আমি বুঝিনা। কি পাও তোমরা আমার হাসি দেখে। আমি তো জানতাম বেশির ভাগ লোক স্যাডিস্ট হয়। পরের দুঃখে হেব্বি খুশি। এতো দেখি উল্টো। বাবা, তুমি কিন্তু ঠিক বলোনি, পাশের বাড়ি ঝামেলায়
থাকলে, এপাশে নিজের বাড়িতে আনন্দ আসবে, ওসব তোমার ইন্ডিয়া পাকিস্তানের ব্যাপার। এখানে
কিন্ত সবাই আমার হাসির প্রসাদ নিতে আসে। আমি ব্যস্ত থাকলেও নানা রকম অঙ্গভঙ্গি করে,
ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী হয়ে বসে বসে, আমার একটা হাসির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। আমি যদিও
তাদের ফেরাই না কিন্তু চোয়াল বলে তো একটা ব্যাপার আছে। বেশি চাপ দেওয়া যায় না, এখনো মজবুত হয়নি।
সবথেকে ডিসাপইন্টমেন্ট হলো মা নিজে।
এই হাসি যে ফেমাস, সেটা সবাই জানে, তা বলে আমাকে পার্টিতে যখন নিয়ে যাবে, তখনও কি আমাকে
এক্সপ্লোরেশন এর বদলে হাসির ডিউটি করে যেতে হবে?? কোথায় আমি তখন নানান জায়গা ঘুরে ঘুরে
নানা জিনিসে কন্সেন্ট্রেট করছি। কত কিছু শিখছি
, কত কিছু অ্যাড - এডপ্ট - এডাপ্ট করছি। তার
মাঝখান থেকে আমাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে গিয়ে বলে হাস। আবার এপার বাংলার লোকেরা চন্দ্রবিন্দু অ্যাড করে।
ভাবো, ইন্ট্রোডিউসিং এ ডেমিগড এস এ লাইভস্টক ক্রিচার। কি ইন্সাল্ট।
হেব্বি রেগে গিয়ে প্রথমে গম্ভীর, তারপর ভ্যাঁ। বদলে মায়ের মাথা চাপড়ানো, আর মান ডোবানোর আক্ষেপ।
কেন? কেন ? আমার হাসি তোমার জন্য শুধু। ইটস
অনলি এবাউট মি এন্ড ইউ মা। অন্তত যতদিন না
মেয়ে বা মেয়েগুলোকে পাচ্ছি। যদিও হারপার আর জেসমিন আলাদা ছিল। কিন্তু এই হাসিটা শুধু আর শুধু তোমার। বাবারও নয়।
তুমি কেন সবার সামনে এক্সপেক্ট করো
যে আমি আমার প্রসাদ দেব। ঠিক আছে শোকেসিং ইম্পরট্যান্ট,
কিন্তু ওতো বাবার কাজ, আর তার জন্যে কম ঝামেলা
তো করনি।
যাইহোক, মা কে একটু ইমোশনাল টুইস্ট
দিয়ে আগে এগোই। তা কথা হচ্ছিলো আমার হাসি নিয়ে। আমি আজকাল আয়নায় নিজের হাসি দেখে আরো
হাসি। টার্মিনেটর যখন প্রথম হাসতে শিখেছিল তার থেকে অনেক বেটার সিচুয়েশনে আমি আছি। তবে এখন লোকেদের কাছে আমার ওনলি হাসি নয়, টুথলেস
হাসিটা প্রিয়। দাঁত না থাকলে ব্যাপারটা কি
বেশি সুন্দর হয়ে যায়। দাদুর তো দাঁত নেই। কিন্তু দাদুর হাসি দেখে তো কেউ কিউট বলে না। আসলে
আমি একটা টোটাল প্যাকেজ। হাসিটা জাস্ট, চেরি
অন দা টপ।
তবে কেউ জানেনা আমি কেন হাসি। লোকেদের ধারণা যে আমি এখন কিছু বুঝিনা। ওদের ভাষা
বুঝতে পারিনা তো বটেই, তার ওপর আবার মিক্স ল্যাঙ্গুয়েজে কথা বলে আরো ভাবে যেন আমি একদম
আকাট। তা ভাবুক। ওরা যত মুরগি হবে তত আমার সুবিধা। কারণ আমি ওই নিয়েই হাসি। 'দেখো এবার হাসবে - দেখো এবার হাসবে ' বলে যখন জাম্বুবান,
কুম্ভকর্ণ, শূর্পণখা, বকরাক্ষস , আর হিড়িম্বা এসে মম চিত্তে নিতি নিত্যে আরম্ভ করে
তখন সত্যি না হেসে পারিনা। আমি ওদের শুধু অঙ্গভঙ্গি না , আহাম্মকতায়ও হাসি। কি বোকা সব।
প্রথমত ট্রান্সলেশন পারে না, নিজের কাজ নিজে করে , খেতে বসে চিবোতেই থাকে, আবার
কিছু লোক আছে ধোঁয়া ইন ধোঁয়া আউট। কি বোকা,
তার থেকে গাড়ির পেছনে দাঁড়িয়ে পড়ো। কি বিচ্ছিরি
লাগে দেখতে। মা একবার আমাকে খাওয়ানোর চক্করে
দুধ পুড়িয়ে ফেলেছিলো। সারা ঘর ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে গেছিলো।
কি কাশিই, কি কাশি। সেই ধোঁয়া ভেতরে
নিয়ে বিশাল ভাব। যাইহোক বাবাও এই বোকামো করে। এখনো প্রতিবাদ করার শক্তি নেই তাই জাস্ট খিল্লি
করে বেরিয়ে যাচ্ছি।
আজকাল কি হয় জানিনা , ঘুমিয়ে পড়লে মনে
হয় জেগে আছি। কত কিছু ঘটে যায়। আমি যেন সিনেমা দেখার মতো দেখতে থাকি। আর আমি যা
যা ভাবি, সব যেন সত্যি হয়ে চলে আসে চোখের সামনে। মানে যেমন বাবা এসে আমাকে ধরতে জাচ্ছে
, আমি স্লিপ কেটে বেরিয়ে যাচ্ছি , বাবা আমাকে ধরতে গিয়ে ধড়াম করে পরে যাচ্ছে। মা দৌড়োচ্ছে আমার্ পিছনে পিছনে আমি উঁকি মেরে টুকি
টুকি খেলছি। আরো কত কি। এইসব দেখি আর খুব হাসি। উঠি যখন, তখন দেখি মা হাঁ করে বসে আছে আমার সামনে। চোখ খুললেই আদর করে বলে , 'কি মিত্তি ! কি মিত্তি
!' . বুঝে যাই তাহলে হাসির প্রসাদ পেয়ে গেছে।
এগুলো তো ঠিক আছে কিন্তু গা জ্বালা
করে যখন আবার কম্পেয়ার করতে আরম্ভ করে। না
মোটেও না , বললে হবে না, হাসিটা একেবারেই বাবার মতো না। মায়ের মতোও না। এটা আগেও বলেছি, এটা একান্ত নিজের মতো। আর হেব্বি বিউটিফুলি ডেলিভার্ড। একদম পারফেক্ট আর
মনোমোহক। আমি না, মাঝে মাঝে নিজের হাসির প্রেমে
নিজেই পরে যাই, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। আর সবথেকে মজাদার জিনিস কি জানো, হাসির থেকে সুন্দর
কিছু হয় না। সবাই যখন হাসে, তখন কেনো জানিনা আমার খুব আনন্দ হয়, আর খিলখিলিয়ে
হাসি বেরিয়ে আসে। আর সবাই যখন মুখ ভার করে
বসে থাকে, তখন সবাইকে হাসানোর জন্য যে হাসি দিতে হয়, সেটা খুবই কষ্টকর। মানছি, সবার জীবনেই সমস্যা আছে। এই দেখোনা, আমি কত করে চেষ্টা করছি, কি করে বাথরুমের
দরজা খুলে ওই যে সাদা মতো গোলটা আছে, যার মধ্যে একটু জল থাকে তাতে টিভির রিমোট টা ধুয়ে
নি। কিন্তু কিছুতেই বন্ধ দরজা খুলতে পারছি
না। মা , দাদু কেউ হেল্প করছে না , বাবাটাও
নেই, আই এম স্টাক। এতো বড় সমস্যা মাথায় নিয়েও
তো আমি হাসি। আমার কাছ থেকেও পৃথিবীর অনেক কিছু শেখার আছে। সবসময় ঘ্যান ঘ্যান করে কিছু লাভ নেই।
ঝামেলা থাকবে জীবনে, অপমানও থাকবে। কয়েকদিন আগে জানলাম হাউ টু ট্রেন ইওর ড্রাগনের প্রধান
ড্রাগন চরিত্রের নাম টুথলেস। ড্রাগন?? আমি ড্রাগন?? জাস্ট থিঙ্ক এবাউট দা টোটাল অপোগণ্ড
প্রজেকশান। আমি আগুন ছড়াই? মাঝে মাঝে একটু
বমি টোমি করি বটে। কিন্তু তা বলে ড্রাগন? আমি
অন্তত ভবিষ্যতে যা কিছু হতে পারি, কিন্তু এদের মতো মানুষ আমি হার্গিস হবো না। এই হাসি
মায়ের সারা দিনের ক্লান্তি মেটায়, বাবার এদেশে ফেরার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়, দাদু যে
এই বয়সে দিদাকে একা ছেড়ে আছে তার ঘায়ে মলম লাগায় , যখন সব হুঁকোমুখো রামগরুড় আমার সামনে
আসে, তখন এই হাসি তাদের হাসতে শেখায়, ঠাম্মা দাদুর প্রাণে বাতাস দেয় আর পরের বার আসার
জন্য ইচ্ছা যোগায়, এতো কিছু করার পরেও আমি
ড্রাগন??
আমিও তাই আজকাল একটু রেশন করে দিয়েছি।
নিজের সম্মান নিজের মুখে। লোকে এমন আহাম্মক, আমার টোটাল রিভোল্টও এখনো কেউ বুঝতে পারছে
না। লোকে তাতেও বলছে , "মুখ টিপে বদমাইশি
করছে।" আমি টুথলেস হলে এরা হোপলেস। যাইহোক
ব্যাপারটা আর আগে বাড়াচ্ছি না। আপাতত এইটুকু
বলে রাখি , আর মাত্র কয়েকদিন , নিজে দেখুন এবং অপরকে দেখার সুযোগ করে দিন। কারণ সে আসছে , প্রচন্ড সুরসুর , প্রচন্ড অস্বস্তি
, সব কিছু কামড়ানোর প্রবল স্পৃহা জাগিয়ে এই ধরাধামে সেই অঙ্কুরোদ্গম হতে চলেছে আর কয়েক
দিনের মধ্যেই। তাই অপেক্ষা , অপেক্ষা , অপেক্ষা। .....
আধ্যানের ডায়েরির আগের পাতাগুলো
- 15) এ শুধু আমাদের মধ্যে
- 14) কি জ্বালাতন
- 13) বাবা আসছে
- 12) ডে-কেয়ার কড়চা
- 11) আমার অন্নপ্রাশন
- 10) আমি আমার মতো
- 9) সর্দি কাশি
- 8) পাসপোর্টের দিনে
- 7) সান্ধ্র খাবার
- 6) শুভ বিজয়া
- 5) খাবো না মানে, খাবো না
- 4) শোনো বাবা ও মা !!
- 3) চার মাস
- 2) ভ্যাঙাচ্ছে।
- 1) আমার ঘর
No comments:
Post a Comment