আমার জন্মদিনে এসো
বাবা প্লিস। প্লিস
আমার জন্মদিনে এসো। এট লিস্ট মুখ দেখানোর জন্য হলেও এসো। আমি তোমায় এতদিন কিছু
বলিনি। মা অনেক কথা
শুনিয়েছে মানছি। কিন্তু দিস ইস হাইট। এই দুদিন আগেই বললে ভিসা হয়ে গেছে। ড্যাং ড্যাং
করে নাচতে নাচতে আমার ডাইরিতে বাবা আসছে বাবা আসছে বলে খুব নাচলাম। এতো দিন হয়ে
গেলো নো পাত্তা? ব্যাপারটা কি ? আমার লিনিয়েন্সির এরকম করে দুর্ব্যববহার করবে?
তোমার একটা দায়িত্ত্ব কর্তব্য বলে তো একটা ব্যাপার আছে। আমি তোমায় স্বগোত্রীয় বলে
ছাড় দিয়েছিলাম। কিন্তু তা বলে এই নয় যে ইগনোর মারবে। মানছি তুমি চেষ্টা
করছো। কিন্তু সে তো
ছোটো বেলা থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছ বড় হওয়ার। হয়েছো কি? তাই ওসব চেষ্টা ফেসটা আমি
শুনতে পারবো না।
তোমার জন্য আমি হাঁটা বন্ধ রেখেছি। তুমি সব মিস করেছো। আমার প্রথম কনসাস হাসি , আমার ঘুমের মধ্যে খেলা , আমার প্রথম সলিড খাবার , আমার প্রথম হামা দেওয়া , আমার প্রথম বাথটবে খেলতে খেলতে স্নান করা, আমার প্রথম রেসপন্স , আমার প্রথম হালুমের লেজ ভাঙা , আমার অন্নপ্রাশন , আমার প্রথম মুড়ি খাওয়া , আমার প্রথম সুর ভাঁজা সব , স-ও-ও-ও-ও-ও-ব। এবার কি প্রথম জন্মদিনটাও মিস করবে ?
আমার যখন ভ্যাকসিন দেওয়া হতো আমার জ্বর আসতো। তুমি জানোনা মায়ের কি ভয় ছুঁচ ফোটাতে। তাও মায়ের সামনে প্যাঁক প্যাঁক করে আমায় ছুঁচ ফোটাতো। আমি চিৎকার করে কাঁদতাম। মা অস্থির হয়ে পড়তো। আমি তখন তোমায় খুঁজতাম। শক্ত পোক্ত। যে আমাকে জাপ্টে ধরে এমন চেপ্টে দেবে যে সমস্ত যন্ত্রনা শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে। জ্বরের ঘোরে গোঁ গোঁ করতাম। কিচ্ছু খেতে ভালো লাগতো না। তখন কতবার ভেবেছি তুমি থাকলে হয়তো আমার সাথে খেলতে আর মা সেই ফাঁকে আমার মুখে খাবার চালিয়ে দিতো। শরীরে তো অন্তত লাগতো। অনেকবার ভেবেছি এতো বড়ো কিং সাইজের বেড ঠিক কেন? পরে যখন বুঝলাম আমাদের তিন জনের জন্য আর একজন নেই তখন আমি সেটাকে খেলার মাঠ বানিয়ে নিলাম। তোমার মনে কি আছে যে আমার গাড়িতে করে ঘুরতে ভালো লাগে , ঠিক তোমার মতো। গাড়ির দুলুনিতে আর এসির ঠান্ডা হাওয়ায় আমার ঝিম আসে। আমাকে নিয়ে সমুদ্রে গিয়েছিলে। আমি একবারের জন্যও কাঁদিনি। তুমি যাওয়ার পর থেকে এখন শুধু ঘুরতে গেলে ওয়ালমার্ট আর ইন্ডিয়া স্টোর্স। একটু একটু ঘোরা। তাতে কি পোষায়। মনে আছে আমায় নিয়ে যেদিন প্রথম স্টেকহাউসে গেছিলে , দাদু ঠাকমার সাথে। তখনও কেউ বিশেষ পোক্ত হয়নি আমায় গাড়িতে নিয়ে যাওয়াতে। সবাই কার সিট শুদ্ধ আমায় তোলার চেষ্টা করছিলো আর আমি পরিত্রাহি করে চিৎকার করছিলাম। তুমি তখন সবাইকে সরিয়ে আগে আমায় কোলে তুলে তারপর কার সিট বার করেছিলে। আর আমি চুপ করে গেছিলাম। তুমি যাওয়ার পর আর স্টেকহাউসে যাওয়া হয়নি। এখন শুধু ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট। যে গন্ধ ঘরে , সেই গন্ধ বাইরে। ভালো লাগে না।
বাবা , মায়ের হাতে সব কিছু ছেড়ে দিলে হয় না। মা তোমার জায়গায় এক্টিং করছে বটে। কিন্তু তোমার চরিত্র তোমাকেই সাজে। আমি কেন মাঝখান থেকে ফাঁকে পরবো। আমি কি বলেছিলাম আমায় নিয়ে আসতে। দিব্যি ফুরফুরে মেজাজে আরাম করে আতরগন্ধী সুগন্ধি শরবত খেতে খেতে খেতে ওপর থেকে বেশ পৃথিবীর ভুলভাল কীর্তিকলাপ দেখছিলাম আর খিলখিলিয়ে পেটে খিল ধরাচ্ছিলাম। হির হির করে এই গুমুতের জীবনে টেনে আনলে। এখানে সব কিছু করতে হবে , খেতে হবে , ঘুমোতে হবে , কথা বলতে শিখতে হবে , হামা দিতে হবে , হাঁটতে হবে , আর এই সব কাজ শেখানোর জন্য যে দুজন লাগে , তার একজন উধাও। ফুর্তি মারছে দূরে বসে।
হ্যাঁ ঠিক শুনেছ। ফুর্তিই মারছো। মা ঠিকই বলে। নেহাত দুঃখ পাবে তাই বলিনি এতদিন। কিন্তু এসব ফুর্তি মারা ছাড়া আর কি। ডায়পার চেঞ্জ করতে হবে না , রাত জাগতে হবে না, সিনেমা দেখা - বই পড়া বন্ধ করতে হবে না , যখন ইচ্ছা যত রাত পর্যন্ত বাড়ির বাইরে বাইরে ঘুরে আসবে , যা ইচ্ছা খাবে , মাতাল হয়ে উল্টে পরে থাকবে আর কি চাই। আর এখানে মা বেচারি কখনো রাঁধুনি , কখনও ন্যানি, কখনো চাকুরে, কখনো মুটে আর কখনো কখনো মা। এমনি করে চলে। তোমার তো ভাবা উচিত। তোমায় মাসল দিয়েছে কেন ভগবান কারণ তোমার দুধ হবে না বলে। মায়ের কাজ আমায় তৈরী করা আর তোমার কাজ পালিশ করা। আর যেহেতু মা তৈরী করছে তাই তার জন্য রসদ যোগান দেওয়া। তুমি শুধু অর্ডার দিয়ে কেটে পরলে। এবার যদি আমি বিগড়ে যাই , তবে ? আমারও তো সহ্যের একটা সীমা আছে না কি ?
আগে লিখেছিলাম না ? মা কাঁদছিলো এই দেখে যে সবার বাবা সবাইকে তৈরী করছে আর আমি দূরে বসে বসে হাততালি দিচ্ছি। তখন আমি ব্যাপারটা লাইট করার জন্য খিল্লি করেছিলাম। ব্যাপারটা মোটেও খিল্লির ছিল না। হয় , আমারও কষ্ট হয়। আমি শুধু অভিব্যক্তি অন্য দিই। খুশির। আনন্দের। আমি তোমার মতো মুখ ভার করে বসে থাকি না। এক মুখ হাসি দিয়ে সব কিছুকে লাইট করে দি। কিন্তু আমিও তখন ইনসেক্যুরিটিতে ভুগি যখন আমার বন্ধুরা প্রশ্ন করে , "আমাদের বাবা রা তো আমাদের সাথে থাকে , তোর বাবা কেন থাকে না?" জো যেদিন আমার সাথে ঝগড়া করেছিল , সেদিন তো বলেই বসলো , "ও তো আনওয়ান্টেড।" বাবা সত্যি করে বলো তো , সত্যি কি আমি আনওয়ান্টেড। নাহলে এমনি করে আমায় একা মায়ের সাথে ছেড়ে তুমি কি করে থাকতে পারলে। ওরা বলে তোমার আর মায়ের মধ্যে নাকি ঝামেলা, তাই তোমরা আলাদা থাকো। ঝামেলা কার না হয়। তাবলে কি এরকম করে ছেড়ে চলে যেতে হয়। কৈ মা তো ছেড়ে দেয়নি আমায়। আমি তো রোজ ঝগড়া করি। সব কিছু ছুঁড়ে ফেলতে বারণ করে। কিন্তু আমায় বোলিং প্রাকটিস করতেই হবে। আমি তো কুকুর বিড়ালের মতো ঝগড়া করি। কিন্তু মা তো ছেড়ে চলে যায় না আমায়। কিছুটা রাগ করে তার পরে তো এসে আবার আমায় হাসি হাসি মুখে মিষ্টি একটা চুমু দেয়। তুমিও তো এসে তাই করতে পারো। তাহলে আর ঝামেলা থাকে না। তা নয় হাড়ি মুখ করে দুজনে শুধু ফোন আর ফোন।
বাবা , সব ঠিক আছে। কিন্তু জন্মদিনে না আসলে প্রেস্টিজ পাংচার হয়ে যাবে। যা যা আমার বন্ধুরা বলেছে , সব কিন্তু মিথ্যে হলেও বিশ্বের কাছে সেটাই সত্যি হয়ে যাবে। আমি কিন্তু এটা ভালোভাবে নেবো না। এতদিন ক্লোস্ড প্লেসে যা করেছো করো। কিন্তু পাবলিক হিউমিলিয়েশন আমি চাইনা। যদি সত্যি ওরা সত্যি হয় তাহলে এটলিস্ট এসে নাটক কোরো। তুমি যেহেতু আমায় জন্ম দিয়েছ , তোমার পালন করাটাও বাধ্যতামূলক। তোমার উচিত আমার প্রাইড মেইনটেইন করা। যদি আমি ছোট হয়ে যাই , তুমিও ছোট হয়ে যাবে। কারণ আমিই তোমার ভবিষ্যৎ পরিচয়। সারা জীবনের মতো তোমায় শুনতে হবে , ছেলের প্রথম জন্মদিনে আসেনি। যতই তুমি বলো না কেন আস্তে পারোনি, কেউ শুনবে না, বলবে আসোনি। ইচ্ছা করে আসোনি। তোমার জন্য মা বদনাম হবে। তোমার জন্য আমি বদনাম হবো। আর তুমি , বাঁচতে পারবে এই বদনাম নিয়ে।
কত প্ল্যান করার আছে , কত কিছু হবে। বেলুন, খেলনা, কেক , গান , নাচ , কত কিছু খাবার। তুমিই তো জন্মদিনের জামা কাপড় নিয়ে আসছো। তুমি না আসলে আমি সেই এখানে জামা কাপড় পরে ঘুরবো। বন্ধুদের বাবাদের কাছে কাছে। সবাই তাদের ছেলে মেয়েদের সামলাবে, মা আর দাদু সামলাবে গেস্টদের। আর আমি একা একা , জোকারের মতো সবাইকে হাসাবো। কেউ আমার এক মুখ হাসির পেছনের দুঃখ দেখতে পাবে না। একে একে যখন সবাই চলে যাবে , তখন ক্লান্ত মা আমায় ধরে তোমার ফোনের সামনে ধরবে, আর তুমি হ্যাপি বার্থডে বলবে , যার কোনো মানে থাকবে না। ডু ইউ রিয়েলি ওয়ান্ট দ্যাট। ইফ নট , দেন প্লিজ কাম। প্লিজ , প্লিস, প্লিস।
No comments:
Post a Comment