“কে
বলেছে ও আমেরিকান। ও
হলো আমেরিকান পাসপোর্ট হোল্ডার ওভারসিজ
সিটিজেন অফ ইন্ডিয়া।” বাবা অন্তত চল্লিশবার ফোনে এই কথা বলেছে সবাইকে। দোষটা বাবার নয়। সবাই মিলে একবার
তুলছে, একবার ফেলছে। একবার
বলছে আমেরিকান বয় আসছে। একবার
বলছে দেশি ছানা আসছে। কি কনফিউশান। বাবা
ই বা কোথায় যায়। এই
জন্যেই বোধহয় বাবা বার বার বলে, ছেলে হবে আমেরিকান বর্ন কনফিউসড দেশি মানে এ বি সি
ডি ।
যাকগে
বাবা। ওসব বাবা মায়ের ঝামেলা। আমি বরঞ্চ শুরু করি আমার বাবার দেশে
ঘোরার গল্প। হ্যাঁ
হ্যাঁ , দেশটা আমারও, কিন্তু বাবার আপাতত আমার থেকে বেশি। বাবা ওখানে ছাব্বিশ বছর কাটিয়েছে আর
আমি বাইশ মাস বয়সে গিয়ে হাজির হলাম। বাবার
আলাদাই এক্সাইটমেন্ট ছিল ছেলেকে দেশে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু যেহেতু কাপড়ে হাগা লোক , তাই
সেই এক্সাইটমেন্ট ছাপিয়ে গেছিলো আমাকে নিয়ে যাওয়ার ভয়। কিন্তু আমি কনফিডেন্ট ছিলাম। ট্রপিক্যাল
কান্ট্রি , ডিফারেন্ট সেটআপ , নতুন নতুন রোগ , অনেক ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা করেছিল ,
কিন্তু মি মাইসেলফ এন্ড আই ছিলাম সুপার কনফিডেন্ট - আই উইল গিভ দা বেস্ট।
বাবা
খুঁচিয়ে আমাকে জানলার ধরে বসিয়ে দিলো বটে, কিন্তু তখনা তো রাত, জানলাটাই বুঝতে
পারলাম না। এই প্লেন
যে কি জিনিস সে না চড়লে বোঝা যাবেনা। আমি
যদিও চড়েও বুঝিনি। শুধু
যখন প্লেনটা ছেড়ে দিলো, বাবা তখন মা কে খোঁচাতে লাগলো, “ওকে দুধ দাও দাও, এখুনি
কান বন্ধ হয়ে যাবে“ বলে । তখন
বুঝতে পারলাম যে বাবার আওয়াজ আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। যেই না এক ঢোক গিলেছি সেই দেখি বাবার
কথা পরিষ্কার। আবার
কিছুক্ষণের মধ্যে সেই এক কেস। হেব্বি
মজা লাগছিলো। আমি একটু
একটু করে চুমুক দিচ্ছিলাম।
প্রথমে
তো আমি কোলেই বসেছিলাম। তারপর
যখন কান বন্ধ হওয়া বন্ধ হলো তখন আমাকে নামিয়ে দিয়ে পাশে বসিয়ে দিলো। তখন দেখি আমার সামনে টিভি। আর এই প্রথম বার বাবা আর মা আমাকে
টিভি দেখার জন্য উৎসাহিত করছে। কি
মজা। কিন্ত হা ভগবান আমার ফেভারিট চুচু
টিভি কই। নানা
কিছু টিপে টাপে আমি থেমে গেলাম। কিন্তু
করার মতো তো কিছু থাকতে হবে। হঠাৎ
দেখি মা ব্যাগ থেকে খিচুড়ি বার করছে। এই
রে। এখানেও খিচুরী। আমি কোথায় ভাবলাম ঘুরতে গিয়ে ভালো
মন্দ খাবো। তা নয় সেই পুরানো ঘ্যাঁট। বাবা
আমার পক্ষে ছিল সেটা মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো কিন্তু বেচারা অসহায়। মা যুদ্ধ শুরু করার আগে নিজের ফোনে চু
চু টিভি লাগিয়ে দিলো , ব্যাস আমিও ন্যাতা। কিছুক্ষনের
মধ্যে যদিও বোর হয়ে চিৎকার করে খিচুড়ির বাটি উল্টে ফোনে চুমু খেয়ে যা তা কান্ড করে
ফেললাম। কিন্তু পেটটা ভরে গেলো। এবার আরাম করে হালকা মুতে ডায়পার
চেঞ্জ করে শুয়ে পড়বো। পাবলিক
প্লেস, তাই বাথরুমে গিয়ে চেঞ্জ করতে হবে। সেটার
অপেক্ষা করতে করতে হঠাৎ দেখি মা আমার প্যান্ট ধরে টানছে। ও মা, এখানে ওপেনলি চেঞ্জ করবে নাকি,
আমার কি প্রেস্টিজ নেই নাকি। দেখি
বাবা দাঁড়িয়ে পরলো আর বলতে লাগলো, “এখানেই করে দাও। কেউ কিছু বললে আমি দেখবো।” যেহেতু হাগু হয়নি তাই গন্ধ ছড়ানোর
ব্যাপার নেই। দিব্যি
আমার ডাইপার টপটপ চেঞ্জ হয়ে গেলো। আর
কিছুক্ষনের মধ্যে সবাই মিলে দে ঘুম।
মাঝে
মাঝে আমার ঘুম ভাঙছিল , কখনো উঠে দেখি বাবা জেগে , কখনো মা। বেশির ভাগ সময় দেখি বাবা মায়ের কাছে
কোনো রকমে একটা ঝুলে থেকে শুয়ে আছে। ইস
বাবাদের কি কষ্ট। হয়তো আমার বাবারই বেশি কষ্ট , আমি কখনো বাবার মতো বাবা হবো না।
বেশ
কিছুক্ষন ঘুমিয়ে টুমিয়ে যখন উঠলাম তখন দেখি সামনে কত খাবার , কিন্তু সব অখাদ্য .
আমার পছন্দ ওই স্পুনগুলো। আমি
যত নিতে চাইছি , মা ততো কেড়ে নিচ্ছে শেষে ওই
খাবার দেওয়া আন্টিটা আমায় একটা খেলনা দিয়ে গেলো। বাজে খেলনা, আমি ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ঢুকে গেলাম
সামনের সিটের তলায়। শেষমেশ
বাবা বুঝতে পারলো এই ভাবে আমার মতো জিনিসকে আটকানো যাবে না। ফাঁকা মাঠে ছেড়ে দিতে আমি প্লেনটা এক
চক্কর মেরে এলাম।
অনেক বড়
জায়গা। হাঁটছি তো হাঁটছি , মাঝে মাঝে পিছু
ফিরে দেখে নিচ্ছি বাবা আমায় ফলো করছে কিনা।
এতো লোক, কিন্তু সবাই বসে আছে কেন? কয়েকজনকে ধাক্কা দিয়েও দেখলাম, কেউ নড়বে না , ঠিক যেমন বাবা সন্ধ্যেবেলা নড়ে
না, এরাও নড়ছে না। আমার বয়সী একজন ছিল , দিলাম ধাক্কা ,
কিন্তু ভ্যাঁ করে কেঁদে দিতে দেখি বাবা পেছন থেকে সরি বলতে বলতে দৌড়ে আসছে। আমিও দিলাম ছুট সামনের দিকে, এক পাক
ঘুরে দেখি বাবা আর আমার মাঝে চারটে চেয়ার। কিন্তু
এ কি রে বাবা, এক মহিলা খপাৎ করে আমায় ধরে নিলো। দ্যাটস হাইলি ডিসগাস্টিং , কিন্তু
মায়ের মতোই গায়ের শক্তি তাই বিশেষ কিছু করতে পারলাম না। পেছন থেকে দেখি বাবা এসে কোলে তুলে
নিয়ে আবার সেই সিটে নিয়ে গেলো।
এই খেলা
বার বার চলতে চলতে একসময় আবার ঘুম পেয়ে গেলো। ঘুম
ভাঙতে দেখি আবার সেই দুধ
খাওয়া আর বাবা মায়ের আওয়াজ কমে যাওয়া খেলা শুরু. কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা প্লেন থেকে বেরিয়ে গেলাম। মায়ের দেখি মুখ কাঁচুমাঁচু , আমরা নাকি দেরিতে বেড়িয়েছি বলে এয়ারপোর্ট এর স্ট্রলার নাকি সবাই নিয়ে নিয়েছে। মা টা না হেব্বি বুদ্ধু , সবার কি স্ট্রলার আছে নাকি। আর নাই বা থাকুক স্ট্রলার আমার তো বাবা আছে। ফাঁকা এয়ারপোর্টে দৌড়াতে শুরু করতেই বাবা সোজা কাঁধে তুলে নিলো। কিচ্ছুক্ষনের মধ্যেই যদিও লাল টুকটুকে একটা স্ট্রলারে আমায় বসিয়ে দিলো , তারপর শুধু চলা আর চলা।
খাওয়া আর বাবা মায়ের আওয়াজ কমে যাওয়া খেলা শুরু. কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা প্লেন থেকে বেরিয়ে গেলাম। মায়ের দেখি মুখ কাঁচুমাঁচু , আমরা নাকি দেরিতে বেড়িয়েছি বলে এয়ারপোর্ট এর স্ট্রলার নাকি সবাই নিয়ে নিয়েছে। মা টা না হেব্বি বুদ্ধু , সবার কি স্ট্রলার আছে নাকি। আর নাই বা থাকুক স্ট্রলার আমার তো বাবা আছে। ফাঁকা এয়ারপোর্টে দৌড়াতে শুরু করতেই বাবা সোজা কাঁধে তুলে নিলো। কিচ্ছুক্ষনের মধ্যেই যদিও লাল টুকটুকে একটা স্ট্রলারে আমায় বসিয়ে দিলো , তারপর শুধু চলা আর চলা।
একজায়গায়
একটা দরজা ছিল। আমি
ওর মধ্যে দিয়ে দৌড়ে যেতে গিয়ে দেখি হুমদো মতো একটা লোক এসে সামনে দাঁড়িয়ে একটা
খেলনা দিয়ে আমার সারা গায়ে বুলিয়ে দিলো। মা
খুব হাসছিল , আমার নাকি চেকিং হচ্ছে। চেকিং
আবার কি? সে থাকগে , সেখান থেকে বেরিয়ে সে এক প্রকান্ড বাজারে ঢুকলাম। কতো দোকান, কত মানুষ , কত আলো। সবাই কত কি কিনছে। আমার ঘুরতেই থাকলাম দোকান থেকে দোকানে
, কিন্তু মজার ব্যাপার হলো মা কিচ্ছু কিনল না। কতক্ষন ঘুরেছি জানিনা , মাঝে
স্ট্রলারে বসে বসেই এক চোট ঘুমিয়ে নিয়ে চোখ খুলতে দেখি আবার একটা প্লেনে গিয়ে
ঢুকেছি। এ কি রে বাবা। তার ওপর এটা কি ছোটো প্লেন। সবাই সবাইকে ধাক্কা দিচ্ছে। তবে মজার ব্যাপার হলো বাবা মা যে
ভাষায় কথা বলে সেই ভাষাতেই সবাই কথা বলছে।
এই
প্লেনে আমাকে সত্যি সত্যি সিট দেয়নি। আমরা
প্লেনে ঢুকেই প্রথম সিটে গিয়ে বসেছিলাম। তারপর লোক উঠেই যাচ্ছে , উঠেই যাচ্ছে। এদিকে মা আমাকে আঁকড়ে ধরে বসে আছে। শেষে বাবা নিজে উঠে দাঁড়িয়ে আমায়
নিজের সিটের সাথে সেই বেল্ট দিয়ে বেঁধে দিলো। খুব
গরম লাগছিল , বার বার জুতো
খোলা চেষ্টা ককরছিলাম কিন্তু বাবা এমন ভাবে আটকে রেখেছিল যে কিছুতেই সামনে ঝুঁকতে
পারছিলাম না। অনেকবার
আকার ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করেও যখন বাবা মা বুঝল না , তখন বুঝলাম যে নিজের
লোকেরা বয়স বাড়ার সাথে সাথে পর হয়ে যায়। পাশ
দিয়ে যে লোকগুলো যাচ্ছিল তাদেরই ধরলাম , একজন ঠিক বুঝলো। আমার জুতো খুলে দিয়ে মায়ের হাতে ধরিয়ে
দিয়ে এগিয়ে গেলো। আমিও
মায়ের দিকে একটা অবজ্ঞার হাসি দিয়ে নিজের সেলফ সাফিসিয়েন্ট হওয়ার একটা ভাব দেখলাম।
এই
প্লেনে খুব দম বন্ধ হয়ে আসছিল। দৌড়ানোর
জায়গাও খুব কম। কিছুক্ষন
ঘুরে টুরে এসে আমিও বিরক্ত হয়ে গেলাম। এ
কি রে বাবা , সবাই গাল টাল টিপে দিচ্ছে। আমি
কি পুতুল নাকি। সবাই
হাত লাগাবে। বাবার
পাশে দুজন বসে ছিল। তারা
ওপর থেকে নিচে পর্যন্ত শুধু সাদা পড়েছিল। কি
বোরিং রে বাবা। আমার
কি সুন্দর নানা ছবি আঁকা ড্রেস। ওদের
মধ্যে যে মায়ের মতন , সে আবার আমাকে
বার বার কোলে নিতে চায়। কেন
বাপু , চিনিনা জানিনা কোলে কেন যাবো? তবে ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম দ্যাট ইস দা
ট্রিক। এই লোকগুলো আলাদা। এদের
কোলে গেলে তবেই বাবা মা খুশি।
দ্যাটস
ফাইন, কিন্তু যতক্ষণে আমরা নামলাম ততক্ষনে বেশ ইরিটেট হয়ে গেছি , বুঝলাম জার্নিটা
অনেকটা। এই এয়ারপোর্টটাও বেশ বড় , তবে সবথেকে
বিরক্তিকর হলো ব্যাগ নেওয়া। ওই
গোল জায়গাটায়, যেখানে একের পর এক ব্যাগ আসছিলো , আমার কি ইচ্ছা করছিলো উঠে যেতে,
কিন্তু বাবা কিছুতেই উঠতে দিচ্ছিল না। শেষে
মাও চলে গেলো বাথরুমে। ব্যাস , আর কি চাই , বাবাকে ট্যাঁকে গোজা কোনো প্রব্লেম
নেই। বাবা ইসি , বাবা চায় আমাকে ফ্রিডম
দিতে। আমি দৌড়াব আর বাবা আমার পেছন পেছন
দৌড়াবে। এতেই বাবা খুশি। আমি দৌড়ে গেলাম , আর বাবাও দৌড়াতে
লাগলো আমার পেছন পেছন। কিন্তু
মাঝে মধ্যেই কেউ না কেউ আমাকে ধরতে লাগলো। এ
কি রে বাবা। আমি
তাদের কি করেছি? আমার দেশে তো এরকম হয় না। বার
পাঁচেক বাবা আমাকে অন্য লোকেদের কাছ থেকে উদ্ধার করার পর যখন দেখলাম মা ফিরে এসেছে
, তখন আমরা বেরোনোর জন্য রেডি হয়ে গেলাম।
এবার আমি
কিছুতেই মায়ের গা থেকে ঝুলবো না। বাবা
দেখলাম আমাকে সুটকেসের বোঝার ওপরেই তুলে দিলো। আর ঠেলতে লাগলো কার্ট টাকে। একটা দরজা দিয়ে বেরোতে দমকা একটা গরম
এসে গায়ে লাগলো। আর সামনে কত লোক দাঁড়িয়ে। সেই
ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন ছুটে এসে আমাকে কোলে তুলে নিলো। আমার ঠাম্মা। কি মিষ্টি। হেঁসে কেঁদে নেচে কুঁদে আমায় কোলে করে
আদর করেই গেলো করেই গেলো। বাবা
পেছন থেকে অনেক কিছু বলার বা করার চেষ্টা করেও বিশেষ কিছু করতে পারলো না। শুধু আমি কোলে উঠেছি সেই খুশিতেই পাগল
হয়ে গেছে। আমি
বুঝলাম দিস ইসি ট্রিক ওয়ার্কস। দাদুও
ছিল। ইতস্তত করতে করতে যখন হাত বাড়ালো তখন
আমি সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। দেখলাম
আই ওয়াস রাইট। দাদুও
সেম আক্শান। আদর করেই
গেলো করেই গেলো।
No comments:
Post a Comment