
সব রেডি তো ! মদ মাংস আর পার্টির সব ব্যবস্থা। রেডি নেই ? বলো কি ভাই? কালকে যে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে বোতলগুলো নিয়ে এলে , আজকে ড্ৰাই ডে বলে। সমস্যা বেশি নেই। যেমন দোসরা অক্টোবর পাওয়া যায়। আজকেও পাওয়া যাবে। জানতে হবে কোথায় , আর কার কাছে পাওয়া যাবে। যদি না জানো তাহলে অন্তত এইটা তো জানো কার কাছে , কাদের বাড়িতে এক্সট্রা পেগ আছে। মদ কি আর একা খাওয়া যায়। সঙ্গী তো লাগেই। যদিও সঙ্গী কালকেই এসে গেছে সঙ্গে। ওই লাইনেই তো তোমার সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল করোনা ভাই। আজ জমে যাবে , “জব মিল ব্যায়ঠেঙ্গে তিন ইয়ার , ম্যায় , করোনা ভাই আর মৃত্যুদা।”
না দাদা , মদ আমি খাইনা। খেতে ভালোবাসি। আর রবিবারের পাঁঠার মাংস কি আর ছাড়া যায়। টাটকা রক্ত মাখা মাংস না ধুয়ে কড়াইয়ে ছাড়লে তবেই টেস্ট। দোকানটা সামনের দিকে বন্ধ থাকবে। পেছন থেকে খোলা। কোনো চাপ নেই। ঠিক নিয়ে চলে আসবো। তাহলে !!!! বললে হবে খরচা আছে। আর আছে জুগার। একদিন আগে কিনে রাখলে তো পাঁঠার স্বাদ কমে যাবে। একটা পাঁঠা তার জীবন দিতে পারে , আর আপনি পাঁঠার জন্য জীবনের রিস্ক নিতে পারবেনা , ধিক মশাই আপনার যৌবনে।
যৌবন মানে খেলে বেড়ানোর সময়। একে তো ফাগুন মাস, দারুন এ সময়। এসময়ে ঘরে আটকে রাখলে চলে। তার ওপর রবিবার। ছুটির দিন। সবাই মিলে ফিষ্টি করতে হবে। সেখানে মদ মাংস দুটোই চলবে। সঙ্গে থাকবে উদ্দাম নাচ। আর কত খেলা। কাউন্টারে সিগারেট , মিউজিক্যাল চেয়ার , দড়ি টানাটানি , কোমর টানাটানি আর ফচকে ছেলের হাতে কচি মামনি। আঃ , এই করোনার নাম করে একটা সত্যি ছুটি হলো মাইরি।
সাত দিনে , আমেরিকায় দু হাজার করোনা ভাইরাস কেস থেকেছাব্বিশ হাজার কেস দাঁড়িয়েছে। আমেরিকায় খালি জায়গার অভাব নেই। লোকে লোকের সাথে গা ঘেঁষে চলে না। বনগাঁ , ক্যানিং লোকাল নেই। নেই ইউরোপের মতো চুম্বন প্রথাও। আছে , কিছু বেপরোয়া লোক যারা সমস্যা বাড়াতে সমস্যার দিকে উঁকি মারতে গিয়ে কেস খেয়ে যায়। ভারতবর্ষে আছে ভিড় ট্রেন , বাদুড়ঝোলা বাস, ট্রিপল বাইক , জাদু কি ঝাপ্পি , বিজয়া - ঈদের কোলাকুলি, তেরো পার্বণ , মেলা খেলা আর আছে ওই বেপরোয়া অশিক্ষিত লোক যারা “জনতা কারফিউ “ কে ছুটির দিন মনে করে।
আমরা ভারত বন্ধ কে ছুটির দিন মনে করি , ৪৪৪ ধারা কে ছুটির দিন মনে করি , জাতীয় শোক পালন কে ছুটির দিন মনে করি। .. কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু আজ ছুটির দিন নয়। আজ ভয় পাওয়া ভালো। আজ বীর্য গুটিয়ে পেছনে পুরে রাখা ভালো। কাপুরুষ হওয়া ভালো। বাড়িতে বসে থাকা ভালো। সিগারেটের কাউন্টার না দেওয়া ভালো। লুকিয়ে থাকা ভালো। অসামাজিক তকমা ভালো। বাবা মা কে দেখে না , সেই অপবাদও ভালো। গার্লফ্রেন্ড কে সময় না দেওয়া ভালো। ভালো নয়, ভালো হতে গিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসা। ভালো নয় আমেরিকার মতো তলানি থেকে তিন নম্বরে নিয়ে যাওয়া দেশকে।
ভগবানের ভরসায় আমাদের দেশ চলে। কিন্ত এখন বুঝেছেন তো , ভগবানও লুকিয়ে পড়েছে। কমিউনিস্ট চীন যেমন ভুগছে , তেমন ক্যাথলিক ইতালি আর প্রটেস্টান্ট স্পেন ভুগছে , আল্লাহও হাওয়া ইরান থেকে। এই ভাইরাস কাউকে ছাড়ছে না। যদি সাহস দেখাতে হয় তাহলে সোজা চলে যান “করোনা” স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলিতে। যেখানে নিরপরাধ ডাক্তাররা তাদের প্রাণ হাতে করে লড়াই করছে এই ভাইরাসের সাথে। আপনারা যা অপরাধ করছেন তার দায় এই ডাক্তারগুলো কেন নেবে।
দয়া করে বেরোবেন না। ভারতবর্ষ অনেক জিনিসেই পিছিয়ে আছে, পিছিয়ে দিন এই কোরোনাভাইরাসের নাম্বারেও। কোনো অসুবিধা নেই। বোমার মতো ফাটতে যেন না হয়। মনে রাখবেন আপনি একা পারেন এক লক্ষ লোকের বারোটা বাজাতে। যদি ধর্ম মানেন তাহলে নরকে জায়গা হবে না এই পাপের , যদি যুক্তি মানেন তাহলে আজ বাড়ির বাইরে পা রাখাটা অযৌক্তিক আর সবথেকে বড় কথা মানুষ হলে মনে রাখবেন কাছের মানুষগুলো কিন্তু শেষ হয়ে যেতে পারে, আপনার জন্য। আপনি হয়তো বেঁচে যাবেন কিন্তু মেরে যাবেন ষাটোর্ধ মানুষগুলোকে যারা আপনার জীবন বানিয়ে এখন অবসর নিচ্ছেন , এরা কারো মা-বাবা , কারো দাদু-দিদা , কারো পথপ্রদর্শক , কারো ভগবান।
আজ দয়া করে বেরোবেন না ( কাল থেকে দরকার না পড়লে বেরোবেন না )
No comments:
Post a Comment