“সকাল থেকে উঠেই মাছের গন্ধ আর ভাল্লাগে না বাপু .”
শনিবারের সুন্দর ছুটির সকালে একটা বড়সর ইলিশ মাছ কেটে পরিষ্কার করছি , হঠাৎ গিন্নি ঘুম থেকে উঠে আমার সাধের সকাল বরবাদ করে দিলেন . আমার পরিবার এর প্রথম মহিলা যিনি মাছের গন্ধ পছন্দ করেন না .
শনিবারের সুন্দর ছুটির সকালে একটা বড়সর ইলিশ মাছ কেটে পরিষ্কার করছি , হঠাৎ গিন্নি ঘুম থেকে উঠে আমার সাধের সকাল বরবাদ করে দিলেন . আমার পরিবার এর প্রথম মহিলা যিনি মাছের গন্ধ পছন্দ করেন না .

--“জেলের বাড়িতে তো আর বিয়ে হয়নি . তোমার এই মাছের বাতিক আর সহ্য হচ্ছেনা . তাও আবার এই শনিবারে . একটু তো ধম্ম মানতে পারো .”
এখন বোঝা গেল হঠাৎ এই আওয়াজ কেন . আমার গিন্নি কযেকদিন হলো খুব ধম্ম কম্মে মন দিয়েছেন . কেন কি বৃত্তান্ত অত ঘাঁটতে গেলে অনেক সমস্যা তাই যেমন আছেন তেমন থাকুক ভেবে চুপ থাকি . তারপর office থেকে ফিরে গা ধুয়ে যখন বসি তখন গিন্নি সন্ধ্যা দিতে ব্যস্ত থাকে . ধুপের গন্ধে ঘর ম ম করে . তার সাথে এক কর্নাভিরাম দৃশ্য দেখতে পাই , আমার গিন্নির বন্ধ ওষ্ঠধার.
তাই বেশ উপভোগ করছিলাম বেশ কযেকদিন ধরে . কিন্তু আজ যখন মাছের দিকে সে আঙ্গুল তুলল তখন বাঙালির রক্ত জেগে উঠলো , “কেন … মাছ খেলে কি প্রাণ যায় . ধম্মে কোথায় বারণ আছে মাছ খাব ?”
“ধম্ম টেনে খোটা দেবে না বলে দিচ্ছি . বামুনের ছেলে হয়ে মাছ খাচ্ছ তাতে দোষ হচ্ছে না ?”
“শোনো মাছ খেলে ধম্ম যায় না . গোটা বঙ্গে সমস্ত বামুন মাছ খেয়েই পূজা করে .”
“সেই জন্যই তো দেশটার কিছু হয় না . দিন দিন পেছিয়ে পরছে .”
“ধম্ম টেনে খোটা দেবে না বলে দিচ্ছি . বামুনের ছেলে হয়ে মাছ খাচ্ছ তাতে দোষ হচ্ছে না ?”
“শোনো মাছ খেলে ধম্ম যায় না . গোটা বঙ্গে সমস্ত বামুন মাছ খেয়েই পূজা করে .”
“সেই জন্যই তো দেশটার কিছু হয় না . দিন দিন পেছিয়ে পরছে .”
কথাটা খাঁটি . মানে পিছিয়ে পরার কথা টা খাঁটি . কিন্তু কেন পিছিয়ে পরছে সেটা কি মাছের জন্য ? একটা vegetable এর মত জীব . যা খেলে না মেদ বাড়ে না উত্তেজনা . কাট তেও মায়া লাগেনা কারণ চোখের পাতা পরে না , চিত্কার করে না , আর জলে থাকে বলে কান্নাও দেখা যায় না . সে যে কি করে বাঙালির অগ্রগতির পথে অভিশাপ হয়ে দাড়ালো এই শনিবার এর সকালে টা আমার বোধগম্য হলো না .
“সে তো politics এর জন্য . মাছ খেলে তো বুদ্ধি বাড়ে . আজকাল কার generation কাঁটা ছাড়াতে হবে বলে মাছ খায় না বলেই তো এই সমস্যা . No মাছ , no বুদ্ধি . তোমার যেমন .”
“এহঃ কে আমার বুদ্ধিমান এল রে . কে বলেছে আমি মাছ খাইনা . কিন্তু শনিবার টা তো নিরামিষ খেতে পারো ?”
“তোমার জন্য মঙ্গলবার , বৃহস্পতিবার তো already নিরামিষ হয়ে গেছে . শনিবার টা বাড়ির প্রথা . আমার নয় .”
“এহঃ কে আমার বুদ্ধিমান এল রে . কে বলেছে আমি মাছ খাইনা . কিন্তু শনিবার টা তো নিরামিষ খেতে পারো ?”
“তোমার জন্য মঙ্গলবার , বৃহস্পতিবার তো already নিরামিষ হয়ে গেছে . শনিবার টা বাড়ির প্রথা . আমার নয় .”
“কেন ?? তুমি কি দত্তক নেওয়া না কুড়িয়ে পাওয়া .”
“কোনটাই নই . কিন্তু তোমার মাছের প্রতি এত বিতৃষ্ণা কেন ?”
এই ফাকে বলে রাখি আমার গিন্নি কোনো দিন কাঁচা মাছ বা মাংশ তে হাত দেন না . আমেরিকায় বিয়ে হয়ে আসার পর আমাকেই মাছ কেটে ধুয়ে হলুদ নুন লাগিয়ে বাটিতে রেখে দিতে হয় . গিন্নি শুধু চামচ করে তুলে করাই তে ফেলেন . রান্নার quality নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় না . কিন্তু মাছ খাবার জন্য এত লড়াই ভালো লাগে না .
“তোমাকে খেতে হবে না . আমার জন্য তো করে দিতে পারো ?”
“সেত করেই দেব . বিয়ে করেইছ তো মাছ ধরিয়ে .”
কতকাল এই খোটা খেতে হবে জানিনা . বিবাহের আগেই আমি জানতাম তার কতটা আপত্তি এই মাছ ধরা নিয়ে . Clause of marriage এ already তিনি বলে দিয়েছিলেন যে তার মাছ ধরা হবে না . কিন্তু বিধাতা মুচকি হেসেছিলেন . আমার মা আধুনিক হলেও আমার ঠাকুমার আদেশে আমার ভাই গিয়ে বাজার থেকে একটা জ্যান্ত রুই নিয়ে এসেছিল . প্রথামতো সেই মাছ হাতে নিয়ে তবেই নতুন বউ কে ঘরে ঢুকতে হবে .
ব্যাপার টা নিতান্তই চাপের ছিল আমার কাছেও . কারণ আমি কোনদিন জ্যান্ত মাছ মেরে কাটিনি . সব সময় মরা মাছ fridge থেকে বার করে কেটেছি . এমন কি জ্যান্ত কাকরা মারার সহজ উপায় ছিল box এ ভরে deep fridge এ কিছুক্ষণ ঢুকিয়ে দিলেই ব্যাটারা ধীরে ধীরে অক্কা পেত . আমিও তখন দিব্বি তাদের বার করে বীর বিক্রমে হাত পা গুলো ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতাম . কিন্তু জ্যান্ত মাছ মানে জীয়ল মাছ কখনো ধরিনি . সেটা বাবার department ছিল .
তা গিন্নি অনেক চেষ্টাই , অর্ধেক বমি করে যখন মাছ টিকে ধরেছিল তখন নতুন virgin এর ছোয়া পেয়ে মাছ টিও তড়াক করে এক হাথ লাফিয়ে উঠে সোজা আমার নববধুর বক্ষদেশে আক্রমন করেছিল . সেই আঁশটানি গন্ধ নিয়ে তাকে আরো তিন চার ঘন্টা থাকতে হয়েছিল . আজও সেই আঁশটানি গন্ধ তার মুখ থেকে বেরয় .
“ওই পুরনো কাসুন্দি ঘেটে লাভ নেই . ওসব tradition. করতেই হয় .”
“সেটাই তো বলছি … যখন tradition তখন শনিবার এ মাছ কাটছ কেন .”
উফ … আগেই বলেছি মেয়েমানুষ , রিক্সাওয়ালাহ আর হকারের সাথে কদাপি ঝগড়ায় নামতে নেই . হার অবধারিত . কিন্তু কে কার কথা শোনে আমিও একটু ঘুরিয়ে দিলাম , “আধুনিকতা কাকে বলে বোঝো ?? বিদেশে নিয়ে চলে এলাম . পৃথিবী দেখছ তবুও তোমার কিছুতেই ভুলভাল tradition ছাড়তে ইচ্ছা করে না . আমার চার পুরুষ আগে এক মহিলা সতী হয়েছিলেন . তুমি হবে ?? Tradtion দেখিও না .”
“কে মরবে আগে দেখো . এই শুকনো হাড় এ আর তোমার অত্যাচার আর সহ্য হচ্ছে না .”
“শুকনোই বটে … গাদা গাদা calcium tablet খাবার থেকে একটু ছোট মাছ চিবিয়ে খেলে আজ আমার ভারও সইতে পরতে . কেউ কখনো বাতাসী মাছের কাঁটা বাছে ??”
“সবাই তোমার মত রাক্ষুসে হয় না . তুমি তো শিশুপাল . বামুনের ঘরে রাক্ষসের জন্ম . কৃষ্ণের মত শুধু ক্ষমা করে চলেছি . শুধু ভুলে গেছি গুনতে .”
শুনুন উদাহরণ খানা . ধম্ম কতটা গিঁট পাকিয়েছে বুঝলেন তো . আমি বুঝলাম আর same line এ থাকলে চলবে না . গিন্নি কে confuse করে দিতে হবে তবে গিয়ে সে চুপ করবে .
“হতে পারি শিশুপাল কিন্তু তুমি যে দিব্বি ঘাস পাতা ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছ . আমি তো শুধু প্রাণগুলোর একেক ভাগ খাই . তুমি তো সমূলে উত্খাত করে সব গিলে চলেছ .”
“সে আবার কি ?”
“দিন রাত শাক আর শাক … ওগুলোর কি বাঁচার অধিকার নেই . তাও আবার শিশু বোধ . কি না , কচি দেখে আনবে . একটু মূল পর্যন্তউ তো চার্চ না . মুলো , আলু , আদা …. আর কত বলব … তার থেকে তো মাছ খাব ভালো . প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকবে . ”
“বাব্বা … কোথা থেকে আমার কাক এলো রে . প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করছে . যাও না তাহলে শুধুই মাছ খাও. দু দিন বাদে ঘ্যান ঘ্যান কোরো না সবজির জন্য .”
“আমি কি বলেছি ? কথা ঘুরিও না. ” কথা ঘোরাতে গিয়ে নিজে ঘুরে গেলাম . তাও প্রচেষ্টা অব্যাহত , “এত যে ধর্ম ধর্ম করছ তা ঠাকুর কে তো শুধু ফুল আর ধুপ দেখাও, গেলাও তো না কিছু .”
“আমি কে ? যে ঠাকুর কে কিছু খেতে দেব . তিনি তো সব কিছুর অধিকারী . আমার কি সাহস তাকে খেতে দেওয়ার . আমি তো শুধু তাকে ফুল চন্দন দিয়ে পুজো করি আর শুদ্ধ ভাবে পুজো করি যাতে তিনি বোঝেন যে তার সৃষ্টি কে অবজ্ঞা করছিনা .”
কথাতে জোর ছিল কিন্তু পিছিয়ে গেলে হবে না , “তাহলে দেখেছ তো tradition টা তুমিও মানছ না . আমার বাড়িতে ঠাকুর কে জল না দিয়ে কেউ জলগ্রহন করে না .”
“ঠিক আছে …. ঠিক আছে … তোমার সাথে কথায় পারব না . কিন্তু আমি এখন স্নান করে পুজো করব তার পর তোমার মাছ রান্না করব . ”
“সেই এলে না পথে …. আমার মত ধার্মিক স্বামী পেয়েছ বলে বত্তে গেছ … ওই রকম ধ্র্যাস্টামো ধর্ম নিয়ে আমি থাকি না . হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস কোরো তো বেদান্ত শেখো …. বিবেকানন্দ শেখো . এইসব ধাপের আচার আচরণ সব ভুল ভাল যুগে তৈরী হয়েছে .”
“আবার জ্ঞান এর ঝুরি খুলে বসলে . সব বিষয়ে বকতে হবে তোমাকে . বিবেকানন্দও তো মরেছিল সব ছাইপাঁশ গিলে . তুমিও তো সেই red meat এর ফ্যান . শুধু আমিইই এই বাড়ির ধর্ম রক্ষা করছি . তোমার কথা শুনলে কবে তুমি গরু শুওর মেরে ঢুকিয়ে দিতে ঘরে .”
“গরু শুওর খাব খারাপ কিসের? দেখো, বিশ্বের যত বড় বড় ধনী দেশ সবাই গরু শুওর খায় … আমি তো গরু খাইনা … শুওর টা খাই …”
“ওই হলো … গরু শুওর এক জিনিস … ”
“তুমি কৃষ্ণের বাহন কে নিকৃষ্ট জীব এর সাথে তুলনা করলে . এই জন্যই আমাদের পরিবার এ শান্তি নেই .”
“আহা রে … ওই শুওর খেয়েও তো ধনী হতে দেখলাম না … নাকি ধনী লোকেরা খায় বলে উনিও খাবেন .. ধর্মে সইবে না … দেখছ না এই দেশে কত অশান্তি … সব ভগবান এর শাপ .”
“তাই নাকি …. তুমি কত জানো …. শুওর খেতে আমাদের ধর্মে মোটেই বারণ করেনি .”
“তুমি সব জানো …”
“জানি বই কি … কৃষ্ণের বাহন বলে গরু খাওয়া যাবে না বুঝলাম, কিন্তু শুওর কার বাহন ?? আমরা কি মুসলমান, যে শুওর খাওয়া খারাপ ? তাদের তো কারণ আছে যেটা বেশ scientific… শুওর হালাল করা যায় না … তাই খায় না ..”
“এতই যদি জানো তো তাহলে এও তো জানা উচিত যে মাছ ও খাওয়া উচিত নয় গঙ্গার বাহন বলে ..” গিন্নি আবার back to pavilion. আমিও পৈতেধারী ব্রাহ্মন তর্কে হেরে গেলে পৈতে খুলতে হবে .
“গঙ্গার বাহন তো কুমির . সে আবার কবে থেকে মাছ হলো .”
“কুমির মাছ নয় ?…. মগর মাছ হিন্দী তে বলে জানো না .”
“তুমি তো সব কিছুকেই তাহলে মাছ বলবে …. ”
“তুমি যদি চিংড়ি কে মাছ বলতে পারো তাহলে কুমির কে মাছ বললে ক্ষতি কি … জাপানে তো খায় .”
“এ যুক্তি বোকা বোকা … আমি তো খাইনা … আমি সেই মাছই খাই যেটা কারো বাহন নয় … ”
“বাহন না হোক … অন্য কিছু তো বটেই …”
“অন্য কিছু মানে ?”
“গরু তো নারায়ণ এর অবতার এর বাহন …. আর তুমি তো স্বয়ং নারায়ণ এর অবতার কেই গিলছ . মত্স্য আর বরাহ দুটি তো অবতার … গিলছ না বল ???”
যুক্তির বিষম আঘাতে অক্কা পেয়ে গেলাম . এক হাতে পৈতে ধরে আরেক হাতে কাটা ইলিশের পিস ধরে কিছুক্ষণ ভেবে দেখলাম যে কতটা খাঁটি . তারপর বললাম , “ছাড়ো তো ওসব . হিন্দু ধর্মে কালাপানি পেরলেই জাত যায় .. খোদ ধর্মে লেখা আছে … যখন পেরিয়েই গেছি তখন আর জাত নিয়ে ভয় পেয়ে লাভ নেই … তার চেয়ে বরং একটু ভাপা ইলিশ কোরো ….”
No comments:
Post a Comment