Thursday, November 8, 2018

ডিমনিটাইজেশান - দু বছর




আজ সেই দিন।  সে-ই-ই দিন।  যেদিন প্রধানমন্ত্রী ধপ্পা দিয়েছিলো একটা গোটা দেশকে।  না না , স্পেলিং মিস্টেক নয় - ধপ্পাই।  ভগবান আবার ধাপ্পা দেয় নাকি।  যারা টুকি টুকি খেলছিল তাদের পেছন থেকে এসে ধ-অ-অ-অ-প্পা।  আর ধরা পরে গেলেই খেলবো না খেলবো না করে সবার কি চিৎকার।  কতজন তো জন্যই না এতে প্র্যাক্টিস ম্যাচই নেই।  কেউ ভেবেছিলো এলেবেলে।  কেউ ভেবেছিলো আবার থেকে শুরু হবে।  প্রধানমন্ত্রী তো বলেছিলো পঞ্চাশ দিনে আবার খেলা শুরু হবে, নাহলে চৌরাস্তার মোড়ে ডট ডট ডট। আমি তুমি ভেবেছিলাম ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতিতে আমাদের এক রদ্দির সেভিংস ঠিক সামলে যাবে।  গম্ভীর ভাবে সাপোর্ট করেছিলাম আর খ্যাঁক খ্যাঁক করে তেড়ে এসেছিলাম তাদের দিকে যারা আগেভাগেই হিন্দি "জুমলা" শব্দের মানে বুঝে গেছিলো।  কি  দেশপ্রেম।  রোদ্দুরে এটিএম এর লাইনে দাঁড়িয়ে দুহাজার টাকা তুলে বাড়িতে এসে হড় হড় বমি করার পরও বলেছিলাম "হর হর মোদী " . এন ডি এর পরীক্ষায় চান্স না পাওয়া মানুষগুলো ফাইনালি একটা চান্স পেয়েছিলো দেশের সেনাদের লেভেলের  দেশাত্মবোধক হতে।  উফফ কি দিনগুলো ছিল।  অর্থনৈতিক নিয়মের জগন্নাথ রোজ রোজ হেঁটে চলে বেড়াচ্ছিল।  "না না দাদা নিয়ম পাল্টাবে না" - এসব কথা নিমেষে উধাও।  নিয়ম প্রতিনিয়ত পাল্টে যেত।  আহা জয় স্তালিনের জয় , জয় হিটলারের জয়। এহ আবার বিদেশী কুকুরদের নাম।  দেশে কি কখনো স্বৈরাচার ছিল না।  আচ্ছা আচ্ছা , জয় মুহম্মদ - বিন - তুঘলকের জয়।  ওহ শালা মুসলমান।  আমরা হিন্দুরাজ্য বানাবো।  স্যার তাহলে তো আপনিই - হেঁ হেঁ ।  তা দাদা হিন্দুরাজ্য বানাতে তো টাকা লাগবে, দেবে কে ? মন্দির গুলো।  না না , সব কালো টাকা সাদা করে দেব।  গুজরাতিদের ? ধুর , ওরা গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত - একটাই কংগ্রেস ঘেঁষা প্রব্লেম।  যারা ছোট চোর তাদের।  সবাই বলে না , আমাদের দেশে ছিঁচকের সংখ্যা প্রচুর।  তাদের ধরতে হবে।  কিন্তু ১০০ টা ছিঁচকে ধরলে তো ১০০ টাকা লাভ।  তার থেকে ডাকাত ধরুন না - একেবারেই এক কোটি।  আহ ভায়া , তুমি চুপ করো তো।  রাজনীতি বোঝোনা , অর্থনীতি বোঝোনা - এসে গেছো জ্ঞান দিতে। ওই লোকগুলোকে তো দরকার দেশের জন্য , নাহলে ইনভেস্টমেন্ট  করবে কে , আর আমার রিটায়ারমেন্ট প্ল্যান।  আপনি তো ফকির , ঝোলা ওঠাবেন আর হাঁটতে থাকবেন।  "নো কমেন্টস - যা বলবো মন কি বাত এ বলবো।" তাই তো , তাই তো।  কথা কম কাজ বেশি।  মূর্তি তৈরী করতে তো অনেক খাটনি।  তার ওপর ওই অতগুলো কালো টাকা।  কত লোকে জলাঞ্জলি দিয়ে দিলো বাতিল নোটগুলোর।  রোজ টিভিতে আসতে লাগলো।  কেউ দেউলিয়া হয়ে গেলো।  আর হু হু করে টাকা ঢুকতেই লাগলো দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে। নতুন নোট বেরোলো। কি সুন্দর দেখতে।  "হোলি হ্যায়" নোট।  রক্তের হোলি।  ১৬৪ জন নাকি লাইনে দাঁড়িয়ে মারা গেছে।  ধুর মশাই , একশো কোটির লাভ তো হচ্ছে।  তা তো বটেই,  তা তো বটেই। ডিমনিটাইজেশনের রিয়েলিটি শোএর চাপে রিয়েলটি সেক্টর তলানিতে।  যাবেই তো , দু নম্বরি শালাগুলো, মরুক।  আর মজুর রা।  ওরা তো দিন আনে দিন খায়।  ওরা আবার মানুষ নাকি।  মানুষরূপী উকুন।  পিষে মারলেও ঠিক তৈরী হয়ে যাবে।  বরঞ্চ তাদের দিকে নজর দেওয়া উচিত যারা ইয়াহা কা মাটি ওয়াহা , আর ওয়াহ কা মাটি ইয়াহা করে।  তারাই বানাবে হিন্দুরাষ্ট্র।  কিন্তু এই এতগুলো মধ্যবিত্ত যারা সমস্ত জীবন উজাড় করে পয়সা সঞ্চয় করে রেখেছে ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে বা সাধারণ একাউন্ট এ।  তাদের তো আজকেই দরকার।  কাল যে মেয়ের বিয়ে।  মেয়ের বিয়ে কথা বলে বলে তো গন্ডগোল করে দিলে তো বাপু।  ঘুঁষ আর দেনাপাওনার কথা বলবে না - না খাই না খেতে দিই।  না না , বিয়ে বাড়ির খরচ তো আছে।  ওসব হয়ে যাবে, কিচ্ছু সমস্যা নেই।  না না , আপনি ভুল ভাবছেন , বাঁশওয়ালা টাকা চাইছে , নাহলে প্যান্ডেল বাঁধবে না।  পেটিএম করুক।  এখন মেয়ের বিয়ের কথা চিন্তা করবো না টেকনোলজি শিখব।  তোমরা দেশদ্রোহী।  ক্যাশ দেবোনা , মানে দেব না।  ক্যাশলেস ইকোনোমি কে প্রমোট করছি।  কিন্ত তাতেও তো ব্যাংক এ টাকা রাখতে হবে।  এই ঘটনার পর তো আমার টাকা ব্যাংকে রাখার কোনো মানেই হয় না।  আমার নিজের টাকা নিজের ঘরে ক্যাশ বাক্সে রাখাই ভালো নয় কি ? না না , তা কেন।  সব ঠিক হয়ে যাবে , আর একশো দিন দাও। 



দুটো বছর কেটে গেলো এই গালগল্পে।  সেই অটোওয়ালা পেটিএম একাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে ,  সেই লাল নীল সবুজ টাকা গুলোও আবার কালো টাকায় পরিণত হয়ে গেছে, এটিএমের লাইন আবার ফাঁকা হয়ে গেছে , আবার খুচরো নেই বলে শুরু হয়ে গেছে ঝগড়া , ফুলে উঠেছে মানিব্যাগ আর সমস্ত টাকা ফেরত চলে এসেছে ব্যাংকে।  ফেরেনি সেই গুটিকয়েক লোক যারা এটিএমের লাইনে মাথা দিয়েছিলো , ফেরেনি সেই ভি আর এস নিয়ে নেওয়া ব্যাংকের কর্মচারীরা , ফেরেনি বিয়ের দিনে লাঞ্ছনার শিকার হওয়া জীবনগুলোর , ফেরেনি সেই কালকের মজুরি পেলে শোধ দিয়ে দেব লোকটা , ফেরেনি সেই সময়গুলো যেগুলো কিছু ভালো জিনিসে ব্যয় করার বদলে এটিএমের লাইনে শেষ হয়ে গেছিলো।  সেদিন শান্তি পেয়েছিলাম  হয়েছিলাম এই ভেবে , যে মানুষ এতো কষ্ট চুপ হয়ে কি করে সহ্য করছে।  ভাগ্যিস মারামারি হয়নি।  সেদিন আমিও লাইনে ছিলাম বলে হয়তো তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু আজ ভাবি , সেদিন সাংঘাতিক প্রতিবাদের দরকার ছিল , ছিল দরকার রক্ত বয়ে যাওয়ার।  ওই ১৬৪ লোক যদি এটিএমের লাইনের সামনে গায়ে আগুন দিয়ে মারা যেত তাহলে হয়তো তাদের মৃত্যুকে এরা মৃত্যু বলে গণ্য  করতো।  যদি তখন লোকে লাইনে না দাঁড়িয়ে মিছিলে দাঁড়াতো তাহলে হয়তো এই চোরের রাজত্ব এতো নিচে নামতে পারতো না।  কি বিশাল একটা চুরি নাকের ডগা দিয়ে করে নিয়ে চলে গেলো, আর সবাই ধন্যি ধন্যি সুখ্যাতি করে গেলো।

আজও করছে।  হয়তো আরোও করবে।  হে মোর দুর্ভাগা দেশ।  একটা কেউ নেই যে উঠে এই শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে  দাঁড়িয়ে বলবে যে এই স্বৈরতন্ত্র আমার চাইনা।  চাইনা পরিবারতন্ত্র। চাইনা ব্যবসায়ী রাজ।  চাই গণতন্ত্র। 

............

ধ্যার ধ্যার ধ্যার ধ্যার - গণতন্ত্রেও তো সেই মুরগীরা রাজা হবে , যারা দাঁড়িয়েছিল ওই লাইনে , আমার তোমার মতো।  আর কি লিখবো - জয় মোদির জয়।  জয় নিরভ মোদির জয়।  জয় সেই মুরগি গুলোর যারা পরের ভোটেও সেই "ওয়াহ মোদী ওয়াহ " করে যাবে।  আর ধর্ম পালনের বদলে ধর্মভেদে মশগুল হয়ে থাকবে।  এইটা বলতে পারি একটা আঙ্গুল সেদিন ভুল করবে না , আর ততদিন এই দশটা আঙ্গুল চেষ্টা করবে অনেককে রোখার জন্য।  দেখা যাক কি হয়।   

----------------------------------------

ঠিক ডিমনিটাইজেশানের বছরে হাতে গরম ফার্স্ট হ্যান্ড এক্সপেরিন্স লিখেছিলাম।  তার লিংক নিচে দিলাম। .... 

অর্থ সঙ্কট

https://arkalekhalekhi.blogspot.com/2016/11/blog-post_20.html




         


No comments:

Post a Comment