কারফিউ কথাটা মানে যদি দেখলেই পুলিশের প্যাঁদানো হতো তাহলে হয়তো মানুষ মনে করতো এর দরকার আছে। মানুষ মানে মান আর হুঁশ যাদের আছে তারাই মানুষ। কাঁসর ঘন্টা নিয়ে প্রসেশান দেখার পর কি সত্যি মনে হলো এরা মানুষ ?
পরিস্থিতি খুব খারাপ। আর পরিস্থিতি বুঝতে না পারা মানুষগুলির অভিব্যক্তি আরো খারাপ। কোনোদিন লকডাউনের ছবি দেখেছেন ? আজ ইতালির বড় বড় রাস্তায় দৌড়ে যাওয়া কোটি কোটি গাড়ি পরে আছে গ্যারেজের পেছনে। রোজকার বাজার করা মানুষ গুলো ঘরের ব্যালকনি থেকে একে অপরকে গান শোনাচ্ছে। সিনেমা তে দেখা পোস্ট এপোক্যালিপ্টিক ছবি গুলো আজ চোখের সামনে জ্যান্ত। ছোট ছোট দুধের শিশুর মুখে দুধ যোগানের জন্য প্রাণ হাতে নিয়ে অজানা শত্রুর আসপাশ দিয়ে ঘুরে আসছে অসহায় বাবা - মা রা। আর তোদের মোচ্ছব হচ্ছে ?????
কর না মোচ্ছব। কে বারণ করেছে। কিন্তু বাইরে কেন ? কেন এই উন্মাদনা। বিকাল পাঁচটায় সরকার যা করতে বলেছে সেটা নীরবতা পালনের মতোই নিয়ম মেনে করার মতো ছিল। যে মানুষ গুলো মুখে খাবার যোগান দেওয়ার জন্য প্রাণ হাতে করে আলুটা , মুলোটা দিয়ে যাচ্ছে তাদের সম্মান জানানোর জন্য। আর বদলে তারা কি পেলো। আরো অসুস্থ লোক। টেনে হিঁচড়ে বাড়িয়ে দেওয়া কষ্ট। চুলকে ঘা করে মলম লাগাতে এবার ল্যাজ তুলে তো দৌড়াবেন তো ।
যে ডাক্তারদের থ্যাঙ্কিউ বলতে বাইরে বেরিয়ে গাজন গাইছিস সবাই , তার থেকে গিয়ে গলা টিপে দিলে মনে হয় তার থেকে অনেক বেশি সম্মান দেখানো হতো। ছিঃ ছিঃ , থুতু ছেটাতে ইচ্ছা করছে , যারা সারাটা সময় থুতু ছিটিয়ে গেলো রাস্তায়। মানুষ এখনো কেন বুঝতে পারছে না কেউ অসুস্থ না হলেও সে এই জীবাণু বহন করতে পারে। মশা জানেও না ম্যালেরিয়া ছড়াচ্ছে। ঠিক মশার মতো যখন এই লোকগুলো মরবে তখন কে দায়িত্ব নেবে।
যারা খোলা আকাশের নিচে কাঁসর ঘন্টা বাজালো তাদের মধ্যে সবাই অশিক্ষিত নয়। কেউ অতিশিক্ষিত এবং বেপরোয়া উদগাণ্ডু। এদের থেকে দুরে থাকুন। যারা “কিচ্ছু হবে না” বলে আশ্বাস দেয় তাদের থেকে দূরে থাকুন। তাদের নামে পুজো দিন। তাদের মঙ্গল কামনা করুন আর প্রতিটা সেকেন্ডে গালাগালি দিন। এরা কক্ষনো মানুষের কাজে আসবে না।
আর যখন স্বয়ং ভগবানের মতো ক্রিকেট প্লেয়ার রা বলছেন ঘরে থাকুন তখন সেই ক্রিকেট খেলে তাদের অসম্মান করা হচ্ছে না ? সেই ফাটাকেষ্টর অনুপ্রেরণায় অনুপ্রেরিত আমরা খবর দেখিনা , খবর শুনিনা , খবর বানাই। চোখের সামনে পরে থাকা শয়ে শয়ে লাস দেখতে পারছেন। পারছেন মরা পোড়ানোর ডোম না খুঁজে পাওয়ার চিত্রটা শুধু ভাবতে। পারছেন একবার ভাবতে বাবার লাশ ছাড়াতে গিয়ে দিনের পর দিন লোক পাওয়া যাচ্ছে না মর্গ খোলার।
এই লোকগুলো দায়ী। এই লোকগুলো। এরা শুধু মৃত্যু ছড়াচ্ছে। এদের বহিষ্কার করুন। আমরা অনেক পুরানো সভ্যতা তাহলে কেন জোর করে ডিক্লেয়ার করতে হয় লকডাউন। কেন লোকে নিজে থেকে লোক - ডাউন করে নিতে পারেনা। দুদিন ঘরে বসুন। দুদিন ক্রিকেট বন্ধ করুন। দুদিন বাড়ির লোকেদের সাথে কথা বলুন। বাড়ির দেওয়ালে পরে থাকা ঝুল পরিষ্কার করুন। ডাউনলোড করে জমে থাকা সিনেমা গুলো দেখুন।
বাঁচুন। নাচুন না।
লিখে দিলাম কারণ এখন লোককে যা বলা হচ্ছে সব ভুল প্রমান করে নিজের একটা বক্তৃতা রেখে যাচ্ছে। পড়ছে গরু , বুঝছে ব্যাঙ , বলছে হাতি আর পরের জন সেটাকে হাঁসজারু করে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
সাথে আছে অস্ট্রোলোজি , একজনের পোস্ট দেখে আমি এখন খুঁজতে আরম্ভ করেছি এই “someone very knowledgeable ” টা কে ?

নিশ্চই কেউ যে এই পতাকার ওপর পেচ্ছাপ করার জন্য রেডি হয়েছে। কি দরকার এই দেশাত্মবোধকতার যদি দেশের মানুষ গুলো শেষ হয়ে যায়। কিসের মিছিল কিসের প্রয়োজন। সবাই শুধু সার্কাস চাই। সব ভাঁড় আর সব নোংরা।
ফেসবুকে বসে বসে এই সব দেখে শুধু রক্ত গরম হচ্ছে কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। আপাতত এখানেই থামলাম।




No comments:
Post a Comment