক ভাংলে কোলে
নিয়ে জন্মদিনের চটকানি ।
আজ
নাকি আমার ড্রেস এসেছে নতুন , আমার খেলনা এসেছে নতুন , আজ নাকি অনেক কিছু খাবো ।
টোটাল মস্তি । আমরা জদিও অনেক কিছু প্ল্যান করেছিলাম । বাবা সব ভেস্তে দিল । বাবার আমার জন্য শেরওয়ানি আনার কথা ছিল । আমি আর
বাবা ম্যাচিং ম্যাচিং ড্রেস পরে ফটো তুলব । কিন্ত সে কোথায় । যদিও ড্রেস আমি তখনও
চোখে দেখিনি । মা বলল বিকালে মন্দিরে নিয়ে যাবে । কি মজা । সেখানে অনেক হালুম
আপ্পু । সবাইকে বকে দেব । বেশ মজা লাগে।
কিন্তু
সে তো অনেক পরের ব্যাপার । তার আগে হঠাৎ করে মা পাত্তা দেওয়া বন্ধ করে দিল ।
ব্যাপারটা বুঝলাম না । রান্না ঘর থেকে কিছুতেই বেরচ্ছে না , আর দাদু আমাকেও কিছুতে
রান্নাঘরে জেতে দিচ্ছে না। আজকে না আমার জন্মদিন । আজ কি আমায় বাধা দেওয়া উচিত ।
কিন্তু কিছু একটা হতে চলেছে যার কারনে এত কড়া কারফিউ।
ব্যাপারটা
বেশ বড় ব্যাপার । আমার জন্মদিনের লাঞ্চ প্রিপারেশান চলছিল । লাঞ্চের কথা পরে বলব ।
তার আগে বলি দুটো ইয়া বড় বড় বাক্সের কথা। কাল মা যখন অফিস থেকে ফিরল তখন একটা ইয়া
বড় বাক্স ঠেলতে নিয়ে এলো। আমার ডাইপারের বাক্সের থেকেও বড় । আমি ঝাঁপিয়ে পরে খোলার
চেষ্টা করলাম কিন্তু ব্যাপারটা বড়ই কঠিন । আমার “হেল্প মি” টাইপ কাঁচুমাচু মুখ দেখে মা খুলে দিতেই আমি
আরও ফাঁপরে পরলাম। এসব কি । এক বাক্স ভাঙ্গাচোরা জিনিস। একটা চাকা বুঝতে পারলাম , বাকি
সব গারবেজ। আমি মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে টিভির দিকে কন্সান্ট্রেট করতে চোখ সরাতে জেতেই হঠাৎ
একটা কাগজ দেখলাম উঁকি মারছে । হিড় হিড় করে টেনে দেখি আমার একটা বন্ধু ওর মধ্যে একটা
তিন চাকা ওয়ালা জিনিসের ওপর বসে আছে। কি সুন্দর জিনিসটা । আমার চেয়ার আর আমার প্রাম
দুটোকে এক সাথে জুড়ে দিয়েছে। তায় আবার লাল টুকটুকে , মায়ের চটিটার মত।
ওদিকে
মায়ের সাথে বাবার কথা চলছে। মা বাবার কথা ফলো করলে অনেক কিছু এই পৃথিবী সম্বন্ধে শেখা
যায়। সেদিন বুঝলাম ব্যাপারটা একটা গাড়ি । যার তিনটে চাকা আছে । সেটাই নাকি ভেঙ্গে ভুঙ্গে
বাবা পাঠিয়ে দিয়েছে । জুড়ে নাও। আর মাও খ্যাঁক খ্যাঁক করে উঠলো , “আমার ওসব করার সময়
নেই।” হে হে , আমি জানি , কথাটা সেটা নয় । মায়ের ক্ষমতা নেই । এসব বাবার কাজ আর বাবা
হাওয়া । আবার ঢং করে জিনিস পাঠিয়েছে। বেশ কিছুক্ষন ঝগড়া টগরা করে আমার ইন্টারেস্ট দিল
বাড়িয়ে কিন্তু কাজের কাজ কিছু করল না।
হেব্বি রেগে গোঁ মেরে
বসেছিলাম তখন দেখি মা ওই বাক্সের পেছন থেকে আরেকটা ছোট বাক্স বার করে দিল। সেটার মধ্যে
আবার একটা বাক্স। তার ওপর ফুটো ফুটো । আমায় ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল। কি করব আমি এটা নিয়ে
। ভোঁদার মত বসে থাকলাম। এই লারন ইওরসেলফ টেকনিক খুব বাজে । আমি বলছি ফার্স্ট টাইম
স্পুন ফিডিং ইস ইম্পরট্যান্ট । এই সব বিজ্ঞের ডোবাগুলো বুঝলে হয় । আমি বেশ কিছুক্ষন
ওটা নিয়ে বসে থাকলাম তারপর মা এসে ওটার ঢাকনা খুলে ভেতর থেকে এক গাদা ছোট বড় গোল চৌকো
কিসব বার করে আবার ঢাকনা বন্ধ করে চলে গেল । হাউ নন্সেন্স। ইট সাপোসড টু বি মাই খেলনা।
কিন্তু বিকেম গারবেজ। চারপাশে ছড়িয়ে দিয়ে মা চলে গেল। আমি কি করি। আমি অনেক টানাটানি
করার চেষ্টা করলাম ঢাকনাটা । কিন্তু নো নরন , নো চরণ । ইউরেকা, ওপরের ফুটো গুলো তো
আছে । আমি একটা একটা করে জিনিস গলিয়ে দিতে লাগলাম। যতটা সোজা ভাবে বলছি ব্যাপারটা কিন্তু
অতটা সোজা নয়। চৌকোটা ঠিক চৌকো ফুটো দিয়েই ঢুকবে , আর তারার মত যেটা সেটা কিন্তু গোল
ফুটো দিয়ে ঢুকবে না। আমাকে অনেক প্লান করে কেরামতি করে তবে ব্যাপারটা আয়ত্তে আনতে হয়েছিল।
কিন্তু মা তো অগা , ব্রেন কম । তাই কিছুক্ষন পর এসে ঢাকনাটা খুলে সব কিছু ধরাধর ঢেলে
দিল। মায়ের এই সুক্ষ বুদ্ধির অভাব । আমার ব্রেন ফ্রেশ, ক্রিয়েটিভ অ্যান্ড ইনোভেটিভ।
বাবা মনে হয় মায়ের কাছে আমাকে জেতানোর জন্যই এটা পাঠিয়েছিলো।
ওদিকে তখন দাদু আমার
ড্রেস বার করেছে। বাবা যেহেতু দেশি ড্রেস বগলে পুরে বসে আছে । তখন একেবারে খাঁটি এদেশি
একটা ড্রেস নিয়ে মা চলে এসেছে । বেশ মজাদার ড্রেসটা । নামটাও বেশ , “থ্রি পিস সুট”
। সুট নামটা শুনেই আমার হাসি পেয়ে গেল। এ আবার কি নাম। তায় আবার থ্রি পিস। এক দুই তিন।
জামা , প্যান্ট আর কোট। এই এত জোব্বা আমার বিশেষ ভালো লাগে না । আমি বেশী হট তো , তাই
শুধু ডাইপারেই খুশি । কিন্তু আজকের জন্মদিন ইস স্পেশাল। আজকে আর রোজকারের মত ড্রেসে
থাকলে চলে না। কিন্তু ভয়ঙ্কর চুলকাচ্ছিল। আর ওদিকে মা তখন ক্যামেরা তাক করে বসে আছে।
আমার হেব্বি বিরক্ত লাগছিল। একটাও ভালো পোস দিয়নি। কিন্তু ঐ যে মা যেই বাবাকে বলল আমি
“থ্রি পিস সুট” পরেছি কোথা থেকে একটা হাসি খ্যাক খ্যাক করে বেড়িয়ে এলো। ব্যাস আমি ক্যামেরা
বন্দী ।

এত কেঁদেছিলাম যে গলা চোক হয়ে
গেছিল। মনুষ্যত্বহীন দানবের দল । হোক সে মা , হোক সে দাদু , হোক আমার জন্মদিন। আমি
বুঝে গেছিলাম যে তাদের কথামত কাজ না করলে তারা জোর করবে । এদিকে পেট জলে জাচ্ছে
খিদেতে । আরও কাঁদতে ইচ্ছা করেও কাঁদতে পারলাম না । নো ওয়াটার লেফট ইন মাই স্টোরেজ
। ঠিক তখনি আমার সাধের এক বাটি খিচুড়ি নিয়ে মা হাসি মুখে এলো আমায় খাওয়াতে। এর রঙ,
স্বাদ, গন্ধ সব আলাদা। মনে হয় সব কিছু মিশিয়ে আমার জন্য খিচুড়ি বানিয়ে নিয়ে এসেছে।
বুদ্ধি বটে মায়ের। চকাম চকাম করে সব খেয়ে নিলাম । কি শান্তি তখন।
যাইহোক সব মিলিয়ে আমার জন্মদিন অন্যদিনের
থেকে অদ্ভুত গেল। আজকের ডায়েরীতে ব্যাস এইটুকুই। কারন আমার এক বছরের সিসন ওয়ান
এখানেই সমাপ্ত। আবার বাবা এলে আমি আর বাবা মিলে সিসন টু লিখব। ততদিনের জন্য টা টা
বাই বাই ।
Belated happy birthday to you and many many happy returns of the day ADHYAN...... ONEK BORO HOYE MA BABA R MUKH UJJOL KORO..... R AMONI MISTI MISTI DIARY LIKHI. ... 😍😍
ReplyDelete