বাবা বেচারা ভালোমানুষ। সব কিছু কাজ ঠিক ঠাক করে করার ইচ্ছা। সাথে আবার
নিজের নাম নিয়ে একসাথে গর্বে ও মনঃকষ্ঠে ভোগে।
তাই প্রথমে মা আর বাবা দুজনে নাম খোঁজার কয়েকটি গ্রাউন্ড রুল বার করেছিল। যেহেতু সারনেম বিশাল তাই নাম হবে ছোট, বাঙালি নাম
হবে ,দুই সিলেবল আর এ দিয়ে নাম শুরু হবে। মা
তো পাল্টি খেতে ওস্তাদ। তাই এই রুল পরের পর
পাল্টাতে লাগলো। বাবা বেচারা মায়ের সাথে তাল
মিলিয়েও নিজের প্ল্যান মতো ডিসিপ্লিন ভাবে সংসদের বাংলা টু ইংলিশ ডিকশেনারী বার করে
বসলো। মায়ের কিন্তু শুধু ফাঁকিবাজি। বেবিনেম
ডট কম। আরও কিছু পাতি বস্তাপচা গন্ধ বেরোচ্ছে
এরকম ওয়েবসাইট খুলে আমার জন্য নাম বার করতে
লাগলো।
দুরন্ত সব নাম বাবা বার করেছিল। কখনো নিজের নামের সাথে
মিলিয়ে অর্কর ছেলে “সৌর” , কখনো পৃথিবীর বুকে রেখে যাওয়া "চিহ্ন" , কখনো
সূর্যোদয়ের প্রাকার "অদ্রি" , কখনো
সূর্যাস্তের পরে জ্বলে ওঠা "ঋক্ষ",
কখনো আরাধ্য "ত্রিগুন" কখনো তারই "পিনাক" . কিন্তু মায়ের
মন পাওয়া আর আপপুকে ডাইপার পরানো এক জিনিস। মা একের পর এক বাকি নাম গুলো কেটে যেতে
লাগলো। "অংকুশ" ছেলে কি মাহুত হবে ? "উপল" - চন্দ্রবিন্দুর মতো
ব্যান্ড বানাবে পড়াশুনা কিছু হবে না।
"সিদ্ধান্ত" - ওসব হিন্দিতে ভালো শোনায়। "অধীশ" - উচ্চারণে সেই ও আর অ এর সমস্যা। "অত্রি" - ওসব সাধুর নাম চাইনা। তাহলে "সাম্য" - কমিউনিস্ট যুগ শেষ।
"পিয়াল" - তার থেকে শ্যাওড়া রাখলে কেমন হয়। "জীবক" - প্রাগৈতিহাসিক নাম।
মা যখন নামগুলো একের পর এক কেটে যাচ্ছে তখন এক দাদু ফোনে
ছিল , ওদিক থেকে আওয়াজ এলো , "একদম আদর্শ নাম হলো গৌরব।" মা ফোনটা রেখে দিলো। আরেক দাদু তখন ট্যাব খুলে নিউস পড়ছিলো বললো ,
"রানী মুখার্জি আর আদিত্য চোপড়া নাম মিলে মেয়ের নাম কি রেখেছে দেখ, আদিরা। কোনো
মানে নেই, কিন্তু মা বাবাও আছে নামে আর সহজেও উচ্চারণ করা যায়।" ব্যাপারটা মায়ের
মনে ধরলেও মায়ের সুহিতার এস ইউ আর বাবার অর্কর এ আর মিলিয়ে শেষ মেশ আমার নাম বেরোলো
শুয়ার। ডিসগাস্টিং।
ওদিকে সময় এসে যাচ্ছে বাবা স্পেসিমেন আনছে আর মাএর কোয়ালিটি টেস্টিং এ ফেল করছে। "নিহাল"
- এটা ভালো কিন্তু বাঙালি নাম চাই। "আনন"
- তোমার কলিগের নাম না ? "চয়ন"
- সেটাও তো তোমার বন্ধুর নাম। "প্রাকৃত" - দাঁত ভেঙে যাবে। "কন্দর্প" - পিজার অর্ডার দিতে পারবে
না। "কিন্নর" - গড়িয়াহাটে জন্মায়নি।
ওদিকে পিসি ধরে আছে "রিহান" নামটা।
সহজ সরল আর সাদারাও উচ্চারণ করতে পারবে।
মাসি "রুদ্র" আর "আহির" . এর মধ্যে মা নিয়ে এসেছে
"আরুষ" আর "আয়ুষ" এবার বাবার রিজেকশন এর পালা পালা। হাজার হোক
পুরুষ ইগো যাবে কোথায় । বাবা তখন "উৎস" নামে আটকে আছে। বাবার ভাষায় তখন আমি নাকি সমস্ত আনন্দের উৎস। কিন্তু মা আবার রিজেক্ট করলো , "উটসো"
বলবে গো লোকে আর শেষে "ইউটসো" হয়ে যাবে।
সবই হচ্ছে আমার আগমনের পূর্বে। যেদিন আমি এই ধরাধামে আমার পদার্পন করলাম তার আগের
দিন রাতে পর পর রিজেক্ট হয়ে গেলো , আদৃত, আয়ুক্ত, আহেল, আয়াম, অশ্রুত, উৎস , কণাদ,
কল্প, কিংশুক , কৃত্য , চিত্ত , নিচয় , নিদাঘ , নিমিশ , নির্মিত , বিহিত , শীষ , সূত্র। মাঝখান থেকে বাবা একটা পুরো ডিকশনারি পরে ফেললো। শেষে রাতে শোয়ার আগে বাবা হেল্পলেস হয়ে বলল ,
"ফাইনাল টা কি ? সময় তো হয়ে এলো। " মা তখন এই "আধ্যান আর ঋষভ"
এতেই আটকে থাকলো। আর যখন আঠাশ ঘন্টা ধস্তাধস্তির
পর শেষ মেশ আমি বেরিয়ে এলাম আর হসপিটালে নাম দিতে হলো তখন আধ্যান নামটাই ফাইনাল হলো।
কিন্তু সমস্যা হলো নামের মানে নিয়ে। মানেটা ঠিক কি ? মা নাম তো দিয়ে দিয়েছে কিন্তু নামের
মানেটাও ঠিক ঠাক জানে না। শেখর সুমন নামে কে একজন আছে তার ছেলের নামের কথা বলতেই বাবা
রেগে টং। সে তো ফ্লপ হিরো। তার থেকে গজানন রাখতে পারতে। এটলিস্ট আসমুদ্র হিমাচল এলিফ্যান্ট গডের নাম জানে। কিন্তু বাবাও মায়ের কাছে কাত। কিছুক্ষন রাগটাগ দেখিয়ে আবার পুঁথিপাথা বার করে
খুঁজে বার করলো। মানে হলো ধ্যানরত। বুদ্ধের নাম।
বাবার মুখ কাঁচুমাচু , এ ছেলে তো সন্যাস নেবে , তাও আবার ঘাড়ে বৌ বাচ্চা ফেলে
দিয়ে কেটে পড়বে। মা তখন উল্টো অগ্নিমূর্তি
"সিদ্ধার্থ" নামটা তাহলে কে বলেছিল।
এই ঝগড়া কিছুক্ষন চলল বটে কিন্তু কোনো লাভ নেই। ততক্ষনে হসপিটালের ডিসচার্জ লেটার আমার নাম ছাপা
হয়ে গেছে।
কিন্তু একবারও কেউ জিজ্ঞেস করলো না আমায়, যে নামটা পছন্দ হয়েছে কিনা। আমি বিশেষ কিছু পাত্তা দিইনি যদিও। কারণ হোয়াটস ইন এ নেম। কিন্তু যখন হার্পার আমায় এসে বললো , "হ্যালো
আডিয়ান" তখনিই ব্যাপারটা গোলমেলে লাগতে আরম্ভ করলো। আরো গন্ডগোলে পড়লাম যখন দেখলাম বাবা আমার ফেইসবুক
প্রোফাইল খুলেছে তাতে আমার নাম আর পদবি এক সাথে।
পুরো একটা বই। হে ভগবান। সত্যি আমি পিজ্জা অর্ডার করবো কি করে। যদিও আমি
ডে কেয়ারে অ্যাডি নামেই পরিচিত। তাই ওটাই আমি
মোটামুটি চালিয়ে নেবো আমার দেশে। বাবার দেশে নাহয় আদি বলবে।
ও হ্যা, কথায় কথায় ডাকনাম তো ভুলেই গেলাম।
সে আরেক সমস্যা। জেঠুর নাম সন্তু ,
বাবার নাম অন্তু , কাকার নাম রিন্তু , আমরা এক মাসে জন্ম তাই মিলিয়ে নাম হওয়া চাই কিন্তু
জন্তু ছাড়া কারো মুখে কিছু রুচলো না। শেষে
মাসি নানটু নাম দিয়ে মুখ রক্ষা করলো। বাবা
আবার মাঝে ঢুকে সাম্য নামটা ডাকনাম হিসেবে চালানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু বড্ডো জটিল
ফর ডাকনাম। শেষে নিজের একটা ডাকনাম ছিল ঘোতলু
সেটাকেই একটু পাল্টে এখন ঘতলা ঘতলা করে। ঠাম্মা
প্রথমেই শুধু ভাই বলে ডাকে। ভাই আবার কারো
নাম হয় নাকি। কিন্তু ঠাম্মা তো ঠাম্মাই। সবথেকে ডেঞ্জারাস নাম দিয়েছে জেম্মা , পটল। সে কি কথা।
না আমি পটলের মতো দেখতে , না আমি সবুজ।
যুক্তি আরো সাংঘাতিক , দাদার নাম ভিন্ডি তাহলে আমি পটল। কি বিচ্ছিরি যুক্তি। শেষমেশ কেউই কোনো নামে ফাইনাল হয়নি। তাই আমিই আমার ডাকনাম রাখলাম। আদি টাই ফাইনাল। তোমরা অনেক ভুল ভাল করেছো এবার ক্ষান্ত দাও। মাই
পেট নাম "অ্যাডি" আর ডাকনাম "আদি" দ্যাটস ফাইনাল।
No comments:
Post a Comment